আব্দুল্লাহ মামুন: [২] আইনের সুস্পষ্ট বিধান থাকার পরও লাগামহীনভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বল্পমূল্যে শ্রম কিনতে লঙ্ঘন করা হচ্ছে শিশুদের মানবাধিকার।
[৩] যেকোনও দুর্ঘটনায় শিশুদেরই ক্ষতি হচ্ছে বেশি। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সেজান জুস কারখানার অগ্নিকান্ডে অনেক শিশু শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে আইনের কার্যকারিতা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
[৪] নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রæপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জুস কারখানায় গত ৮ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টায় আগুনের সূত্রপাত হয়। কারখানার ছয় তলা ভবনটিতে তখন চারশ’র বেশি কর্মী কাজ করছিলেন। কারখানায় কেমিক্যাল, প্লাস্টিক, কাগজসহ প্রচুর সরঞ্জাম থাকায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সব ফ্লোরে। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই শিশু বলে জানা গেছে।
[৫] বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত ‘জাতীয় শিশু জরিপ-২০১৩’ অনুযায়ী, দেশে বিভিন্ন শ্রমে নিয়োজিত আছে প্রায় ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত প্রায় ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু। শ্রম মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে দেশের ১৩ লাখ শিশু। তবে বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেশি। ২০০৬ সালের শিশু সনদে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের সার্বিক শ্রম এবং ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
[৬] সাবেক আইনমন্ত্রী বেরিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, দেশে শিশু শ্রম রোধে বেশ কিছু রাষ্ট্রীয়-আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত ও আইন গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, জাতীয় শিশুশ্রম নির্মূল নীতি-২০১০, জাতীয় শিশুশ্রম কর্মপরিকল্পনা-২০১২ ও ২০১৬, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ আইন, মানবপাচার রোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা কর্মসূচি-২০১৫ ও ২০১৭, জাতীয় শিক্ষানীতি এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা-২০১৬ ও ২০২০। এছাড়া আরও কিছু নীতিমালা রয়েছে, যা শিশুশ্রম রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যথেষ্ট।
[৭] তিনি আরোও বলেন, পরিবারিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শিশু-কিশোররা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হচ্ছেন। তবে শিশুশ্রম রোধে রাষ্ট্রীয় ভাবে উপবৃত্তিসহ নানা প্রকল্প ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু ব্যাপক সংখ্যক শিশু-কিশোরদের শ্রমে সম্পৃক্ততা দেখে বোঝা যায় উল্লিখিত প্রকল্পগুলো যথেষ্ট নয়। সম্পাদনা: মেহেদী হাসান