শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি: কী পাচ্ছে বাংলাদেশ, কী হারাতে পারে? ◈ রাতেই সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো হচ্ছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা (ভিডিও) ◈ চাপাতি হাতে ব্যাগ ছিনিয়ে পুলিশের সামনেই হেঁটে গেলো ছিনতাইকারী, ভিডিও ভাইরাল ◈ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ভারতের বৃহত্তম তেল শোধনাগার নায়ারা রিফাইনারির ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা ◈ রাতের আকাশে ভেসে উঠলো ‘নাটক কম করো পিও’ (ভিডিও) ◈ জটিল ভয়ানক যে রোগে আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! ◈ কুড়িগ্রামে চাঁদা দাবি করা জামায়াতের সেই নেতা সাময়িক বহিষ্কার ◈ বড়াইগ্রামে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে দুই বিষয়ে দুই পরীক্ষার্থী ফেল! ◈ টাঙ্গাইলে পুলিশ হেফাজতে বিএনপি নেতার রহস্যজনক মৃত্যু ◈ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ তলিয়ে দেখা দরকার: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

প্রকাশিত : ২৯ জুলাই, ২০২১, ০৪:৩২ সকাল
আপডেট : ২৯ জুলাই, ২০২১, ০৪:৩২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সুদূরপ্রসারী মেগা প্রকল্প হাতে নিতে হবে

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: ইলেক্ট্রনের দ্বৈত চরিত্র আছে। অর্থাৎ ইলেক্ট্রন বস্তুর ন্যায় আচরণও করতে পারে আবার তরঙ্গের ন্যায় আচরণও করতে পারে। কিন্তু একই সঙ্গে ইলেক্ট্রন বস্তু এবং তরঙ্গ এই দুই চরিত্রে থাকতে পারে না। বস্তুকে দেখতে হলে বস্তুর ওপর আলো ফেলতে হয়। আর সেই আলো বস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়ে যখন আমাদের চোখে আসে তখনই তাকে বস্তু আকারে দেখি। আবার তরঙ্গ চরিত্র জানার জন্য অনেকগুলো ইলেক্ট্রনকে একটি চিরের মধ্যে দিয়ে পাঠাতে হবে তখন সে একটি ডিফ্র্যাকশন প্যাটার্ন তৈরি করবে যা কেবল তরঙ্গ হলেই সম্ভব। একই সঙ্গে ইলেক্ট্রনের বস্তু ও তরঙ্গ চরিত্র দেখা সম্ভব না। আমাদের সমাজে এখন দ্বৈত চরিত্রের মানুষ দিয়ে ভরে গেছে। একই সঙ্গে মানুষ নামাজ, রোজা, দান খয়রাত করছে, হজে যাচ্ছে আবার চুরি- চামারি, দুর্নীতি ইত্যাদিসহ নানা অনৈতিক কাজও করছে। এই খারাপ চরিত্রগুলো উম্মোচনের জন্য মানুষ এখন সিসিটিভি ক্যামেরা, গোপনে ফোন রেকর্ড ইত্যাদি নানা ডিভাইসের মাধ্যমে উম্মোচন করা সহজ হয়ে গেছে। এখন এইভাবে গোপনে ভিডিও বা ফোন রেকর্ড করা নৈতিক কিনা এটা নিয়ে আলোচনা আছে। রাষ্ট্র যারা চালায় তাদের ফোনালাপও যদি ফাঁস হতো? ইদানিং বড় বড় দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের ফোনালাপ ফাঁস হচ্ছে কিন্তু। মানুষ ভালো না খারাপ এখন ফাঁস হওয়া না হওয়ার মাঝে দুলছে।

সম্প্রতি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল কামরুন নাহার মুকুল ও অভিভাভবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর মধ্যকার ফাঁস হওয়া ফোনালাপ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। একদল অধ্যক্ষের গালাগালি পূর্ণ ভাষাকে বলছেন একজন শিক্ষক কীভাবে এইরকম অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। আরেকদল বলছেন, এই রেকর্ড উদ্যেশ্য প্রণোদিত। উদ্যেশ্যপ্রণোদিত হয়ে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তাকে ইচ্চাকৃতিভাবে উত্তেজিত করে তার মুখ দিয়ে এরকম ভাষা বের করানো হয়েছে। তিনি একদল খারাপ মানুষের স্বার্থসিদ্ধিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বলে তাকে সরানোর জন্যই এই কাজ। কেউই বলছে না দুটো কাজই খারাপ হয়েছে। একজন শিক্ষক কখনো এইরকম ভাষা ব্যবহার করে বাহিরের কোনো একজনের সঙ্গে ফোন কথা বলতে পারেন না। এখানে শুধু গালিগালাজ না। বালিশের নিচে পিস্তল ঘুমানোর কথাও বলা হয়েছে। এইটা সত্য হলেও খারাপ আর মিথ্যা হলেও নিজেকে মিথ্যুক হিসেবে প্রমাণ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি তার নৈতিক স্খলনের জন্য আর শিক্ষকতা পেশায় থাকতে পারেন না। অর্থাৎ ইলেক্ট্রনের মতো তিনি তার অন্ধকার সাইড উম্মোচন করে ফেলেছেন। তিনি এখন যতো ভালো কথাই বলুক না কেন তার পক্ষে শিক্ষার্থী তথা মানুষের কাছে আর ভালো মানুষ হিসাবে নিজেকে এস্টাব্লিশ করতে পারবেন না। পৃথিবীর যেকোন সভ্য দেশে এইরকম একটি ঘটনা যদি ঘটতো এতোক্ষণে এই অধ্যক্ষ চাকুরি থেকে ইস্তফা দিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যেতো। স্কুলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এইসবকে ষড়যন্ত্র বলে পার পাওয়া যাবে না, যাওয়া উচিত না।

আর যারা রেকর্ডটি করল তারাও নিঃসন্দেহে প্রচন্ড অসৎ উদ্যেশ্যে এই কাজটি করেছেন। এতে প্রমাণিত হয় আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা কেউই আর ভালো মানুষ না। মনে হয় যেন সমাজের যত খারাপ মানুষ আছে তারা এখন এইসব প্রতিষ্ঠান চালানোর নেতৃত্বে। প্রশ্ন হলো কামরুন নাহার মুকুল কি একজনই। না। বাকিদের ফোনালাপ ফাঁস হয়নি এই যা। তারাও নানা সময় এইরকম ভাষায় কথা বলছেন বা দুর্নীতি করছেন। সকলের ফোনালাপ বা সিসিটিভি ক্যামেরা যদি এইরকমভাবে ফাঁস হয়ে যেত তাহলে হয়ত এই সমাজের আসল চিত্রটা পেতাম। আমরাতো জানি বর্তমানে কোনো স্কুলের প্রধান শিক্ষক, কলেজের অধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রোভিসি হতে হলে কী করতে হয়। প্রথমত রাজনীতি করতে হয়, প্রচণ্ড ধূর্ত হতে হয়, মিথ্যুক হতে হয় ইত্যাদি। আর আমরা তো জানি গভর্নিং বডিতে কারা যায় এবং কীভাবে যায়? আমরা বুঝি কেন অভিবাবক ফোরামের নির্বাচনে কেন লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়। এতোসব জেনেও আমরা চুপ। তাই জনগণ হিসাবে আমাদেরও দায় আছে। বর্তমানে বাংলাদেশের কতোগুলো মিশনারি স্কুল কলেজ ব্যতীত কোনো স্কুল কলেজ ভালো নেই। এই ফোনালাপ ফাঁস অন্তত আমাদের একটা সুযোগ এনে দিয়েছে জানতে যে কারা আমাদের স্কুল কলেজের নেতৃত্ব দিচ্ছে, কাদের আমরা শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিচ্ছি। পুরো সিস্টেমটা একদম পঁচেগলে একাকার হয়ে গেছে। বাংলাদেশের শিক্ষা নিয়ে একটা সুদূরপ্রসারী মেগা প্রকল্প নিতে হবে। এর একটা সম্পূর্ণ ওভারহাউলিং প্রয়োজন। অনেককে চাকুরিচ্যুত করতে হবে, অনেককে শুদ্ধাচারের মধ্যে পরিষ্কার করতে হবে। আমাদের সন্তানদের এমন দৈত্য দানবের কাছে পাঠাতে পারি না। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যা ঘটলো তা একটি বার্তা। এইটাকে কাজে লাগাতে হবে। যদি কাজে লাগাতে না পারি এই দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন। লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়