রাশিদ রিয়াজ : মার্কিন সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষজ্ঞ এবং সিআইএ’র সাবেক মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স অফিসার ফিলিপ গিরাল্ডি স্ট্রাটেজিক কালচার ফাউন্ডেশনের জন্যে এক খোলা কলামে লিখেছেন ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচই সার কোনো লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। গিলাল্ডি বলেন, প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হওয়ায় আফগানিস্তান থেকে ২০ বছর পর মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছে বাইডেন প্রশাসন। শুধু আফগানিস্তান নয় ইরাকেও মার্কিন সেনারা কঠিন ও জটিল পরিস্থিতির মধ্যে আটকা পড়েছে। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে ওয়াশিংটনের কেউই এদুটি যুদ্ধে ‘বিজয়’ সংজ্ঞায়িত করতে কিংবা নিরাপদে ফিরে আসার কৌশল রচনা করতে সক্ষম হয় নি। ফলে যুদ্ধ এবং অস্থিতিশীলতা এখনও আমাদের সাথে রয়েছে। সন্ত্রাস দূর করতে বা আফগানদের জাগাতে হাজার হাজার মার্কিন সেনার মৃত্যু ঘটেছে কিংবা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে কিন্তু বাস্তবে কিছুই অর্জিত হয়নি। বরং ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাগদাদের যে সম্পর্ক বিরাজ করছে তারচেয়ে দেশটির অনেক বেশি সম্পর্ক রয়েছে তেহরানের সঙ্গে। ইরাকের সঙ্গে ইরানের রাজনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা ছাড়াও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হয়েছে।
গিরাল্ডি তার কলামে লিখেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনুরোধ সত্ত্বেও ইরাকের পার্লামেন্টে দেশটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দুই মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনুরোধকে পাত্তাই দেয়নি বাগদাদ। ট্রাম্প ইরাকের অর্থসম্পদ বাজেয়াপ্ত করার হুমকি দিয়েছিলেন কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। ইরাকিরা মার্কিন দখলদারিত্ব মেনে নেয়নি। গিরাল্ডি একই সঙ্গে সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের উপস্থিতির কড়া সমালোচনা করেন। অথচ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ তার দেশে মার্কিন সেনাদের দ্বন্দ্ব নিরসনে কোনো আমন্ত্রণ জানাননি। সিরিয়ার তেল ক্ষেত্রগুলো অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে মার্কিন সেনারা। দামাস্কাসের তেল সম্পদ আহরণ খুবই প্রয়োজন তা জেনেও। যে কোনো ভাবেই ইরাক বা সিরিয়া এখন যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিচ্ছে।
সাবেক এই মার্কিন সামরিক গুপ্তচর বলেন ইতিহাসে লেখা থাকবে কুড়ি বছর ধরে আফগানিস্তানে দেশটির উন্নয়নে মার্কিনীরা কিছুই করতে পারেনি। শুধু প্রকল্পের পর প্রকল্প হাতে নিয়েছে, ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। এবং এসব প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু পেন্টাগন ও হোয়াইট হাউসের এক্ষেত্রে কোনো পরিকল্পনা কাজে আসেনি। রাতের আঁধারে আফগান কমান্ডারের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া ছাড়াই বাগরাম বিমান ঘাঁটি থেকে চলে আসতে হয়। আক্ষেপ করে গিরাল্ডি বলেন মার্কিনীদের ফেলে আসা সামরিক সরঞ্জাম তালেবানরা লুটপাট করেছে কিন্তু তা দেখার কেউ ছিল না। ন্যাটো ও মার্কিনীরা আফগান সেনাবাহিনীকে বছরের পর বছর প্রশিক্ষণ দিলেও এখন একের পর এক এলাকা দখলে নিচ্ছে তালেবানরা। উল্লেখযোগ্য ও কৌশলগত শহর ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সীমান্ত এলাকা তালেবানদের দখলে চলে গেছে। অথচ অন্তত ১৮ হাজার আফগান যারা মার্কিনীদের দেশটিতে সহায়তা করেছে তারা এখন তালেবানদের হুমকির মুখে। তাদের মধ্যে দোভাষীদের গলা কেটে হত্যা করছে তালেবানরা। ২০০১ সালের চেয়েও আফগানিস্তান এখন সর্বদিক থেকে একটি দুর্বল দেশে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভুল ধরণের সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার লড়াইয়ে লিপ্ত থাকলেও আফগানিস্তান এখন বিশে^র কাছে অনেক কম ফোকাস বা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। গিরাল্ডি এও মনে করেন আফগান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না যতক্ষণ না দেশটিতে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন না হচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত তালেবানদের উত্থান ঘটছে দ্রুত গতিতে এবং তাদের অগ্রযাত্রা অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। আফগানিস্তানের প্রতিবেশি কোনো দেশে ঘাঁটি গেড়ে যুক্তরাষ্ট্র তালেবান নিয়ন্ত্রণে যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাতে কেউ বা কোনো দেশ রাজি হবে বলে গিরাল্ডি বিশ্ব করেন।
তিনি বলেন, উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে আফগানিস্তানকে মার্কিনীদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। এছাড়া মার্কিনীরা যে নতুন করে ঘাঁটি তৈরি করতে চাচ্ছে তাতে রাশিয়া নিশ্চিত ভেটো দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এছাড়া সিরিয়া, ইরাক, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এমন এক নেতিবাচক পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণে এসব দেশ কোনো মার্কিন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবে না। লেখার শেষে গিরাল্ডি মন্তব্য করেন মার্কিনীদের আফগান এ্যাডভেঞ্চার সম্পদ ও জীবনহানির এক নরকে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে মার্কিনীদের বের হয়ে আসা খুবই জটিল ও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গিরাল্ডি ভবিষ্যৎ বাণী করে বলেন পরের বার, সম্ভবত ওয়াশিংটন দায়ভার নিতে দ্বিধা করবে, তবে হোয়াইট হাউসে কোনও গভীর চিন্তাভাবনা না থাকার কারণে, সন্দেহ করি যে মার্কিনীরা সহজেই নিজেকে অন্য আর একটি আফগানিস্তানে খুঁজে পেতে পারে।