শিরোনাম
◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও) ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী 

প্রকাশিত : ১৪ জুলাই, ২০২১, ০৬:২১ বিকাল
আপডেট : ১৪ জুলাই, ২০২১, ০৬:২১ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মৌলভীবাজারে আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী কামার শিল্প

স্বপন দেব :  জেলার কমলগঞ্জে টুং টাং শব্দেই যেন জানান দিচ্ছে আর কয়েকদিন পরেই ঈদুল আজহা। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস সাইজ করতে ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটি অত্যাবশ্যকীয়। সেগুলো সংগ্রহ ও প্রস্তুত রাখতে এখন সবাই ব্যস্ত। আর এর উপকরণ তৈরি ও শান বা লবন-পানি দেয়ার কাজে প্রয়োজন কামারদের। পশু কোরবানির দা, ছুরি ও চাপাতিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে এখন থেকেই মানুষ কামারপাড়ায় ভিড় জমাচ্ছেন।

আবার কেউ কেউ পুরানো সরঞ্জাম মেরামত অথবা শান দিয়ে নিচ্ছেন। জেলার সাতটি উপজেলায় বিভিন্ন কামার পাড়ায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছে একাজে জড়িত প্রায় দু’শতাধিক কর্মকার। সারা বছরের এই বিশেষ সময়েই তাদের একটু বেশি কাজ কাম হয় বলে তারা জানান।

প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। পাশাপাশি কয়লা আর কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ কমেছে বলেও জানান কর্মকাররা। বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে জমে উঠেছে এ শিল্প। শান দেয়া নতুন দা-বটি, ছুরি ও চাকু সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সামনে, কাজ চলছে ভিতরে। দোকানের জ্বলন্ত আগুনের তাপে শরীর থেকে ঝরছে অবিরাম ঘাম। চোখেমুখে প্রচন্ড ক্লান্তির ছাপ, তবু থেমে নেই তারা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অব্দি চলছে কাজের ব্যস্ততা।

কুলাউড়ার কারিগর সুমন ধর, অজিত ধর, কমলগঞ্জের ভানুগাছ বাজারের কর্মকার সুজিত ধর বলেন, এটা আমাদের পৈতৃক পেশা। আমি ছোটকাল থেকেই এই কাজ করছি। প্রতি ঈদকে সামনে রেখে পাইকারী দোকানদার ও খুচরা ক্রেতাদের কাছে এই সময়ে আমাদের কদর বেশ ভালই থাকে, তবে এখন করোনার প্রভাবে অন্যান্য বছরের চেয়ে কাজের চাপ একটু কম, তবে দিন দিন কাজের চাহিদা আরো বাড়ছে। আগে এই সময়টা থেকেই চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হত। এখন আর তা হতে হচ্ছে না।

কোরবানি ঈদের মাংস কাটার জন্য শান দিতে আসা সৈয়দ জাঙ্গির, সাইফুল ইসলাম বলেন, আসলে বছরে একবার কামারের ঘরে আসা দা বটি শান দেবার জন্য। কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর বাজারের আঁখল মিয়া জানান, বছরের অন্য দিনগুলোতে তেমন কাজ থাকে না। কিন্তু কোরবানির ঈদ এলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। দিনরাত কাজ করেও অবসর পাওয়া যায় না।

শমশেরনগর বাজারের কামার কমল দেব ও অরুন দেব বলেন, করোনার কারণে গত দেড় বছল ধরে তারা খুবই কষ্টে আছেন। করোনার আগে প্রতিদিন দোকানে ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা আয় হতো। আর এখন ৮০০ টাকা থেকে ১০০ টাকা আয় করা কষ্টকর। দোকানে গড়ে ২ জন কওে কর্মচারী রাখতে হয়। একজন কর্মচারীর দৈনিক মজুরী ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে কিছুই থাকে না উল্টো লোকসান হয়। সামনে কুরবানীর ঈদ উপলক্ষে কুরবানীর পশু জবাই করার উপকরণ তৈরী ও বিক্রি করে কয়েকদিন আয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কারিগররা জানান, কাঁচা-পাকা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয় ধাতব যন্ত্রপাতি। তবে পাকা লোহার দা-ছুরির চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে এবং বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে। ঈদুল আজহা সামনে রেখে কমলগঞ্জ উপজেলার কামার দোকানগুলিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কর্মকাররা। এ উপজেলায় ১টি পৌরসভাসহ ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। এ উপজেলার ভানুগাছ বাজার, শমশেরনগর, মুন্সীবাজার, আদমপুরসহ বিভিন্ন বাজারে আছে কামারের দোকান। শেষ পর্যন্ত করোনার প্রভাবে এবং লকডাউনের বিধি নিষেধে অনিশ্চিত বাজার নিয়ে শঙ্খার মধ্যদিয়েই কাজ করে যাচ্ছে বাংলার এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী জাত পেশার কারিগর কর্মকাররা।

এ পেশার মানুষ সারাবছর কমবেশি লোহার কাজ করলেও ঈদুল আযহা সামনে রেখে বৃদ্ধি পায় তাদের কর্ম ব্যস্ততা। ভোর থেকে শুরু করে রাত অবধি চলছে তাদের রকমারি কর্মযজ্ঞ। দা আকৃতি ও লোহাভেদে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, ছুরি ১০০ থেকে ৫০০ টাকা, চাকু প্রতিটি সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ১৫০ টাকা, হাড় কোপানোর চাপাতি প্রতিটি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং পুরানো দা-বটি, ছুড়ি শান দিতে বা লবন-পানি দিতে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়