শিরোনাম
◈ ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে একটি যৌক্তিক জায়গায় পৌঁছাতে চায় কমিশন :  অধ্যাপক আলী রীয়াজ  ◈ বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা বাড়ছে: শিক্ষার্থী, চিকিৎসক ও ভ্রমণকারীদের ভোগান্তি চরমে! ◈ পাকিস্তানি অভিনেত্রী হুমাইরার ময়নাতদন্তে ভয়ঙ্কর সব তথ্য ◈ অর্থের বিনিময়ে ৬ বছরের শিশুকে বিয়ে: তালেবান প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আপাতত রক্ষা! ◈ আবারও মে‌সির জোড়া গোলে ইন্টার মায়ামির জয় ◈ এখন থেকে আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নাম থাকবে না: জ্বালানি উপদেষ্টা ◈ ‘তুমি কেন ফুয়েল কেটে দিলে?’ ভারতীয় বিমান বিধ্বস্তের আগে পাইলটদের শেষ ককপিট ভয়েস রেকর্ডিং ◈ দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসীদের জন্য সুখবর: মৃত্যু হলে লাশ দেশে পাঠাবে সরকার, ক্ষতিপূরণ মিলবে বীমার আওতায় (ভিডিও) ◈ বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হতে যাচ্ছে ভারত: পিউ রিসার্চ ◈ বেপরোয়া বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ছয় মাসে নিহত ৪৩

প্রকাশিত : ৩০ মে, ২০২১, ০৫:৪১ সকাল
আপডেট : ৩০ মে, ২০২১, ০৫:৪১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শেষ হয়ে যাচ্ছে অর্থবছর: স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়লেও ব্যয়ের সক্ষমতা বাড়েনি

নিউজ ডেস্ক: বাজেটে বরাদ্দ পাওয়া টাকার বড় অংশই খরচ করতে পারেনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। দেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে বড় বড় প্রকল্প পেলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে হাতাশাজনক অবস্থায় রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা খাতটি। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ পাওয়া ১১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকার মধ্যে মন্ত্রণালয় ব্যয় করতে পেরেছে মাত্র তিন হাজার ৪৯ কোটি টাকা, শতাংশের হিসাবে যা মাত্র ২৫.৪৬। এখনো অব্যয়িত রয়ে গেছে আট হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। তবে অর্থবছরের শেষ প্রান্তে এসে টনক নড়েছে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের। এখন টাকা খরচের চাপে পড়েছেন তাঁরা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মহামারিকালে টিকা কেনার ক্ষেত্রে ক্রয়সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পেলেও স্বাস্থ্যসেবা খাতে অর্থ ব্যয়ের এমন অদক্ষতা গ্রহণযোগ্য নয়।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনা মহামারিতে যেখানে বেড়েছে স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়, সেখানে উল্টো ছবি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে। এই খাতে গত অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে প্রকল্পের সংখ্যা ও বরাদ্দ বাড়লেও বাস্তবায়নের হার বাড়েনি। বরং গত অর্থবছরের চেয়ে কমেছে ৪.৫৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের এপ্রিল-জুলাইয়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩০ শতাংশ। সেখানে এই করোনা মহামারির অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বরাদ্দের চেয়ে বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৫.৪৬ শতাংশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘এখানে অবশ্যই একটা সক্ষমতার বিষয় আছে। এখানে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহির অভাব রয়েছে। অনেক দিন ধরে আমরা দাবি শুনে আসছি স্বাস্থ্য খাত নিয়ে যে সেখানে যোগ্য লোককে বসাতে হবে। সে জায়গায় আমি আবারও বলতে চাই, আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে যোগ্য লোককে যথাযথ স্থানে বসাতে হবে। আর বরাদ্দের টাকা কেন সঠিক সময়ে ব্যয় হচ্ছে না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে।’

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রকল্প ছিল ৫৩টি। এই খাতে সরকারের বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৯৭৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা জিডিপির ৫.৭২ শতাংশ। গত ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) তারা খরচ করতে পেরেছে তিন হাজার ৪৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশের কিছু বেশি। কিছুদিন পরই চলে আসবে নতুন অর্থবছর। যদি তারা এই টাকা পুরোপুরি ব্যয় করতে না পারে তাহলে তা চলে যাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। এই অর্থবছরের মধ্যে যদি তারা এই টাকা খরচ করতে চায় তাহলে তাদের ব্যয় করতে হবে গত ১০ মাসের আড়াই গুণ অর্থ। যদিও এই অর্থ ব্যয় নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা।

আইএমইডি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ৪৩টি। সেই অর্থবছর স্বাস্থ্যসেবা খাতে বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ৯৩২ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা জিডিপির ৪.২২ শতাংশ। তবে সেই অর্থবছরে বাস্তবায়ন হয়েছিল ৩০.০১ শতাংশ। আর্থিকভাবে চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ বেড়েছে দুই হাজার ৪৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। বরাদ্দ বাড়লেও বাড়েনি বাস্তবায়ন। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বরাদ্দ ঠিকমতো খরচ না হওয়ার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো সঠিক সময়ে সঠিক প্রকল্প না নেওয়া। প্রকল্পের গুরুত্ব না বোঝা। কেউ বলছেন বৈদেশিক সহায়তায় যেসব প্রকল্প আছে সেগুলোর কাজে রয়েছে ধীরগতি।

এডিপি বাস্তবায়নের ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের আইএমইডির পর্যবেক্ষণে আমরা দেখেছি যে সরকারি অর্থায়নে যেসব প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেগুলোর অর্থ ব্যয় ঠিকমতো হয়েছে। তবে সমস্যা থাকলেও থাকতে পারে বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্পগুলোতে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আগের বছরের চেয়ে বাস্তবায়ন কমেছে, আমরা আমাদের প্রতিবেদনেও তা দেখেছি, তবে সে ক্ষেত্রে আমাদের বরাদ্দের আকারও দেখতে হবে। আগের অর্থবছরের চেয়ে অর্থ বরাদ্দও কিন্তু বেড়েছে এই অর্থবছরে।’

শুধু যে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের চেয়ে ব্যয় কম, তা নয়। বরং অন্য খাতগুলোতেও রয়েছে একই নজির। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে মোট এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ৪৯.০৯ শতাংশ। এ হার গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। চলতি অর্থবছরে এডিপির যে বরাদ্দ ছিল, তার এক লাখ ছয় হাজার ৫৪২ কোটি টাকা এখনো খরচ করা সম্ভব হয়নি। প্রতি মাসে গড়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে মোট বরাদ্দের একটি বড় অংশই এ বছর থেকে যাবে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে ১৫ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ প্রায় ৮৫ শতাংশ। এসব মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিস্থিতি তুলনামূলক বেশি পিছিয়ে। সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

গত ১০ মাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন হার ৩৩.৯০ শতাংশ। বরাদ্দের বিপরীতে এ সময়ে ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে তিন হাজার ৬২২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। এই অর্থ এ বছরের মোট এডিপির ৫.১১ শতাংশ। গৃহায়ণ ও গণপূর্তের ব্যয় হয়েছে ৩৪.৬৪ শতাংশ। ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে দুই হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। এ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ছিল আট হাজার ২২৬ কোটি টাকা। এ বরাদ্দ এডিপির ৩.৯৩ শতাংশ। বড় ১৫ মন্ত্রণালয়ের বাকিগুলোর পরিস্থিতিও প্রায় অভিন্ন। - কালের কণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়