ডেস্ক রিপোর্ট: টাঙ্গাইলের নাগরপুরে জালিয়াতির মাধ্যমে অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির অভিযোগ উঠেছে সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজায়েত আলীর বিরুদ্ধে। প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধারা (ভারতীয় তালিকাভুক্ত ও মুক্তিবার্তা লাল) এ অভিযোগ করেছেন। আর টিভি
সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা (প্রয়াত) খন্দকার আব্দুল বাতেনের ছত্রছায়ায় থেকে সুজায়েত অর্থের বিনিময়ে তার আত্মীয়স্বজনসহ অনেককেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন বলে দাবি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে (স্মারক নং-১২৭) নাগরপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের একটি দাপ্তরিকপত্র (মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা) কৌশলে হস্তগত করে নিজ প্রভাব খাটিয়ে ওই পত্রটি হাতে হাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌঁছে দেবার কথা বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজায়েত। ইউএনও প্রেরিত পত্রে হাতে লেখা অতিরিক্ত আরও ৩৪ জনের নাম কলম দিয়ে লিখে সংযুক্ত করে সুজায়েত তালিকাটি প্রেরণ করেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে। সেখানে দেখা যায়, ইউএনও সিফাত-ই-জাহান স্বাক্ষরিত পত্রে মূলত প্রেরণ করেছিলেন ১২৯ জনের নামের তালিকা। সেখানে সুজায়েত দাখিল করেছেন ১৬৮ জনের নামের তালিকা।
নাগরপুরের সাবেক উপজেলা কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ গোলাম সরয়ার হোসেন (ছানা), সাবেক উপজেলা কমান্ডের সদস্য মোঃ আব্দুল করিম, সাবেক ইউনিয়ন কমান্ডার মোঃ গিয়াস উদ্দিন, সহকারী ইউনিয়ন কমান্ডার গয়হাটা মোঃ আব্দুর রশিদ খান আরটিভি নিউজকে জানান, টাকার বিনিময়ে জালিয়াতি করে অতিরিক্ত ৩৪ জনের নাম হাতে লিখে ইউএনও প্রেরিত ১২৯ জনের তালিকা বর্ধিত করে ১৬৮ জনের তালিকা পাঠিয়েছেন সুজায়েত। যা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার। যে কারণে তারা নাগরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবে গত ১৪ এপ্রিল (বুধবার) এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাবেক উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোকাদ্দেস আলী।
সংবাদ সম্মেলন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোকাদ্দেস আলী বলেন, সুজায়েত নিজে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। প্রশিক্ষণ গ্রহণে ব্যর্থ হয়ে ভারতের যুব ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বরের পরে প্রায় ৪-৫ হাজার যুবক দেশে ফেরত আসেন এবং তাদের সঙ্গে দেশে ফিরে আসেন সুজায়েত। ভারতীয় তালিকাভুক্তি ও মুক্তিবার্তা লাল এ দুটোর এক জায়গায়ও তার নাম নেই। সে নিজেকে কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার দাবি করতো অথচ কাদেরিয়া বাহিনীর তালিকায়ও তার নাম নেই।
জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাতেন বাহিনীর প্রধান সদ্যপ্রয়াত খন্দকার আব্দুল বাতেনের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। যার সুবাদে তার সহযোগিতায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা বনে যান। শুধু তাই নয়, খন্দকার আব্দুল বাতেনের ছত্রছায়ায়, উপজেলা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার পদে প্রতিষ্ঠিত হয়ে একের পর এক প্রতারণা জালিয়াতিসহ অবৈধভাবে বিভিন্ন খাত থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা পয়সার মালিক হতে থাকেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে সহোদর নাবালক ছোট ভাই, ভগ্নিপতিসহ অনেক ব্যক্তিকে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে মুক্তি বার্তায় তালিকাভুক্তি করেন। ঐ সময় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ৩৫০ জনের স্থলে ৭১৫ জনকে মুক্তিবার্তায় তালিকাভুক্ত করেন। ফলে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার চেয়ে অমুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে যায়। যার খেসারত এখনও গুণতে হচ্ছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত-ই-জাহান এর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি আরটিভি নিউজকে জানান, আমি বিষয়টি অবগত হওয়ার পর জামুকার ডিজি স্যার এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করি। পরবর্তীতে জামুকার ডিজি স্যার, কিভাবে সরকারি দপ্তরের গোপন কাগজপত্র তার কাছে গেল এবং কিভাবে তিনি এই অতিরিক্ত ৩৪ জনের নাম এখানে কলমের মাধ্যমে সংযোজন করলেন, ঐ তালিকা কিভাবে মন্ত্রণালয়ে জমা হলো, তা জানতে চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে সুজায়েত সাহেব লিখিত জবাব দিয়েছেন। যা আমি ডিজি স্যারকে পাঠিয়েছি। এখন ডিজি স্যার যে পদক্ষেপ নিতে বলবেন, আমি সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
অভিযুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সুজায়েত হোসেন বলেন, আমি রাজনীতির শিকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যত কাগজপত্র সাধারণত হাতে হাতেই দেয়া হয়। যখন যে মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা যান, তার হাতেই কাগজগুলো পাঠানো হয়। ঐদিন আমার এক সহযোদ্ধা হানিফ খান, তার ব্যক্তিগত কাজে ঢাকা যাচ্ছিলেন, যা আমি জানতাম। আমার একটি ব্যক্তিগত কাজে ইউএনও অফিসে গেলে, ইউএনওর সিও হারুন অর রশিদ আমাকে বলেন, আপনারা কেউ ঢাকা যাবেন কিনা? তখন আমি হারুনের কাছ থেকে কাগজগুলো গ্রহণ করি এবং ইউএনও অফিস সংলগ্ন চায়ের দোকানে বসে থাকা সহযোদ্ধার হাতে পৌছে দেই।
অতিরিক্ত ৩৪ জনের নামের বিষয়ে তিনি জানান, এটা ২০২১৬/১৭ সালের দিকে যাচাই-বাছাইকৃত লিস্ট। ঐ ৩৪ জনও বাছাইকৃত তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা বলে তিনি দাবি করেন।