শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক হবে গঠনমূলক ও ভবিষ্যতমুখী: হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ◈ এলডিসি থেকে উত্তরণ: আরও তিন বছরের সময় চাইছে বাংলাদেশ ◈ জাপানে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার ◈ ১৭ বিয়ের ঘটনায় মামলা, সেই বন কর্মকর্তা বরখাস্ত ◈ বিএনপি নেতাকে না পেয়ে স্ত্রীকে কু.পিয়ে হ.ত্যা ◈ বাংলা‌দেশ হারা‌লো আফগানিস্তানকে, তা‌কি‌য়ে রই‌লো শ্রীলঙ্কার দিকে  ◈ রোজার আগে নির্বাচন দিয়ে পুরোনো কাজে ফিরবেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ ঋণের চাপে আত্মহত্যা, ঋণ করেই চল্লিশা : যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ◈ একযোগে এনবিআরের ৫৫৫ কর্মকর্তাকে বদলি ◈ আবারও রেকর্ড গড়ল স্বর্ণের দাম, ভরিতে বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭৫ টাকা

প্রকাশিত : ২৮ মে, ২০২১, ১০:৩৬ দুপুর
আপডেট : ২৮ মে, ২০২১, ১২:০৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] দেশে উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দরকার পর্যাপ্ত বাজেট: ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

ভূঁইয়া আশিক রহমান : [২] বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেছেন, স্বচ্ছভাবে খরচ না হলে বাজেট বাড়ালেও জনগণ এর সুফল পাবে না। [৩] জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নতুন নতুন হাসপাতাল, নতুন বেড, জনবল বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের জন্য বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন।

[৪] স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ঠেকানো যাবে [৫] দেশে লক নেই, ডাউনও নেই-বিজ্ঞানসম্মতভাবে এলাকাভিত্তিক লকডাউন দিলে বেশি সাফল্য মিলবে।

[৬] জনগণ ও প্রশাসন মিলে জনসম্পৃক্ততা গড়ে তুলতে পারলে, ‘সো কল্ড’ লকডাউনের চেয়ে বেশি উপকারী হবে।

[৭] দেশের স্বাস্থ্যখাত অত্যন্ত নাজুক। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে স্বাস্থ্য খাতে অবশ্যই বাজেট বাড়ানো দরকার। তবে স্বাস্থ্য খাতে যতো টাকাই বাজেট থাকুক বা বাড়ানো হোক- তা যেন সুন্দর-স্বচ্ছভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খরচ করা হয়। অনিয়ম-দুর্নীতি যেন বাজেট ব্যয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে। এমনিতেই স্বাস্থ্য খাত নিয়ে মানুষের অভিযোগের শেষ নেই! কেনাকাটায় দুর্নীতির কোনো সুযোগ যেন না থাকে। দুর্নীতিপরায়ণরা যেন কারও কাছে আশ্রয় না পায়।

[৮] বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাকাটায় দুর্নীতি যা খরচ হয় তার চেয়ে ডাবল-ট্রিপল বা দশগুনেরও বেশি বিল করে পয়সা নেওয়া কি দুর্নীতি নয়? কেনাকাটায় যেন অনিয়ম কোনোভাবেই ঢুকতে না পারে। ধরুন স্বাস্থ্য খাতে ১০০ কোটি টাকা বাজেট দেওয়া হলো, এর মধ্য থেকে যদি ৯০ কোটি টাকা খেয়ে ফেলা হয় দুর্নীতি করে, তাহলে বাজেট বাড়িয়ে কী লাভ? এক টাকাও যদি বাজেট বাড়ানো হয়, সেটাও যেন সুন্দর-সুষ্ঠুভাবে খরচ হয়। স্বচ্ছভাবে খরচ না হলে বাজেট বাড়ালেও জনগণ তার সুফল পাবে না। লাভের গুড় পিঁপাড়ায় খেয়ে ফেলবে!

[৯] দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজেট কম, এটা সত্য। তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বাজেট বাড়ানো উচিত, জনস্বাস্থ্য ও গবেষণার কথা বিবেচনা করে। স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দুর্নীতি আগেও ছিলো। তবে করোনায় তা উন্মোচিত হয়েছে। করোনা আমাদের ভালো একটা শিক্ষা দিয়ে গেছে। স্বাস্থ্য খাতের দুর্বল দিক চিহ্নিত করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

[১০] বাজেটে টিকা, নতুন নতুন রোগের ওষুধপত্র, গবেষণা, করোনার জন্য আলাদা ব্যয় ফান্ড দরকার। পিপিই, মাস্ক ক্রয় করতে তো বাড়তি ব্যয় হয়। এজন্য বাজেট বেশি দরকার। এছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নতুন হাসপাতাল, নতুন বেড, জনবল বৃদ্ধি, যেখানে যেখানে আইসিইও দরকার তা সরবরাহ করা দরকার, এজন্য টাকা বরাদ্দ রাখতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যথোপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্যই এসব দরকার।

[১১] বাজেট ব্যয়ে বাধা, সুষ্ঠু তদারকি ও সমন্বয়ের অভাব আছে। দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্যখাত দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। তা না হলে বাজেট বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে না।

[১২] ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হচ্ছে ছত্রাক। এটা স্যাতস্যাতে জায়গায় হয়। প্রাকৃতিকভাবেই এই ছত্রাক আছে। মাটি, গাছপালা, শাকসবজিতে থাকে, পচা ফলমূলেও থাকে। সারের মধ্যেও থাকে। এই ছত্রাক আগেও ছিলো, করোনায় নতুন করে সামনে এসেছে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস যাদের আছে, ক্যান্সারের রোগী, যারা রেডিও থেরাপি, কেমো থেরাপি পায়, এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত, অনেক দিন ধরে স্টেরয়েড পায়Ñ এ ধরনের রোগীদের ছত্রাক সংক্রমণটা বেশি হয়। আগেও হতো, এখনো হয়। এটা খুব রেয়ার ডিজিজ। তবে রোগটা হলে সিরিয়াস হয়ে যায়। করোনা সংক্রমণের ফলে ভারতে এই ছত্রাক ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেখানে এটাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে। এটা আমাদের জন্যও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

[১৩] ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশ অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে। বর্ডারে চেক করা হচ্ছে। কোয়ারেন্টাইন করানো হচ্ছে। তবুুও অনেক পালিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসছে, আবার বাংলাদেশ থেকেও ভারতে নিশ্চয়ই কেউ কেউ যাচ্ছে। এতে ভয়ানক একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও হতে পারে। কারও মাধ্যমে যদি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বাংলাদেশে আসে, তাহলে একটা ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। মাস্ক পরলে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসও আমরা ঠেকাতে পারবো।

[১৪] বিজ্ঞানসম্মতভাবে কি দেশে সত্যিকারে কোনো লকডাউন আছে? লক নেই, ডাউনও নেই। সিলেকটিভ কিছু কিছু জায়গায় হয়তো কিছুটা আছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে কিছুটা হলেও লকডাউন আছে বলে মনে হচ্ছে। আমি করোনার শুরু থেকেই বলে আসছি, ঢালাওভাবে লকডাউন না দিয়ে এলাকাভিত্তিক লকডাউন অনেক বেশি কার্যকর। যেখানে যেখানে সংক্রমণ বেশি, সেখানে যদি বিজ্ঞানসম্মতভাবে লকডাউন দেওয়া যেতো, তাহলে সাফল্যের হার বেশি হতো। জীবন ও জীবিকাও অনেকটা সহজ থাকতো। লকডাউনের মধ্যে ঈদে লাখ লাখ মানুষ বাড়ি গেলো, আবার ফিরেও এসেছে- এতে কি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হয়েছে! তবে লকডাউনে সাফল্য যে নেই তা নয়, আছে। তবে এলাকাভিত্তিক লকডাউন দিলে সাফল্য বেশি মিলতো।

[১৫] লকডাউন দিন, আর যাই করুন- মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বেশি বেশি উদ্বুদ্ধ করুন। মাস্ক পরুন। নিয়মিত হাত ধুতে বলুন। সামাজিক নয়, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন। হাটে-ঘাটে-বাজারে-লঞ্চে মানুষ গায়ের ওপর গা ফেলে চলাফেরা করছে। এটা যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, তাহলে করোনা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপগুলো ভালো সুফল দেবে বলে মনে হচ্ছে না। টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে অবশ্যই টিকা নিতে হবে। এছাড়া আমাদের বাঁচার কোনো পথ নেই।

[১৬] শুধু জনগণকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, প্রশাসনকেও আরেকট নড়েচড়ে বসতে হবে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে। গ্রামে গ্রামে, মহল্লায় মহল্লায় কমিটি গঠন করা যেতে পারে। ছাত্র, শিক্ষক, যুবক, ইমাম সাব, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সকলে সেই কমিটিতে থাকবে। জনগণকে এই কমিটি প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সচেতন করে তুলবে। প্রয়োজনে নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তাও নিতে হবে। জনগণ ও প্রশাসন মিলে যদি জনসম্পৃক্ততা গড়ে তুলতে পারি, তাহলে ‘সো কলড লকডাউন’র চেয়ে তা অনেক বেশি উপকারী হবে বলে আমার মনে হয়।

[১৭] করোনা সংক্রমণ বিশ^ব্যাপী বাড়ছে। অনেক দেশ এখনো লকডাউন দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের অনেকেই মনে করছেন, টিকা নিচ্ছেন, ফলে স্বাস্থ্যবিধি আর মানতে হবে না! টিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে যেমন ছিলো, এখনো মানুষ মাস্ক পরে না, হাতধোয়ার ঠিক নেই, শারীরিক দূরত্ব মেইনটেইন করে না। একটা গা-ছাড়া ভাব সকলের মধ্যে চলে এসেছে, এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর।

[১৮] টিকা নিলে আর করোনা হবে না, এমন মনোভাব সঠিক নয়। টিকা নিলেও করোনা হতে পারে। টিকা শতভাগ প্রটেকশন দেয় না। ফলে টিকা যেমন নিতে হবে, স্বাস্থ্যবিধিও সুন্দরভাবে মানতে হবে। সেনিটাইজার, শারীরিক দূরত্ব যতোটুকু সম্ভব বজায় রেখে যেন সকলে চলে, তাহলেই সংক্রমণ কমবে। স্বাস্থ্যবিধি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সকলকে মেনে চলতে হবে। সংক্রমণ বাড়লে মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়বে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়