ডেস্ক রিপোর্ট : আমেরিকা সহ খ্রিস্টানদের একটা অংশ কেন ইহুদীদের ইজরাইল প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে? হাদিসে আছে, দাজ্জালের অনুসারীদের অধিকাংশই হবে ইহুদী। কেন? কারণটা খুবই ইন্টারেস্টিং। তার আগে বলে রাখা ভালো, দাজ্জালের ব্যাপারে খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনেকটা মুসলমানদের মতোই। বিশেষ করে ইভ্যাঞ্জেলিক্যাল খ্রিস্টানদের।
ইভেঞ্জেলিক্যালরা বিশ্বাস করে, যীশু বা ঈসাই হচ্ছেন মাসিহ বা মেসায়াহ, এবং শেষ জমানায় তিনি আবার দুনিয়াতে আসবেন। এবং সে সময় একজন ফলস মেসায়াহ বা অ্যান্টি ক্রাইস্টের আবির্ভাব ঘটবে। এবং এই ট্রু ক্রাইস্ট এবং অ্যান্টি ক্রাইস্টের মধ্যে আর্মাগেডন বা মহাযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হবে।
অর্থাৎ মোটের উপর তাদের বিশ্বাস আমাদের মতোই। কিন্তু তারা আরেকটা বাড়তি জিনিস বিশ্বাস করে এবং সেটা হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক সংকটের অন্যতম প্রধান একটা কারণ। ইভ্যাঞ্জেলিক্যালরা বিশ্বাস করে, যীশুর আগমন কেবল তখনই ঘটবে, যখন বনী ইসরায়েলের বংশধররা পবিত্র ভূমিতে গিয়ে একত্রিত হবে।
আর ঠিক এ কারণেই তারা মনেপ্রাণে চায়, দুনিয়ার সব ইহুদীরা ইসরায়েলে গিয়ে বসতি স্থাপন করুক, যেন তাদের বিবলাক্যাল ভবিষদ্বাণী বাস্তবায়িত হয়, এবং তাদের জীবদ্দশাতেই যীশু পুনরায় পৃথিবীতে আসে, অ্যান্টিক্রাইস্টকে পরাজিত করে, এবং তাদেরকে নিয়ে স্বর্গে চলে যায়!
এবং এ কারণেই বিশ্বের সবচেয়ে হার্ডলাইন জায়নিস্টদের অনেকেই ইহুদী না, বরং ইভেঞ্জেলিক্যাল খ্রিস্টান! উদাহরণস্বরূপ আমেরিকার কথা বলা যায়। আমেরিকার ইহুদীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশই জায়নিস্ট না। কিন্তু আমেরিকার ইভ্যাঞ্জেলিক্যাল খ্রিস্টানরা ইসরায়েলের সবচেয়ে কট্টর সমর্থক।
কিন্তু ইভেঞ্জেলিক্যালদের এই ব্যাপারটা পুরোই আয়রনিক। তারা ইহুদীদেরকে ইসরায়েলে পাঠাতে চায় তাদের কল্যাণের জন্য না, বরং ধ্বংসের জন্য! তারা চায় দুনিয়ার ইহুদীরা সব ইসরায়েলে গিয়ে জড়ো হোক, যেন যীশু পৃথিবীতে এসে সেই ইহুদীদেরকেই ধ্বংস করতে পারে!
কথা হচ্ছে, ইহুদীরা কি তাদের এই ষড়যন্ত্র বোঝে না? উত্তরটা হচ্ছে, বোঝে ঠিকই। কিন্তু তাতে তাদের কিছু যায়-আসে না। কারণ ইহুদীদের অধিকাংশই মাহদির আগমনে বা যীশুর পুনরাগমনে কিংবা দাজ্জালের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। ইভ্যাঞ্জেলিক্যালরা তাদেরকে ইসরয়েলে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে, তাতেই তারা খুশি।
ইহুদীদের ধর্মবিশ্বাসেও অবশ্য শেষ জামানায় একজন মাশিয়াখ বা মাসিয়াহ বা মেসায়াহ আসার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তাদের মতে এই মাসিহ কোনো ধর্মীয় নেতা হবেন না, তিনি হবেন "মালাখ" মাশিয়াখ, তথা কিং মাসিহ।
অর্থাৎ তিনি হবেন একজন ভবিষ্যত রাজা, দাউদ (আ) এর একজন উত্তরসূরী। তিনি সুদিন বয়ে আনবেন, ইহুদিদেরকে কিংডম অফ ডেভিড ফিরিয়ে দিবেন, তাদের টেম্পল পুনর্নিমান করে দিবেন।
এ কারণেই ইহুদীরা মেসায়াহ'র ধর্মসংস্কার নিয়ে আগ্রহী না, তারা আগ্রহী একজন রাজার আবির্ভাবের। এবং এ কারণেই ঈসা (আ) যেহেতু রাজা ছিলেন না, নিছক ধর্মপ্রচারক ছিলেন, তাই তারা তার ধর্ম গ্রহণ না করে উল্টো রোমান সম্রাটের কাছে গিয়ে তার নামে বিচার দিয়েছিল।
বর্তমানকালের ইহুদীদের মধ্যে শুধুমাত্র অর্থোডক্সরাই মেসায়াহর আগমনে বিশ্বাস করে। এবং সেটা তারা বেশ গভীরভাবেই করে। মধ্যযুগে ইহুদীদের প্রধান ধর্মগুরু বা চীফ র্যাবাই ছিলেন একজন আরব, মুসা ইবনে মাইমুন। তিনিই সর্বপ্রথম জুইশ কোড লিপিবদ্ধ করেছিলেন।
তিনি মোট ১৩টি পয়েন্টে ইহুদীদের মূল ধর্মবিশ্বাসকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন। এই পয়েন্টগুলোর মধ্যে ১২ নম্বর পয়েন্টটা হচ্ছে, "আমি পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করি মাসিহ-এর আগমনে। যত দেরিই হোক, আমি প্রতিদিন তার আগমনের জন্য অপেক্ষা করি।"
এবং এটাই আজও অর্থোডক্স ইহুদীদের ধর্মবিশ্বাস। তারা আজও অপেক্ষায় আছে যেকেনো মুহূর্তে হয়তো মাসিহ-এর আগমন ঘটবে। এই অর্থোডক্সদের মধ্যে একটা গ্রুপ আছে, যারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, মাসিহ-এর আসার সময় হয়ে গেছে। এবং তারা একাধিকবার একাধিক র্যাবাইকে মাসিহ বলে বিশ্বাসও করে ফেলেছিল।
কাজেই সত্যি সত্যিই যখন দাজ্জাল আসবে, এবং ইসফাহানের ইহুদীদের বা বনী ইসরায়েলের বংশধরদের একটা গোত্রের মধ্য থেকেই আসবে, তখন এটা মোটেও আশ্চর্যজনক না যে, তার অনুসারীদের অধিাকংশই হবে সেই অর্থোডক্স ইহুদীরা, যারা এরকম একজনের অপেক্ষায় প্রহর গুণছিল।
এবং যেহেতু ইহুদীদের ধর্মবিশ্বাসে দাজ্জাল বা ফলস মেসায়াহ'র কোনো অস্তিত্ব নাই, তাই তারা কোনো চিন্তাভাবনা না করেই সেই ফলস মেসায়াকেই ট্রু মেসায়া বলে বিশ্বাস করে তার দলে যোগ দিবে।
-মোজাম্মেল হোসেন
আপনার মতামত লিখুন :