শরিফুল হাসান: আচ্ছা, দিনভর এমন ভোগান্তির পর রাতে বাস-লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিলে লাভ কী? লাখ লাখ পোশাক কর্মী তো ততোক্ষণে হেঁটে বা ফেরিতে ঢাকায় চলে এসেছেন বা আসার পথে। তাদের অন্তহীন দুর্ভোগ শেষ হওয়ার পর গণপরিবহন চলাচলের ঘোষণা দিলে লাভ কী? বাস-লঞ্চ সব তো খালিই থাকবে। কারণ কষ্ট যা হবার তা তো ততোক্ষণে হয়ে গেছে। আচ্ছা, কারখানা খোলার ঘোষণা দেয়ার আগেই কেন এই বিষয়গুলো ভাবলেন না? প্রতিবারই কেন নিম্ন আয়ের এই মানুষদের নিয়ে ফুটবল খেলা হয়? এই মানুষগুলোকে আপনাদের মানুষ মনে হয় না তাই না?
একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবুন। শুধু ঈদের আগে পরে নয়, এই তো দুদিন আগে এমনকি শুক্রবারও মন্ত্রীরা বলেছিলেন, ‘লকডাউনে পোশাক কারখানা খুলছে না। কিন্তু ছুটির দিনে শুক্রবার বিকেলেই সেই সিদ্ধান্ত বদলে গেলো। রোববারই কাজে যোগ দেওয়ার জন্যে মালিকরা নির্দেশ দিলো। কিন্তু, চলমান কঠোর লকডাউনে শ্রমিকেরা দূর-দূরান্ত থেকে কীভাবে কর্মস্থলে ফিরবেন, তার কোনো নির্দেশনা ছিল না কোথাও। না সরকারি প্রজ্ঞাপনে, না মালিকদের কথায়।
আর ১ তারিখ যোগ না দিলে চাকরি যাবে না, এই একটা কথার মধ্যে যে আতঙ্ক আছে সেটা তো আমাদের পোশাক কর্মীরা পড়তে পারেন। নির্ধারিত সময়ে না এলে তাদের ভাগ্যে কী ঘটে এই কথার মধ্যে দিয়েই বোঝা যায়। তারা চান না তাদের একদিনেরও বেতন কাটা যাক। আপনাদের দোহাই লাগে এই মানুষগুলোকে নিয়ে আর ফুটবল বা পিংপং খেলবেন না। অভিশাপ লাগবে। আরেকটা কথা। আজ থেকে গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হলো, এখন তো কঠোর লকডাউন বহাল রাখা আরেক বোকামি। কারণ রোজ লাখো মানুষ পোশাক কারখানায় যাবে, আবার ফিরবে। আটকাবেন কোন যুক্তি দিয়ে? মূলত এই ঘোষণায় লকডাউনই কার্যত অচল হয়ে গেলো। আমার মনে হয় এই না দেশে এরপর কার্যত আর কোনো লকডাউন করা যাবে।
অবশ্য শুধু এবারই নয়। প্রতিবারই একই ঘটনা ঘটছে। গত দেড় বছর ধরে আমরা এই ভুল আর সমন্বয়হীনতার মধ্যেই আছি। কখনো লকডাউন, কখনো সীমিত লকডাউন, কখনো কঠোর লকডাউন, আরও কঠোর লকডাউন নাম দিয়ে যা হয়, তার ফলাফল কী? এপ্রিল থেকে কমবেশি লকডাউন তো চলছেই। কিন্তু, পরিস্থিতি কি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে? এ নিয়ে সরকারের কোনো বিশ্লেষণ আছে কি? নাকি সেই যে এপ্রিল থেকে লকডাউন চলছে সেভাবেই আরও ছয়মাস চলবে! একদিকে লকডাউন আরেকদিকে সব খোলা। যারা লকডাউন চায় তাদের কথাও থাকলো আবার যারা সবকিছু স্বাভাবিক চায় তাদের কথাও থাকলো।
আসলে একটা কথা আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, একটা দেশ ঠিক করতে হলে জনগণের সচেতনতা যেমন জরুরি, তারচেয়েও বেশি জরুরি নীতি-নির্ধারকদের দায়িত্ববোধ। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। আর কবে সেটা বাংলাদেশে হবে? আর কতো মানুষ মরলে হুঁশ ফিরবে আমাদের? ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :