বিশ্বজিৎ দত্ত: [২] কোভিডকালীন সাধারণ মানুষকে ডিজিটাল নগদ সহায়তা প্রদানে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। আর বিশ্বের ১৮৬টি দেশের মধ্যে গরীব মানুষদের নগদ সহায়তা প্রদানে পাকিস্তান রয়েছে চুতুর্থ অবস্থানে। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় কোভিডকালীন নগদ সহায়তায় সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। রিপোর্টে কোভিডে বিভিন্ন দেশের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয়ের হিসাব দেয়া হয়েছে।
[৩] বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ি, নগদ সহায়তায় প্রধান ১০টি দেশ হলো, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, পাকিস্তান, ব্রাজিল, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, ও রাশিয়া। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টটি তৈরী করেছেন, ইউগো জেনটিলিনি তিনি বিশ্বব্যাংকের সামাজিক সুরক্ষা দলের প্রধান।
[৪] রিপোর্টে বিভিন্ন দেশের শুধুমাত্র কোভিডকালীন নগদ সহায়তা ছাড়াও অন্যান্য সহায়তার দিক তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের সহায়তার বিষয়ে বলা হয়, ২০২০ সালের ২০ মার্চ থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত দেশটি বেসরকারিখাতের ব্যবসায়ীদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ হিসাবে দিয়ে সহায়তা করেছে। যাতে মালিকরা শ্রমিকদের বেতন ও ভাতাদি দিতে পারে। খাদ্য নিরপত্তায়, ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করেছে। এ ছাড়া ১ কোটি লোককে ১০ কেজি করে চাল বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। ৫ মিলিয়ন অতিদরিদ্র লোককে ১২৫০ টাকা করে এককালীন নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
[৫] পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বলা হয়, পাকিস্তানের এহেসাস নগদ সহায়তা প্রোগামে কোভিড পরিস্থিতিতে দেশটির ৮০ শতাংশ লোক উপকৃত হয়েছে। অনলাইনে যে কেউ এই প্রোগাম থেকে সহায়তা নিতে পারেন। জাতীয় পরিচয়পত্র, ইউটিলিটি বিল, চাকুরিহীন বা কর্মহীন কিনা, আয়কর দেয়ার সক্ষমতাসহ কিছু তথ্য অনলাইনে দিতে হয়। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এই তথ্যগুলোর সঠিকতা যাচাই করে স্বয়ক্রিয়ভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির মোবাইলে নগদ চলে যায়। পাকিস্তান গত এক বছরে এই এহেসাস প্রোগ্রামের মাধ্যমে ৯৫ মিলিয়ন ব্যাক্তির প্রতিজনকে ১২ হাজার রুপি নগদ সহায়তা দিয়েছে।
[৬] এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, নগদ সহায়তা প্রদানে পাকিস্তানের সিস্টেমটি ভাল। এ বিষয়ে তিনি আগেই সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যার সহায়তা দরকার সে সরকারের একটি নির্দিষ্ট নাম্বরে তার সহায়তার আবেদন করবে। পরে এগুলো যাচাই করে বিশেষ করে মোবাইলেই তার কাছে নগদ সহায়তা চলে যাবে। কারণ অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা আগে কর্মরত ছিলেন। কোভিডের কারণে এখন কর্মহীন হয়েছেন। তারা হয়তো লজ্জায় সরকারের বিভিন্ন দান নিতে চাচ্ছেন না। এই প্রক্রিয়ায় তারা উপকৃত হবেন।
[৭] সিপিডির সম্মানিত ফেলো, অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোভিডে দেশে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ লোক নতুন করে গরিব হয়েছেন। সিপিডি প্রস্তাব করেছিল, এদের প্রতি জনকে নগদ ৮০০০ টাকা করে দিতে। যতদিন কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি না হয় ততদিন এই সহায়তা মাসিকভিত্তিতে চালু রাখার জন্যও বলেছিলাম।
[৮] বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ১৬৯ মিলিয়ন বাক্তিকে ১২ হাজার ডলার করে নগদ সহায়তা দিয়েছে, জাপান ১১৭ মিলিয়ন, ব্রাজিল, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার ও রাশিয়া প্রধান ১০টি নগদসহায়তাকারী দেশ ৬৪ মিলিয়ন থেকে ২৩ মিলিয়ন লোককে নগদ সহায়তা দিচ্ছে।