মো. সামসুল ইসলাম: মিডিয়ার জন্য কলাম লেখা আমার অত্যন্ত আগ্রহের একটা জায়গা। সেটা যদি শিক্ষা নিয়ে হয় তখন আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। শিক্ষা নিয়ে আমি পত্র-পত্রিকা ফেসবুকে অনেক লিখেছি। শুধু শিক্ষা নিয়ে আমি বিদেশে অনেক কোর্স করেছি। তাই শিক্ষা নিয়ে লেখালেখি আমার জন্য অনেক সহজ একটি ব্যাপার। কিন্তু বেশকিছু দিন থেকে আমি শিক্ষা নিয়ে লিখতে আর আগ্রহ বোধ করি না। শিক্ষা নিয়ে উচ্চপর্যায়ে এতো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, এসবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা বা এসবের আগামাথা বোঝা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
করোনাকালে অদ্ভূত ব্যাপার দেখছি। অন্য কোনো দেশে এরকম ঘটছে কিনা আমি জানি না। চাকরি-বাকরি মার্কেটসহ বয়স্কদের জন্য সব খোলা। আর পুরো দেশে একসঙ্গে অল্পবয়স্কদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখে বাসায় বন্দি করে রেখে দেওয়া হয়েছে। নীতিনির্ধারণে জড়িত বয়স্করা বুঝতে পারছে না তারা একটা প্রজন্মকে শেষ করে ফেলছে। এখন দেখছি তারা বিশ^বিদ্যালয় সশরীরে শুধু পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। এটা কেমন হলো তাও তো বুঝতে পারছি না। আবার একইসঙ্গে বলা হয়েছে সব শিক্ষার্থীকে টিকা না দিলে নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হবে না। কতো দেড়বছরে বিপরীতধর্মী এসব কথাবার্তা শুনে জাতি বিভ্রান্ত।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে কি লাভ হচ্ছে? আমি আমার বাসার কথা বলি। দুই মেয়ের স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় বাসা থেকে বের হতে হয় না। সারাদিন মোবাইল আর কম্পিউটার নিয়ে থাকে। রাত তিনটায় ঘুমোতে যায়। মাঝে মাঝে অনলাইনে ক্লাস করে। তাদের বক্তব্য বেশির ভাগই ক্লাসে আসে না। সকাল ১১টায় ঘুম থেকে উঠে। খাওয়া দাওয়া ঠিক নেই। বেশির ভাগ পরিবারে এই অবস্থা। ছেলেমেয়েদের শরীরের বারোটা বেজেছে। তাদের ইমিউনিটির অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। আমি বুঝতে পারছি, আল্লাহ না করুন, এখন করোনা হলে তাদের সুস্থ করাই কঠিন হবে। আশেপাশে তাই দেখছি। অথচ স্কুল কলেজ খোলা থাকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে তারা অন্তত সচল থাকতো। করোনা নিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনে আরো সচেতন হতো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের অবস্থা তো আরো করুণ। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সবার জন্য একই নিয়ম চালু করেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হলগুলোতে নাকি গণরুমের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাচ্ছে না। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হলগুলোতে কি সবাই ঠাসাঠাসি করে থাকে? দেশে তো এখন তো প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি। তাদের তো হলে থাকতে হয় না। কিন্তু তাদের কেন বন্ধ করে রাখা হয়েছে? পরীক্ষা থেকে শুরু করে একের পর এক নির্দেশে সবার মাথা খারাপ হয়ে যাবার যোগাড়। যেমন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হচ্ছে শিক্ষক কর্মাচারীদের বেতন ভাতা ঠিকমতো দিতে। আবার বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের বেতন দিতে চাপ দেওয়া যাবে না। তাহলে বিশ^বিদ্যালয়গুলো কিভাবে চলবে? হাস্যকর।
কিন্তু এর চেয়েও বড় কথা শিক্ষার্থীদের ব্যাপারটা। ইন্টারমিডিয়েট এর পর বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে নিজে ইনকাম করার চেষ্টা করে। প্রাইভেট টিউশন বা কোচিং সেন্টারে পড়ায়, ছোটখাট চাকরি করে আবার অনেকে শিক্ষকদের সঙ্গে গবেষণায় অংশ নিয়ে কিছু আয় করে। এসব বেশিভাগই এখন বন্ধ। কেউ ড্রাগ নিচ্ছে, গতবছর তো বেশ কয়েকজন আত্মহত্যা করল। মেয়েদের অবস্থা তো আরো খারাপ। অনেককেই পরিবার থেকে পড়াশোনা বন্ধ করে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। একটা প্রজন্ম চোখের সামনে শেষ হয়ে গেলো।
বিশ্ব কবে করোনামুক্ত হবে তা কেউ জানে না। ইংল্যান্ডে সর্বশেষ গবেষণায় দেখা গিয়েছে ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে অক্সফোর্ডের একটি টিকা দিলে ৩০ ভাগ সুরক্ষা পেতে পারে, দুইটা দিলে সর্বোচ্চ ৬০ ভাগের মতো। মিউটেশন তো হতেই থাকবে। এখন টিকার পাশাপাশি দরকার সচেতনতা।
মাস্ক, স্যানিটাইজার, অক্সিমিটার ইত্যাদির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের খোলা রেখে করোনা মোকাবেলায় দক্ষতা, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারত। নিজেদের মেডিকেল সেন্টারগুলোতে অক্সিজেন রাখা যেতো। তরুণরা দীর্ঘমেয়াদীভাবে করোনা মোকাবেলায় প্রশিক্ষিত হয়ে উঠত। অন্তত যেখানে সংক্রমণ কম সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় তো খুলে দেয়া যেতো। উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতো শিক্ষিত লোকজনই চালায়। তারা নিজেরাই তো অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে পারে। সব সিদ্ধান্ত কি একতরফা ভাবে ওপর থেকে চাপিয়ে দিতে হবে? ফেসবুক থেকে