শামীম আহমেদ: আমেরিকা ও কানাডার শিশুদের ফাইজার ভ্যাক্সিন দেয়া শুরু শীঘ্রই। অন্টারিওতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ব্যবহার স্থগিত। ক্যানাডার অন্টারিও (টরোন্টো যেখানে) সরকার প্রথম ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ব্যবহার স্থগিত করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাক্সিন দিলে যে দুর্লভvaccine-induced immune thrombotic thrombocytopenia (VITT) রোগটি হয়, তার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাওয়াতে প্রাদেশিক সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগে প্রতি ১ লক্ষে ১ জন এই রক্ত জমে যাওয়ায় আক্রান্ত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা ১ লক্ষে প্রায় ২ জনে পৌঁছাতে এই সিদ্ধান্তে আসলো সরকার। এছাড়াও ফাইজার এবং মডার্নার ভ্যাক্সিন উল্লেখযোগ্য হারে আসতে শুরু করায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার নিতেই হবে এমন প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে এসেছে। মধ্যেখানে পরিস্থিতি খারাপ হওয়াতে সরকার অ্যাস্ট্রাজেনেকার ব্যবহার বাড়িয়েছিলো। কিন্তু এখন প্রথম ডোজ হিসেবে আর অ্যাস্ট্রাজেনেকা ব্যবহার করা হবে না। তবে যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয় ডোজ নেবে কিনা, সেই বিষয়ে সরকার এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রীকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই বিষয়ে তার মত কী? তিনি বলেছেন, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সক্ষমতা তার নেই। এই সিদ্ধান্ত নেবেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে তিনি নিজে যেহেতু প্রথম ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা নিয়েছেন, তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক তাকে দ্বিতীয় ডোজও অ্যাস্ট্রাজেনেকা নিতে পরামর্শ দিয়েছে। যদি প্রাদেশিক সরকারের দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকে, তবে তিনি দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে হয়তো অ্যাস্ট্রাজেনেকাই নেবেন। তবে হেলথ ক্যানাডা যারা প্রথম ডোজ এস্ট্রাজেনেকা নিয়েছে, দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে তাদের ফাইজার বা মডার্না নেবার অনুমতি দেবার বিষয়টি বিবেচনা করছে। উল্লেখ্য অ্যাস্ট্রাজেনেকায় আস্থা বাড়ানোর জন্য ক্যানাডার শীর্ষ রাজনীতিবিদরা ভ্যাক্সিনটি নিজেরা নিলেও, মানুষের মধ্যে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়েনি। ফলশ্রুতিতে বিপুল সংখ্যক অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাক্সিন অল্প কিছুদিনের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবার আশংকা আছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পর ক্যানাডাও ১২ বছরের অধিক বয়সী শিশুদের শুধুমাত্র ফাইজারের ভ্যাক্সিন নেবার অনুমতি দিয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ১২ বছরের অধিক বয়সী বাচ্চারা ৩১ মে থেকে ফাইজার ভ্যাকসিন নিতে পারবে। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডার মতো ধনী দেশগুলোকে তাদের শিশুদের ভ্যাক্সিন না দিয়ে সেই ভ্যাক্সিনগুলো দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশে পাঠিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেছে। তারা বলেছে শিশুদের মধ্যে করোনা ঝুঁকি খুব বেশি না হওয়ায় এই ভ্যাকসিনগুলো বরঞ্চ ভ্যাকসিন-দারিদ্র্যে ভুগছে এমন দেশে বেশি কাজে আসবে। তবে আমার মনে হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই আহ্বান তাদের করোনাকালীন সময়ের অন্যসব দাবীর মতোই অবান্তর। শিশুদের শুধু ফাইজার ভ্যাক্সিন নেবার অনুমতি দেয়া হয়েছে, এবং যেসব দেশ ভ্যাক্সিন-দারিদ্র্যে ভুগছে, তাদের খুব কম দেশেরই ফাইজার ভ্যাক্সিন সংরক্ষণ করার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আছে। এখানে উল্লেখ করা দরকার, বাংলাদেশে ফাইজার বা মডার্না সংরক্ষণ করা খুবই কঠিন, তাই অ্যাস্ট্রাজেনেকা স্পুটনিক ভি, বা সিনোফার্মাই আমাদের ভরসা। অ্যাস্ট্রাজেনেকার কার্যকরিতা ফাইজার বা মডার্নার চাইতে অনেক কম হলেও এই ভ্যাকসিন করোনায় গুরুতর অসুস্থ হওয়া ঠেকাতে সক্ষম, যা হাসপাতালের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে। উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন না পেলেও ফাইজার এবং মডার্নার পরে রাশার তৈরি ভ্যাকসিন স্পুটনিকের কার্যকারিতাই সবচেয়ে বেশি। লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ