তাজমিন হুদা : [২] বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পালের জন্ম ১৮৮৬ সালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মধুরাপুর ইউনিয়নের তারাগুনিয়া গ্রামে। এলাকাটি এখন জজপাড়া নামে পরিচিত। পিতা বিপিন বিহারি পাল।
[৩] কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের ছাতিয়ান গ্রামের গোলাম রহমান পণ্ডিতের কাছে তার শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি। কুষ্টিয়া হাইস্কুলে তিনি মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ১৯০৮ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সিয়াল কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে গণিতে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।
[৪] কর্মজীবনের শুরুতে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে ১৯১১-১৯২০ সাল পর্যন্ত তিনি অধ্যাপনা করেন। ১৯২০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম পাশ করে কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন।
[৫] তারপর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯২৪ সালে। আইন পেশায় নিয়োজিত থেকে ১৯১৩ সালে প্রণীত ভারতবর্ষের আয়কর আইনের সময়োপযোগী সংস্করণ করেন। ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সরকারের আয়কর আইন-সংক্রান্ত উপদেষ্টা ও ইউনিভার্সিটি ল’ কলেজের অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত হন।
[৬] ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক মনোনীত হন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কাজ করেন ১৯৪৪-৪৬ সাল পর্যন্ত।
[৭] তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রায় শেষ, অক্ষশক্তিকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে নুরেমবার্গ এবং টোকিওতে দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। হিটলারের মন্ত্রিপরিষদ এবং যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিচার করা হয় নুরেমবার্গে এবং জাপানের সমরবিদ জেনারেল হিদেকি তোজোর বিচার করা হয় টোকিও ট্রাইব্যুনালে।
[৮] টোকিও ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রধান বিচারপতি ছিলেন ড. রাধা বিনোদ পাল। বিচারের একপর্যায়ে রাধা বিনোদ পাল বাদে অন্য সব বিচারপতি জেনারেল তোজোকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করে ফাঁসিতে ঝুলানোর সিদ্ধান্ত নেন।
[৯] অন্যান্য বিচারপতির ধারণা ছিল, বিচারপতি পালও মিত্রশক্তির পক্ষে অনুগত থাকবেন। কিন্তু বিচারপতি রাধা বিনোদ পালের ৮শ পৃষ্ঠার ঐতিহাসিক রায় মিত্রশক্তি এমনকি বিশ্বকে হতবাক করে দেয়।
[১০] আইনের শাসনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল বিচারপতি পাল পূর্ববর্তী রায়কে বিতর্কিত প্রমাণ করে যুক্তি দেন।
[১১] ড. রাধা বিনোদ পালকে সম্মান জানাতে কুণ্ঠিত করেনি জাপানের জনগণ। জাপানে তার স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য গঠিত হয়েছে পাল ফাউন্ডেশন। তিনি জাপান-বন্ধু ভারতীয় বলে খ্যাতি অর্জন করেন।
[১২] ১৯৬৬ সালে নিহোন বিশ্ববিদ্যালয় রাধাবিনোদ পালকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করে। জাপান সম্রাট হিরোহিতোর কাছ থেকে জাপানের সর্বোচ্চ সম্মানীয় পদক ‘কোক্কা কুনশোও’ গ্রহণ করেছিলেন। [১৩] জাপানের রাজধানী টোকিও তে তার নামে রাস্তা রয়েছে। কিয়োটো শহরে তার নামে রয়েছে জাদুঘর, রাস্তার নামকরণ ও স্ট্যাচু।
[১৪] টোকিও ট্রায়াল টেলিসিরিয়ালটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের ট্রায়াল নিয়ে নির্মিত হলে তার চরিত্রে অভিনয় করেন ভারতীয় অভিনেতা ইরফান খান।
[১৫] তিনি ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।