শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ০১ জুলাই, ২০২১, ০৭:০৫ বিকাল
আপডেট : ০১ জুলাই, ২০২১, ০৭:৩৬ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

আসাদুজ্জামান সম্রাট : ঘটনা-১ : দুর্যোগ সহনীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের নির্মাণাধীন ঘরের দেয়াল ধসে চাপা পড়ে আহত হয়ে আশি বছরের বৃদ্ধা হাসপাতালে। ঘটনাটি ঘটেছে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী ৭নং ওয়ার্ডের মধ্য চুকাইবাড়ী রামপুরা গ্রামে। স্থানীয়রা জানান, মমতাজ বেগম অসহায় এক বৃদ্ধা। তার নামে প্রধানমন্ত্রীর উপহার মুজিববর্ষে দুর্যোগ সহনীয় একটি পাকা বাড়ি বরাদ্দ হয়। বাড়ির নির্মাণ কাজ চলছিল। দুপুরে নির্মাণাধীন ঘরের দেয়াল ধসে পড়ে। এ সময় মমতাজ বেগম ও তার নাতি রাসেল (২৬) দেয়াল চাপা পড়ে।

স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করেন। পরে মমতা বেগমকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মমতাজ বেগম আক্ষেপ করে বলেন, সরকার আমারে একটি ঘর দিছে। সে ঘর আমার ওপর ভেঙে পড়ল। ঘর নির্মাণ মিস্ত্রী এরশাদ জানান, ৬ বস্তা বালুর সঙ্গে ১ বস্তা সিমেন্ট দিয়ে কাজ করা হয়। বৃদ্ধার জামাই আমির উদ্দিন বলেন, মাটি বালুর সঙ্গে কম সিমেন্ট দিয়ে কাজ করায় দেয়াল ভেঙে পড়েছে। বৃদ্ধার একমাত্র মেয়ে রাশেদা বলেন, বালু বেশি দিয়ে কাজ করাতেই ঘরটি ভেঙে পড়েছে। একই এলাকায় আনোয়ারা বেগমের নির্মাণাধীন ঘরের বারান্দার দেয়ালও ভেঙে পড়েছে। আনোয়ারা বলেন, আমি আর ওই ঘরে উঠব না, বাকিটুকু বাতাসে ভেঙে পড়বে।

ঘটনা-২: মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার গৃহহীনদের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এ ছাড়া দরিদ্র গৃহহীনদের কাছ থেকে নেওয়া পরিবহন ও মিস্ত্রি খরচের ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকাও ফেরত দিয়েছেন ইউএনও। সুনামগঞ্জের শাল্লার ১৪৩৫ গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। ইট না দিয়ে যেনতেনভাবে বালু-সিমেন্টের মিশ্রণ দিয়ে ঘরগুলোর মেঝে করে দেওয়া, নিম্নমানের ইট, বালু, পাথর ব্যবহার, নির্মাণের মালপত্র পরিবহনের টাকা গৃহহীনদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া, মিস্ত্রির টাকা দিতে বাধ্য করাসহ নানাভাবে অসহায় মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

গৃহহীনদের ঘর উপাহার দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ শুরু থেকেই প্রশংসা কুড়িয়েছে। দু’শ্রেণীর মানুষকে এ ঘর দেয়া হচ্ছে। একেবারেরই যারা গৃহহীন এবং যাদের জমি আছে ঘর নেই তাদের। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি অংশ আশায় বুক বেধেছিল প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাবেন বলে। সে উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবৈজ্ঞানিক চিন্তাচেতনার কারনে এই মহতী উদ্যোগে কালিমা লেগে যাচ্ছে। উপরে দু’টি ঘটনা উল্লেখ করা হলেও এমন ঘটনা দেশের অনেক জেলা-উপজেলায়। ভেঙ্গে পড়ার ভয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এই ঘরে অনেক এলাকার গৃহহীন বা দরিদ্ররা উঠতে ভয় পাচ্ছেন।

সাধারণত: এ ধরনের কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব মূলত দেশের প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানগুলোর। গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং  স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এসব কাজ করে থাকে। এছাড়া শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরও ভবন নির্মাণ করে থাকে। সরকারের বিশেষায়িত প্রকল্পগুলোর কোনটি আবার এমইএস বা মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস করে থাকে। কিন্তু এদের কোউকে দায়িত্ব না দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন এই ঘর নির্মাণ করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুমিহীনদের ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, মুজিববর্ষে গৃহহীন-ভূমিহীনদের ঘর উপহার বাংলাদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ৬৬ হাজার ১৮৯টি গৃহহীন পরিবারের হাতে শনিবার ঘরের চাবি বুঝিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, আজকে এটাই সবচেয়ে বড় উৎসব, এর চেয়ে বড় উৎসব বাংলাদেশের মানুষের হতে পারে না। ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব পরিবারকে ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। এই অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন ৪৯২টি উপজেলার মানুষ। তাদের মধ্যে কারও কারও সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথাও বলেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যখন এই মানুষগুলো এই ঘরে থাকবে তখন আমার বাবা-মার আত্মা শান্তি পাবে। লাখো শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। কারণ এসব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই তো ছিল আমার বাবার লক্ষ্য। তিনি বলেন, খুব আকাঙ্ক্ষা ছিল নিজে আপনাদের হাতে জমির দলিল তুলে দিই। কিন্তু করোনাভাইরাসের জন্য হল না। তারপরেও আমি মনে করি, দেশ ডিজিটাল হয়েছে বলেই এভাবে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমরা প্রত্যেক শ্রেণির জন্য কাজ করছি। সব মানুষকেই জন্য ঠিকানা করে দেবো, এটাই আমার লক্ষ্য। সারা জীবনের দুঃখ ঘুচে মিলছে তাদের মাথা গোঁজার ঠিকানা।

মুজিববর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার ধারাবাহিকতায় পৌনে ৯ লাখ গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারের তালিকা হয়। শেখ হাসিনার পছন্দ করা নকশায় নির্মাণ করা হয়েছে এই প্রকল্পের ঘর। প্রতিটি ঘরে থাকছে দুটি শয়ন কক্ষ, একটি লম্বা বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি টয়লেট। এসব ঘরের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির  ব্যবস্থা। পরিবারগুলোর কর্ম সংস্থানেরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু সুন্দর একটি কাজ বাস্তবায়ন পর্যায়ে গিয়ে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের যে কোনো একটি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করলে আজ এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। আমলাদের দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কাঙ্খিত লক্ষ্য বাস্তবায়ন হচ্ছেনা।

এখনও সময় আছে অবশিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের কোন একটি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করে প্রকৃত ডিজাইন ও গুনগত মান অক্ষুন্ন রেখে বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হবেনা।

# আসাদুজ্জামান সম্রাট, নগর সম্পাদক, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি ও সম্পাদক পার্লামেন্ট জার্নাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়