সুজন কৈরী: [২] বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজিপি ও সাবেক সচিব এ.ওয়াই.বি.আই সিদ্দিকী (৭৬) মারা গেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম সিভিল পিসকিপিং কন্টিনজেন্টের কমান্ডার ছিলেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শনিবার দিবাগত রাত ১টা ৩মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যাসহ বহু আত্মীয়-স্বজন এবং গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
[৩] এ.ওয়াই.বি.আই সিদ্দিকী ১৯৪৫ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুÐ এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ‘বুরহান সিদ্দিকী’ নামেও পরিচিত ছিলেন। তার বাবার নাম এ এম এল এ সিদ্দিকী। এ.ওয়াই.বি.আই সিদ্দিকী তিনি বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রামে এবং কলেজ পড়াশোনা শেষে চলে যান লাহোরে। সাবেক মন্ত্রী এলকে সিদ্দিকী তার ভাই। তিনি ১৯৭১ সালে রেহানা সিদ্দিকীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক ছেলে লুৎফি সিদ্দিকী এবং এক মেয়ে হুসনা সিদ্দিকী। ছেলে লুৎফি সিদ্দিকী ইউনাইটেড ব্যাংক অফ সুইজারল্যান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
[৪] তিনি ১৯৭০ সালে এএসপি হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। এ.ওয়াই.বি.আই সিদ্দিকী ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০০ সালের ৭ জুন পর্যন্ত সততা, দক্ষতা ও সুনামের সাথে পুলিশের ১৬তম আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৯ থেকে ৯০ সালে নামিবিয়ায় জাতিসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হিসেবে অংশ নিয়ে প্রধান লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
[৫] কর্মজীবনে এ.ওয়াই.বি.আই সিদ্দিকী পানি সম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে তার তৃতীয় চুক্তির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর ২০০৩ সালে শেষ হয়। তিনি ২০০৪ সালে সরকারী চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তারপরে একাধিক আন্তর্জাতিক পানি গবেষণা, আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন প্রকল্পের এসএমই এবং পরামর্শক হিসাবে কাজ করেন। ২০০৬ সালে তিনি জাতীয় প্রকল্প কো-অর্ডিনেটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বিটিভির তালিকাভ‚ক্ত সংগীত শিল্পী ও উপস্থাপক ছিলেন।
[৬] এ.ওয়াই.বি.আই সিদ্দিকীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। এক শোক বার্তায় তিনি আইজিপি বলেন, এ. ওয়াই. বি. আই. সিদ্দিকী একজন সৎ ও দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি দেশ ও জনগণের কল্যাণ এবং বাংলাদেশ পুলিশের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তার কাজের মাধ্যমে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বেনজীর আহমেদ মরহুমের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
[৭] এর আগে সকালে মরহুম সিদ্দিকীর প্রথম নামাজে জানাজা রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ ছাড়াও পুলিশের ঊর্ধ্বতন ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে পুলিশের একটি সুসজ্জিত দল মরহুমকে অফিসিয়াল ফিউনারেল প্রদান করেন। পরে ড. বেনজীর আহমেদ মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের নেতারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
জানাযা শেষে পুলিশের ব্যাবস্থাপনায় মরদেহ মরহুমের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বাদ আছর দক্ষিণ রহমতনগর মসজিদ প্রাঙ্গনে দ্বিতীয় জানাযা শেষে মরহুমকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।