প্রভাষ আমিন: সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে. সারাদেশে মাত্র শ তিনেক ঘরে সমস্যা হয়েছে, যা প্রকল্পের মাত্র দশমিক ২৫ ভাগ। বিশ্বের যেকোনো প্রকল্পেই বিচ্যুতির এইটুকু মাত্রা গ্রহণযোগ্য। মানলাম, সোয়া লাখ ঘর বানাতে শ তিনেক ঘরে সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু যে প্রকল্পটি নিখুঁতভাবে করা সম্ভব ছিল, সেটি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এমন লেজেগোবরে করা হলো কেন। আর যা জানা যাচ্ছে, তাতে সমস্যা শুধু তিন শ ঘরে থাকবে না। দ্রুতই আরও অনেক ঘরে সমস্যা দেখা যাবে। এক লাখ ৭১ হাজার টাকায় টেকসই ঘর বানানো সম্ভব নয়। এখন সব দায় ইউএনওসহ মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। তদন্ত হচ্ছে আরও অনেকের বিরুদ্ধে। তবে ইউএনওদের বলির পাঁঠা বানিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। যারা কোনোরকম সম্ভাব্যতা যাচাই পাইলটিং, যথাযথ মনিটরিং ছাড়া নামমাত্র অর্থে ঘর বানাতে চেয়েছে; দায় নিতে হবে তাদেরও।
আশার কথা হলো গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড়ের পর টনক নড়েছে সবার। দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে। ভাঙা ঘর মেরামত হচ্ছে। কোথাও কোথাও সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যেমন- জামালপুরের পুরো প্রকল্পটি অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে অল্প টাকায় করতে গিয়ে এখন দ্বিগুণ ব্যয় হচ্ছে। শুধু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা নয়, প্রকল্পের সবগুলো ঘরই সরেজমিন তদন্ত করতে হবে।
আশ্রয়ণ প্রকল্প একটি চলমান প্রকল্প। তিন শ ঘর ভেঙেছে বলেই এখন সবার নজর পড়েছে এখানে। আশা করি এখন পুরো প্রকল্পটি নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা করা হবে। গৃহহীনদের তালিকা করা থেকে শুরু করে, জমি নির্বাচন সব ক্ষেত্রেই যেন স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতার ছাপ থাকে। প্রকল্পের ব্যয় যেন যৌক্তিক পর্যায়ে বাড়ানো। তিনশ ভাঙা ঘর যেন ৯ লাখ ঘরকে টেকসই করে দেয়। টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়, ‘দাগ থেকে যদি দারুণ কিছু হয়, তবে তো দাগই ভালো।’ তিন শ ভাঙা ঘর এই প্রকল্পে যে কলঙ্কের দাগ লাগিয়েছে, তা মুছে গিয়ে যেন সত্যিই তা স্বপ্নের প্রকল্প হয়ে উঠতে পারে। গৃহহীন মানুষ যেন নির্ভাবনায় নিজের ঘরে থাকতে পারে। লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
আপনার মতামত লিখুন :