শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় রণক্ষেত্র, পুলিশ মোতায়েন ◈ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সিদ্ধান্ত ◈ চুয়াডাঙ্গায় পানের বরজে আগুন ◈ মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে ডিবি ◈ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি ◈ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রচারণা দেখতে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিজেপি ◈ মানবপাচার ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রিসহ বিভিন্ন অভিযোগে মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে: ডিবি প্রধান ◈ চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ৪৩ ডিগ্রি ◈ কুমিল্লায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যার আসামি গ্রেপ্তার  ◈ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব: প্রধান বিচারপতি 

প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট, ২০২১, ০৪:২৫ সকাল
আপডেট : ১৫ আগস্ট, ২০২১, ০৪:২৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: পনের আগস্টের ক্ষত ও ক্ষতি

অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: পঁচাত্তরের পনের আগস্টে বাঙালি জাতির যে ক্ষতি হয়ে গেছে, সেটি কখনোই পূরণ হবার নয়। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেই স্বাধীনতা তিনি অর্জন করে আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি তার এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছি, সোনার বাংলার স্বপ্ন আমি বাস্তবায়ন করবো।’ কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে হত্যাকারীরা বাংলাদেশকে দশকের পর দশক শাসন করেছে, অপশাসন করেছে এবং বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বহু দূরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। বলা যায় উল্টোপথে নিয়ে গিয়েছে। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করি আর বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীরা বাংলাদেশেকে আবার পাকিস্তানমুখী করে ফেলেছিলো। এই জায়গা থেকে বহু চাড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশেকে বঙ্গবন্ধুর স্পপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। কিন্তু এ পথেও বহু ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত আছে।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরে চক্রান্ত শেষ হয়ে গেছে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। কারণ আমরা দেখেছি বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের কীভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। কীভাবে তাদের সমস্ত ধরনের দায় থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করা হয়েছে,খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় ষড়যন্ত্র আছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকরীদের বিচারপ্রক্রিয়াও হয়েছে কিন্তু কয়েকজন হত্যাকারী এখনও বিদেশে বসে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লিপ্ত আছে। আর এদেশেও তাদের প্রশ্রয় আছে। যার জন্য আমরা ’৭৫- এর ১৫ আগস্টের পর আবার ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে একই ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকরা হয়েছে আর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে শেখ হাসিনা স্বপরিষদ অর্থাৎ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ হত্যাকরার চক্রান্ত করা হয়েছে। সেখানে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে দিনে-দুপুরের জনসভায়। যে জনসভার মূল বিষয় সন্ত্রাস বিরোধী আলোচনা। তার পরবর্তী বছর ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেখা গেলো বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে ৬৩টি জেলায় ৫০০টি সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এই যে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ, গ্রেনেড হামলা, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট এগুলো সবই একসূত্রে গাঁথা। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া।

আগস্ট মাস আসলেই আমরা পঁচাত্তরে ফিরে যাই। শোকাবহ আগস্টকে স্মরণ করি, বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাই এবং একই সঙ্গে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হই। এ ধরনের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত যেন বাংলাদেশে আর কখনো না হয়, সেজন্য আমরা সকলে সতর্ক থাকবো। সতর্ক থাকার এই অঙ্গীকার আবারও আমাদের নিতে হবে। একইসঙ্গে আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত বা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে গুলি করেছিলো তাদের বিচার হয়তো হয়েছে কিন্তু এই পুরো ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারে যারা যেই জায়গায় থেকে যুক্ত ছিলো সেই বিষয়গুলো এখনো জনগণের কাছে উন্মুক্ত হয়নি। এই প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সার্বিক ষড়যন্ত্রের চিত্র জনগণের জানার অধিকার আছে। অতএব জনগণের জানার জন্য অতি দ্রুত একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা এবং সেই তদন্ত কমিশন ষড়যন্ত্রের একেবারে শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত সার্বিক বিষয়টি যেন তুলে ধরে। ষড়যন্ত্র এখনও চলমান আমরা দেখতে পাচ্ছি। এর সার্বিকচিত্র তুলে ধরার দাবি করছি। এই দাবি জনগণের দাবি। জনগণ জানতে চায় যে কারা কারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এবং পরবর্তী হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে জড়িত। এগুলো বিচারিক আদালতে বিচার হওয়া ও শাস্তি হওয়ার একটি বিষয় কিন্তু সার্বিক বিষয়গুলো উন্মোচনের জন্য এখানে জাতীয়, আন্তর্জাতিক বহু সংস্থা ও সংগঠন জড়িত আছে। এই সার্বিকবিষয়গুলো উন্মুক্ত হওয়ার জন্য একটি কমিশনের প্রয়োজন আছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ষড়যন্ত্র ও হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই জন্যই এ ধরনের একটি কমিশনের অত্যন্ত প্রয়োজন। আমরা দেখেছি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানরা যখন হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হন তখন বিচারিক আদালতের পাশাপাশি একটি কমিশনও গঠিত হয়। কেনেডি হত্যাকাণ্ডের পর, ইন্দিরাগান্ধী হত্যকাণ্ড ও রাজীবগান্ধী হত্যাকাণ্ডের পরে এ ধরনের কমিশন গঠনের যে প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি আমরা দেখেছি , বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর কমিশন গঠনের সময় অনেকদূর গড়িয়ে গেছে। এখন দ্রুত এই কমিশন করে বিষয়টি জনগণের সামনে উন্মোচন করা দরকার।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা যারা বিদেশে রয়েছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার সরকারের প্রক্রিয়াটি অব্যাহত আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কোনো কোনো দেশে আইনেই আছে যদি কেউ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয় তাহলে তাকে আর প্রত্যার্পণ করা হয় না। এ ধরনের আইন যেসব দেশে আছে সেসব দেশে এটা আইনি জটিলতার মধ্যে পরে গেছে। কিন্তু এ ধরনের আইনের আওতায় বাইরেও কেউ কেউ কোনো কোনো দেশে লুকিয়ে আছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। খুনিদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার পদক্ষেপ আরও জোরালো করা দরকার। একটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করে তারা বিচারের শাস্তিকে এড়িয়ে যাবে, এটি কোনোভাবে কাম্য নয়। তবে যেসব দেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের প্রত্যার্পণ করা হয় না। সেসব দেশের বহু কূটনীতিকদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে বিভিন্ন সময়, তারাও বলেছেন, আইনে একটি বাধা আছে ঠিকই কিন্তু আমরা তোমাদের সঙ্গে এই জায়গায় একমত যে এ ধরনের অপরাধীদের শাস্তির বিধান দেশের স্বার্থে অত্যন্ত জরুরি। পরিচিতি : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়