ডেস্ক রিপোর্ট: জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে। গার্মেন্ট এবং টেক্সটাইল শিল্পে প্রতিযোগিদের তুলনায় জ্বালানি ব্যবহারে আমাদের অবস্থান কোথায় তা নিয়ে সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, তা হলে কি ধরনের উদ্যোগ নিয়ে জ্বালানি খরচ আরও কমিয়ে আনা যাবে তা করা সহজ হবে।
কনিবার স্রেডা ও জিআইজেড এর সহায়তায় এনার্জি এন্ড পাওয়ার আয়োজিত ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ কনসেপ্ট টু প্রমোট এনার্জি ইফিসিয়েন্সে ইন গার্মেন্ট এন্ড টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনার এমন মতামত উঠে আসে। এটি সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ার এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান। আলোচ্য বিষয়ের উপর মূল উপস্থাপনা পেশ করেন জিআইজেড এর রিনিয়েবল এনার্জি অ্যান্ড এনার্জি এফিসিয়েন্সি প্রোগ্রামের সিনিয়র এডভাইজার শফিকুল আলম। আলোচনায় অংশ নেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, সাসটেনেবল অ্যান্ড রিনিয়েবল এনার্জি ডেভলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।
ভিয়েতনামে একই ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন সেখানকার জিআইজেড এর হেড অব কম্পন্যান্ট, এনার্জি এফিসিয়েন্সি মারকুস বিসেল। বাংলাদেশে এই ধরনের কাজের পাইলটিং নিয়ে অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন ডিবিএল গ্রুপের চিফ সাসটেনেবিলিটি অফিসার মোহাম্মদ জাহিদুল্লাহ, মোহাম্মদী গ্রুপের হেড অব অপারেশন মোহাম্মদ রেহান ইদ্রসী।
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, দিনের শেষে আমাদেরকে প্রতিযোগিতা করতে হবে। জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার ও ব্যয় কম রাখা খুবই জরুরি। বিদ্যুৎ বিভাগ এসব ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বস্ত্র ও গার্মেন্ট খাত থেকে ৮৫ শতাংশ রপ্তানি আয় আসে। জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে অনেক শিল্প কাজ করছে, কিন্তু অনেক শিল্পকে এখনো এর আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। অন্তত সহজে যেসব বিষয় অর্জন করা সম্ভব, সেগুলো ব্যবহার করা সম্ভব। বিজিএমই সদস্য কোম্পানিগুলোতে কিভাবে কাজ করা যায়, তার জন্য এমওইউ করা হয়েছে। এতে আরও বেশি কোম্পানি এগিয়ে আসতে পারবে। আগামী দিনে জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার উৎসাহিত করার জন্য কোনো প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দেন।
বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান বলেন, জ্বালানিসহ সকল সম্পদের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করতে গার্মেন্ট সেক্টর সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিজিএমই ৩টি মেম্বার কোম্পানি ওয়ার্কিং গ্রুপ কনসেপ্টে কাজ করছে। আমার বিশ্বাস যৌথভাবে আরও বেশি এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। পরিবেশ সংরক্ষণে বিজিএমই কাজ করছে। বিশ্বের ১০টি প্রথম সারির গ্রিন কারখানার মধ্যে এখন ৮টিই বাংলাদেশে। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তৈরি পোষাক শিল্প জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য অনেক কাজ করেছে। এটাকে আরো এগিয়ে নেয়ার জন্য বিজিএমইএ স্রেডার সাথে একটি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করেছে। এর আওতায় এই ধরনের কাজ আরো সম্প্রসারণ করা যাবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ইজাজ হোসেন বলেন, মূল প্রবন্ধে ২০১৬ সালের তথ্য দেয়া হয়েছে। তার মানে হচ্ছে বর্তমানের অবস্থা জানি না। বাংলাদেশের এটি বড় সমস্যা আমরা ঠিকমতো ডাটা পাই না। অনেক সময় সঠিক তথ্য দেয়া হয় না। আমার প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি ডেটা পাবো। গার্মেন্ট শিল্প একটি বড় সেক্টর, ওয়ার্কিং গ্রুপ কনসেপ্ট গুড কনসেপ্ট, কিন্তু ছোট ছোট কারখানায় কিভাবে বাস্তবায়ন হবে সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল নেই।
স্রেডার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, নেটমিটারিং এর আওতায় সোলার হোম সিস্টেম আমাদের একটি বড় অর্জন। বস্ত্র ও তৈরি পোষাক খাতের কারখানাগুলোতে জ্বালানি দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বর্তমান উদ্যোগ সাফল্য বয়ে আনবে।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী খন্দকার সালেক সুফী বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এনার্জি সাশ্রয়ী বিষয়টি মনিটরিং করতে পারে, তাদের করা উচিত। সাশ্রয়ী এনার্জি নিশ্চিত করা ছাড়া বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. নুরুল ইসলাম বলেন, একটা ডিসিশন অবশ্যই নিতে হবে। এনার্জি ডাটা অবশ্যই প্রতিবছর ঘোষণা করতে হবে। এনার্জি সাশ্রয়ী পাবলিকেশনগুলো পাবলিক করা যায়। যারা কমিটিতে থাকে শুধু তারাই জানবে অন্যদের জানার সুযোগ থাকবে না।
জিআইজেড’র (ভিয়েতনাম) মারকুস বিসেল বলেন, গার্মেন্ট শিল্পে ভিয়েতনাম এখন বিশ্বের পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এই খাতে ৩.৫ মিলিয়ন শ্রমিক কাজ করছে। ৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এই খাতের। ভিয়েতনামের জ্বালানি ব্যয় চীন ও থাইল্যান্ডের তুলনায় ১.৫ থেকে ১.৭ শতাংশ বেশি। ভিয়েতনাম সাশ্রয়ী এনার্জি নিশ্চিত করার জন্য সরকারিভাবে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে জ্বালানি ঘন ৩০টি কারখানায় এনার্জি ওয়াকিং গ্রুপ কনসেপ্ট নিয়ে কাজ শুরুর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
মূল প্রবন্ধে জিআইজেড এর উপদেষ্টা শফিকুল আলম বলেন, বর্তমানে বস্ত্র ও তৈরী পোষাক খাতে ৩৭৪০ কিলোটন ওয়েল ইকুইভ্যালেন্ট (কেটিওই) ব্যবহার হচ্ছে। সকল কারখানায় জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হলে ১১৫৯ কেটিওই জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। স্মল এনার্জি ইফিসিয়েন্সি ওয়ার্কিং গ্রুপ ধারণা নিয়ে দেশের তিনটি কারখানায় যে কাজ শুরু হয়েছে করোনা অতিমারীর মধ্যে তার সাফল্য অনেক। বাংলাদেশের পাশাপাশি একই ধরনের কর্মসূচির আওতায় থাইল্যান্ড ওভিয়েতনামে কাজ শুরু হয়েছে। এই ধরনা দেশের তৈরি পোষাক ও বস্ত্র খাতে কাজে লাগানো সম্ভব হলে জ্বালানির দক্ষ ব্যবহাওে বড় ধরনের সাফল্য বয়ে আনবে। যা বস্ত্র খাত ও তৈরি পোষাক শিল্পের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতেও ভূমিকা রাখবে।