আমিরুল ইসলাম : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান আরও বলেন, এই সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ১৩৩ গুণ, কৃষি উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ‘আমার দেখা নয়া চীন’সহ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থগুলোতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, কৃষিতে কীভাবে উন্নতি করা যায়, শিল্পের উন্নয়ন কেমন করে করা সম্ভব। সাধারণ মানুষ এমনকি ভিক্ষুকেরও কেমন করে উন্নতি করা যায় সেসব কথাও এসব বইতে স্থান পেয়েছে। যেসব স্বপ্ন তিনি দেখতেন সেসবের রুপায়নের জন্য তিনি সংবিধানে, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন ভাষণে পথনির্দেশিকা রেখে গেছেন। সেই স্বপ্নগুলো পূরণ করবার কাজ এখন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিও শুধু আজকের সমস্যা দেখতে পান না। অনেক দূরের সমস্যাও তিনি দেখতে পান। সেজন্য পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, পরিপেক্ষিত পরিকল্পনা এবং ডেল্টা পরিকল্পনার আওতায় তিনি বাংলাদেশের সুদূরপ্রসারি নীতিকৌশল নির্ধারণ করছেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের যে ঝুঁকি সেটাও মোকাবেলা করছেন। শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ভালনারেবল গ্রæপ অব কান্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুও ১৯৭২ সালে জলবায়ুর প্রভাবের কথা ভাবতেন। তাই বৃক্ষরোপন সপ্তাহ উদ্বোধন করার সময় বলেছিলেন সুন্দর বন না থাকলে কী ক্ষতি হবে? ঢাকাও কেমন করে আক্রান্ত হবে? সেসব কথা কতো আগেই তিনি বলে গেছেন। আজকেও বঙ্গবন্ধুকন্যাও জলবায়ু নিয়ে একইরকম কথা বলছেন। তিনি একজন মানবিক নেতা। আমরা দেখতে পাই বঙ্গবন্ধু একটি দারুণ প্রতিক‚ল অবস্থার মধ্যেও দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই ছিলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্য, সব জায়গা থেকে তিনি প্রতিক‚ল ক‚টনীতির শিকার হয়েছিলেন। খাদ্য-সাহায্য পাওয়া খুব কঠিন হয়ে গিয়েছিলো। যে কারণে দেশের ভেতরে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু এসব প্রতিক‚লতা মোকাবেলা করেই বঙ্গবন্ধু সম্ভাবনার ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছিলেন।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, ১৯৭২ সালে তিনি ৯৩ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় দিয়ে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে এসে তিনি সেটা ২৭৩ মার্কিন ডলারে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর সেটা আবার পড়তে শুরু করলো। দেখা যায় ১৩ বছর লেগেছিলো আবার সেই ২৭৩ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয়ে আসতে।
বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বের এমনই গুণ ছিলো। গত ১২ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে মাথাপিছু আয় প্রায় তিনগুণের মতো বেড়েছে, এ সময়ে জিডিপিও বেড়েছে সাড়ে তিনগুণ। রেমিটেন্স বেড়েছে ২৮৫ গুণ। রপ্তানি বেড়েছে ১৩৩ গুণ। আর কৃষি উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে এই সময়টায়। খাদ্য সংকট অনেকটাই মোকাবেলা করা গেছে। এই করোনা মহামারির সময়ও বঙ্গবন্ধুকন্যা সেই সংস্কৃতিটা মনে রেখেছেন যে দুর্যোগকেও আমরা একটা সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করতে পারি। যেটা বঙ্গবন্ধু করতে পেরেছিলেন। সেই সংস্কৃতির আলোকেই আজকে তিনি দেশ পরিচালনা করছেন।
তিনি বলেন, এখনো অনেক রকমের চ্যালেঞ্জ আছে। মানুষের কষ্ট হচ্ছে, বিশেষ করে চিকিৎসাখাতে। করোনা তাÐব চালাচ্ছে। কিন্তু একজন মানবিক নেত্রী হিসেবে তিনি সর্বক্ষণ নজর রাখছেন কী করে মানুষের জীবন ও জীবিকা-দুইই বাঁচানো যায়। কী করে মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করা যায়। এই যে নেতৃত্বের পরম্পরার কথা বলছি তার কেন্দ্রে রয়েছে মানবিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, পরিবেশবান্ধব এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নের পরম্পরা। সেই স্বপ্নপূরণের নেতৃত্বের পরম্পারই আমরা এখন বঙ্গবন্ধুকন্যার দেশ পরিচালনার ভঙ্গিতে দেখতে পাচ্ছি।