শিরোনাম
◈ ফ্রা‌ন্সের লিও শহ‌রের কসাই থেকে গাজার কসাই: ইতিহাসে বারবার অপরাধীদের বাঁচিয়েছে আমেরিকা ◈ রিজার্ভে বড় সাফল্য: আইএমএফের লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ, প্রবাসী আয়ে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি! ◈ আদানির বকেয়ার সব টাকা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ◈ মাঠে ছড়িয়ে থাকা লেবু ও  ডিম দে‌খে ম্যাচ খেলতে আসা ‌ক্রিকেটাররা ভয়ে পালালেন ◈ ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরে আপত্তি মোদি সরকারের! ◈ উনি ক্লাসে বাজে ঈঙ্গিতপূর্ণ কথা বলার পাশাপাশি বডি শেমিং করেন ◈ এবার নিউ ইয়র্ক মেয়রপ্রার্থী মামদানিকে গ্রেপ্তারের হুমকি ট্রাম্পের! তীব্র প্রতিক্রিয়া ◈ বউ পেটানোয় শীর্ষে খুলনা ও বরিশালের মানুষ: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (ভিডিও) ◈ ক‌ষ্টের জ‌য়ে ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনা‌লে রিয়াল মা‌দ্রিদ ◈ দুপু‌রে এ‌শিয়ান কাপ বাছাই‌য়ে স্বাগ‌তিক মিয়ানমা‌রের বিরু‌দ্ধে লড়‌বে বাংলাদেশ নারী দল

প্রকাশিত : ০১ জুন, ২০২১, ০৯:২৯ রাত
আপডেট : ০১ জুন, ২০২১, ০৯:৩৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‌‘বাড্ডাবাসী’দের গল্প

ফেসবুক থেকে: “বাড্ডাবাসী” একটি সোশ্যাল মিডিয়া ভিত্তিক সামাজিক সংগঠন। সম্পূর্ণ বাড্ডা এলাকা নিয়ে এই গ্রুপটি তৈরি হয়েছে।

হ্যাঁ আমরা একটি মানবিক সংগঠনের মানুষগুলোর কথা বলছি। করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় যখন সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত, বাংলাদেশ ও মুখোমুখি এই এক অজানা ভাইরাসের। সম্প্রীতিময় বাংলাদেশের মানুষের কাছে রক্ষাকবচ হচ্ছে শুধুই নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখা। জনসচেতনতা তখনো খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষের কাছে হেয়ালীপুর্ন আহবান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে কমিউনিটি পর্যায়ে করোনা মোকাবেলায় তাই এ শ্রেনীর মানুষদের সচেতন করার লক্ষ্যে বাড্ডাবাসী – সামাজিক সংঘঠনের পরিচালনা পর্ষদ নেমে এসেছিল সামাজিক প্রচারনায়।

করোনা সচেতনতায় প্রচারনাঃ প্রায় 42 হাজার সদস্যের ফেসবুক ভিত্তিক এ সংঘঠনের এডমিন মডারেটরদের উদ্যোগে সকল সদস্যদের নিয়ে শুরু করেন প্রচারনা কার্যক্রম। গুলশান বাড্ডা লিংক রোড, বাড্ডা প্রগতি স্বরনী রোডে প্রথম শুরু হয় দিন ব্যাপী কার্যক্রম। সকল পথচারী মানুষকে মাস্ক বিতরন ও করোনা প্রতিরোধে করনীয় সম্পর্কে চলে সচেতনতা মুলক কর্মসুচি। একই সাথে চালানো হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিরন্তর প্রচারনা। সদস্যদের সম্পুর্ন নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত এই কর্মসুচীতে বাড্ডার বাসিন্দাগন এগিয়ে আসেন স্ব-প্রনোদিত ভাবে। আর এভাবেই বাড্ডার বাসিন্দাগন একটি প্ল্যাটফর্মে হয়ে উঠেন ঐক্যবদ্ধ। এর পরের গল্প গুলো শুধুই মানবিক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি, এক দল মানুষের জেগে উঠা মানবিক মনের গল্প। সবাই খুজে বেড়িয়েছে দুঃখী মানুষকে, অসহায় পরিবারকে, কিভাবে একটু সহযোগিতা করা যায়। মানুষের ভেতর এত মানবিকতা, নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশ দেখেনি এর আগে।No description available.

খাদ্য বিতরন কর্মসুচীঃ করোনা মোকাবেলায় চলমান লকডাউনের কিছুদিনের মাঝে শুরু হয় নতুন চ্যালেঞ্জ। বাড্ডাবাসী সংগঠনের কাছে আসতে থাকে অনাহারী মানুষের তথ্য। সরকার কর্তৃক চালানো ব্যাপক সাহায্য সহযোগীতার বাইরেও থেকে যায় একদল মানুষের নাম, যারা কখনো সাহায্যের জন্য মুখাপেক্ষী ছিলনা। দিন ভিত্তিক রুটি রুজিতে যুক্ত থাকা মানুষ গুলো লকডাউনে কর্মহীন থাকার কারনে হয়ে পড়ে চুড়ান্ত অসহায়। বাড্ডাবাসী সামাজিক সংগঠন প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে খাদ্য শস্য বিতরন কর্মসুচী হাতে নেয়। সদস্যদের চাঁদায় সবজি কিনে রেখে দেওয়া হয় একটি নির্দিষ্ট স্থানে। অনাহারী মানুষগুলো যার যতটুকু প্রয়োজন এসে নিয়ে যান। এক অভূতপুর্ব দৃশ্য, এত বাজার পেয়েও কেউ প্রয়োজনের বেশী নেয়নি, কারন তার মাঝেও ছিল মানবিক মুল্যবোধ, অন্য ক্ষুধার্তকে সুযোগ করে দেবার। সংগঠনের ভলান্টিয়ারগন তৈরী করেন সাপ্তাহিক বাজারের প্যাকেট। চাল, ডাল, সবজি, তেল, লবন, স্যানিটাইজার ইত্যাদি দিয়ে সাজানো এক একটি ব্যাগ রাতের অন্ধকারে পৌছে দেয়া হয় ক্ষুধার্ত পরিবার গুলোর মাঝে।

এর মাঝে আসে ঈদ, বাড্ডাবাসীর মানবিক সদস্যগন ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেন সকল অসহায়দের সাথে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সাহায্য প্রার্থী সবার জন্য পৌছে দেয়া হয় ঈদ বাজার। অনলাইন শপ ঘরে বাজার ডট কম এবং বাড্ডা অনলাইন বাজার আমাদের অর্ডার গুলো সরবরাহ করেছে অলাভজনক ভাবে, এবং ডেলিভারী ফি ব্যতিরেকে, এমনকি তারাও যুক্ত করেছে কিছু পন্য তাদের সি এস আর থেকে।

নতুন কর্মসংস্থানঃ চলমান করোনা লকডাউন ও পরবর্তী সময়ে অনেকেই হয়ে পরে কর্মহীন। বাড্ডাবাসী সংগঠনটি তাদের সদস্যদের নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচারনা করার সুযোগ করে দেয়। এভাবে সৃষ্টি আরেক মানবিক গল্পের, নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তা গন কেউ খাবার বিক্রি করতে এগিয়ে আসে, কেউ কাপড়, কেউ প্রসাধনী, কেউ হয়ত পিঠা, কেউ তেল। এভাবে সংগঠনটির সোশ্যাল মিডিয়া পেজে এই মুহুর্তে ৩৫০ এর অধিক নিবন্ধিত উদ্যোক্তা কাজ করছে, যার ৯০ ভাগ উদ্যোক্তাই হচ্ছেন নারী সদস্য ।

মানবিক সেবাঃ বাড্ডাবাসী সামাজিক সংগঠনটির আরেকটি উৎকৃষ্ট দিক হলো মানবিক সেবা। গল্পকে হার মানিয়ে যায় এই ইমারজেন্সী রেসপন্স গুলো।

No description available.একদিন একটা পোষ্ট এল, একজন ডিভোর্সড মহিলা উনার দুটি ফুট ফুটে শিশু বাচ্চাকে দত্তক দিতে চান। যদি না সম্ভব হয়, উনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবেন। করোনা পরিস্থিতিতে উনি কর্মহীন। অসহায় বাচ্চাদের মুখে দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে পারছেন না, লালন পালন করতে পারছেন না। এই করোনা পরিস্থিতিতে উনি বাচ্চা সহ আছেন অনাহারে। বাড্ডাবাসী পরিবারে তৈরী হয় শোকার্ত পরিবেশ। তাৎক্ষনিক ভাবে সংগঠনের সদস্যগন এই পরিবারকে সাহায্য করার জন্য পেজে মেসেজ দিতে থাকেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে শেখ মোহাম্মদ সিয়াম উনাদের জন্য বাজার নিয়ে গিয়ে হাজির হন এবং বাচ্চাদের পড়াশুনার দায়িত্ব নেন ও মহিলার জন্য কাজের ব্যবস্থা করেন।

 

আরেকদিন একটি পোষ্ট এল। এক প্রসুতি মা করোনা পরিস্থিতিতে তার চিকিৎসা খরচের অভাবে সাহায্য চেয়েছেন। বাড্ডাবাসী সদস্যগন এমনকি প্রবাসী সদস্যগন অর্থ সাহায্য পাঠিয়ে উনার সন্তান জন্মদান ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ভালবাসার পৃথিবীতে সবাই যুক্ত থাকতে চান ভাল কাজে। যেখানে বাড্ডা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা দিয়েছেন নামমাত্র মুল্যে, ডাঃ ফজিলাতুন্নেসা কুসুম আপু নেননি কোন ফিস।

আরেকদিন একটি পোষ্ট এল। একজন ভদ্রমহিলা উনি করোনা কালীন সময়ে কাজ হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। উনি আরো জানান উনি সেলাই কাজ ভাল জানেন। একটি সেলাই মেশিন হলে উনি স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন। এই সংগঠনের মানুষগুলো অকাতরে এগিয়ে আসেন, কেউ ১০ টাকা, কেউ বা হাজার টাকা, এইচ এস জিমের স্বত্বাধিকারী ফাহাদ সাহেব এগিয়ে আসেন বাকী যা আছে সব উনি দেয়ার আগ্রহ নিয়ে। করোনা না এলে হয়ত জানাই হত না লুকিয়ে থাকা ভাল মানুষগুলোর বড় মনের বিশালতা।

একটি পোষ্ট এল, মরিয়ম খালা, বয়স ৭৫, একপাশ প্যারালাইজড। পত্রিকা বেচে সংসার চালান। তবুও ভিক্ষে করবেন না, জীবন সংগ্রামের সায়াহ্নে মাথা উচু করেই বেচে থাকতে চান। বাড্ডাবাসী সংগঠন উনার মাথা উচু রেখেই তাকে সহযোগীতা করেছে চিকিৎসার জন্য। এমন মানুষগুলোর জন্য শ্রদ্ধা থাকুক অটুট।

আমাদের এক সদস্য কিডনী বিকল হয়ে চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে দিশেহারা, সেই সাথে পরিবারের ব্যয়ভার। সংগঠনের সদস্যগন এগিয়ে এলেন তার জন্য অর্থ সাহায্য নিয়ে। জনাব লায়চু জামান এগিয়ে এসে উনাকে করে দিলেন একটি খাবার হোটেলের ব্যবস্থা, যা দিয়ে উনি উনার চিকিৎসা ও পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহ করতে পারছেন।

এমন হাজারো গল্প দিয়ে ঠাসা একটি পরিবার, বাড্ডাবাসী। যার উদ্যোগটি হয়ত কয়েকজনের, কিন্তু মানবিক অংশগ্রহন হাজারো ভাল মানুষদের, দিন শেষে সবাই একটি মহৎ গল্পের রুপকার। যেখানে ২০মিনিটের মাঝে মিলে প্রয়োজনীয় রক্ত। ৩ দিনে মিলে ১ টি চাকুরী, বা ঘন্টার মাঝে মিলে যে কোন প্রয়োজনীয় তথ্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সাহসিকতার সাথে করোনা মোকাবেলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন, উনার উদাত্ত আহবানে উদ্ভদ্ধ হয়ে ২৫ হাজার ভলান্টিয়ার কাজ করেছে এক যোগে, রাজধানী ঢাকার বাড্ডা থানায় বাড্ডাবাসী সামাজিক সংগঠনের সদস্যবৃন্দ। অপ্রাতিষ্ঠানিক সংগঠন থেকেও জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় যে সাহসিকতা বাড্ডাবাসী টিম দেখিয়েছে তা পুরস্কারের আশায় নয়, তা বাংলাদেশের মানুষের লুকিয়ে থাকা মনের আবেগ। কারন আমরা বিশ্বাস করি পৃথিবীটা এখনো ভাল মানুষের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়