বিশ্বজিৎ দত্ত: [২ ] কোরবানির জন্য পশু মজুদ, বিক্রি ও মূল্য সবদিক দিয়েই পাকিস্তান ও ভারতকে পিছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে ১ কোটি ১৯ লাখ গবাদি পশু এ বছরের কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের দৈনিক ডনের ১২ জুলাইয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী এ বছর ১ কোটি গবাদি পশু পাকিস্তানে কোরবানির জন্য বাজারে এসেছে। ভারতের কোরবানির হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে মুসলিম লোক সংখ্যার হিসাবে ভারতে এ দুটি দেশের তুলনায় কম কোরবানি হবে বলে ধরে নেয়া যায়।
[৩] কোরবানির পশুর দামের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে এ দুটি দেশের চেয়ে। পাকিস্তানের এহসাস নামের একটি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে কোরবানির গরু ও ছাগল বিক্রির একটি হিসাব দিয়েছে। এই সংস্থাটি ভারতেও এই কার্যক্রম চালায়। তারা কোরবানির পর গরুর গোস্ত প্রসেস করে ঘরে পৌঁছে দেয়। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানে তারা একটি গরুর মূল্য রেখেছে ৫২৫ ডলার বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য ৪৪ হাজার টাকা। ভারতে ২৪৫ ডলার বাংলাদেশি টাকায় ২০ হাজার টাকা। ছাগলের মূল্য পাকিস্তানে ও ভারতে রাখা হচ্ছে ১৪ হ্জাার টাকা। বাংলাদেশের গরুর গড় মূল্য সম্পর্কে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিনাত সুলতানা জানান, দেশি গরুর গড় মূল্য ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকার উপরে। তবে ছাগল গড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বলে তিনি মনে করেন।
[৪] প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ১৭ জুলাই পর্যন্ত শুধুমাত্র অনলাইনে গরু-ছাগল বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫০৭টি। এটি দেশের মোট বিক্রির ২ শতাংশ। অন্যদিকে ডন পত্রিকার হিসাবে পাকিস্তানে অনলাইনসহ সব মিলিয়ে বিক্রি ১১ জুলাই পর্যন্ত ৩ লাখ ৫০ হাজার গবাদি পশু।
[৫] উপপরিচালক জিনাত সুলতানা জানান, দেশে প্রতি বছর কোরবানিতে গবাদি পশুর মোট বিক্রির পরিমাণ ৫০ থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। ২০১৪ সালের পর থেকে সরকারি প্রণোদণা ও সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেয়ায় দেশে প্রায় ৭ হাজার গরুর খামার গড়ে উঠেছে। এবারের কোভিড পরিস্থিতিতে ১৭৭৮টি অনলাইন গরুর হাট সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে প্রায় ২০ লাখ গবাদি পশুর চিত্র দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, এবারে বিদেশ থেকে কোনো গরুই আমদানি হয়নি। এমনকি অন্যান্য পশুও আসেনি। সংবাদপত্রে দেখেছি গাবতলী গরুর হাটে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কয়েকটি উট এসেছে। এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
[৬] এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ইসমত আরা বেগম জানান, বাংলাদেশের খামারে উৎপাদিত প্রতিটি গরু প্রতি লাভ হয় ১০ হাজার টাকা। এটি দেশের কর্মসংস্থান ও মাংশের চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে কোরবানিকে লক্ষ্য করেই এই গরুর খামার গড়ে উঠে। খামারগুলোর ৭০ শতাংশ গবাদিপশু বিক্রি হয় কোরবানির ঈদে। এই ঈদে অর্থনীতিতে নানাভাবে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। গরুর চামড়ার বাজার রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার। ট্যানার্স এসাসিয়েশনের হিসাবে দেশের ৬০ শতাংশ চামড়া সংগৃহিত হয় কোরবানির ঈদ উৎসবের সময়।