বিশ্বজিৎ দত্ত: বেগম খালেদা জিয়া কোথাও বলেননি তিনি বিদেশে চিকিৎসা নিতে চান। আবার এমনও নয় যে তিনি একেবারে কথাই বলছেন না। তিনি কোভিড থেকে সুস্থ্য হওয়ার পর দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মাস্ক পড়ার। দ্বিতীয়বার কোভিড পরবর্তি উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পরেও বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানেও তিনি কখনো উল্লেখ করেননি তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে। কিন্তু বিএনপির মাহসচিবসহ অন্যান্য নেতারা দাবি করছেন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো দরকার।
এই বিদেশ পাঠানোর তোড়জোড়ের মধ্যে বিএনপির উত্তরাধিকারের বিষয়টি জড়িত রয়েছে এমন ধারণাও অমুলক নয়। আসলে বেগম খালেদা জিয়া কার সঙ্গে থাকবেন। এটি কি তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের সাহচর্যে নাকি দেশে ককোর বিধবা স্ত্রী শর্মীলা রহমানের সাহচর্যে।
বিএনপির নেতৃবৃন্দ স্পষ্টভাবেই বলছেন, জোবায়দা রহমান একজন চিকিৎসক বেগম জিয়া লণ্ডনে চিকিৎসা নিলে তার তত্ত্বাবধানে থাকলে ভাল থাকবেন। বিএনপি নেতৃবৃন্দ এই মনোভাব প্রকাশ করলেও খালেদা জিয়া বিষয়ে অন্য আরেকটি ‘দল’ গঠন হয়েছে। সেটি তার পরিবার। সরকার এ বিষয়ে পরিবারের মতামত চাচ্ছে। এখন পরিবার কারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরিবার কারা এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া তা কখনো করেননি। কিন্তু খালেদা জিয়ার কারগারে থাকা, বাসায় একা থাকার এই সময়ে তার নিকট আত্মিয়ের যারা উনার খোঁজ খবর নিয়েছেন। আপাতত তাদেরকেই পরিবারের লোক হিসাবে ধরা যেতে পারে।
এখানে সর্বাগ্রেই রয়েছেন শর্মিলা রহমান। তিনিই খালেদার বর্তমান সঙ্গি। তাছাড়া অনুগত বউ হিসাবেও শর্মিলা ইতিমধ্যে স্থান করে নিয়েছেন খালেদা জিয়ার মনে। পৃথিবীর যেকোন দেশের শাশুড়ি মাতাই অনুগত পুত্র বধুদের একটু বেশি পছন্দ করেন। এটি ভারতের সোনিয়া গান্ধির বেলায় যেমন সত্য তেমনি বৃটিশ রাজ পরিবারেও সত্য।
১৯৮০ সালে বিমান দূর্ঘটনায় সঞ্জয়গান্ধীর মৃত্যুর পর মানেকা গান্ধী অনুভব করলেন তিনি আর গান্ধী পরিবারে স্থান পাচ্ছেন না। তাই ৩ বছরের বরুনকে নিয়ে ১৯৮২ সালে গঠন করেছিলেন রাষ্ট্রিয় সঞ্জয় মঞ্চ। ইন্দিরা সেই দিনই পাইলট রাজীব গান্ধিকে রাজনীতিতে আসার বার্তা দিয়েছিলেন স্ত্রী সোনিয়ার মাধ্যমেই। সেই সোনিয়াই এখন কংগ্রেসের সভাপতি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছেন এমন বিষয় কখনো বিএনপির অন্দর মহলে শোনা যায়নি। তার চেয়ে বিএনপিতে আলোচনা হয়েছে তারেক জিয়ার পরিবর্তে জোবায়দা রহমানকে দিয়ে বিএনপির হাল ধরার। আলোচনা আছে অপেক্ষাকৃত স্মার্ট, সুন্দরি ও শিক্ষিত জোবায়দা রহমান বিএনপির হাল ধরলে বিএনপিতে প্রাণ ফিরে আসতে পারে। তাই জোবায়দাও হয়তো চাচ্ছেন খালেদা জিয়ার অসুস্থ্য সময়ে তাকে নিজের কাছে রাখতে। যার মাধ্যমে জোবায়দা হয়তো চাইবেন শাশুড়ির কিছুটা মনও জয় করতে। আবার এই প্রক্রিয়ায় শর্মিলার কাছ থেকেও খালেদাকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে।
তারেক ও জোবায়দার এই বিষয়টি হয়তো টের পান খালেদা জিয়া। তাই কখনো নিজ থেকে বলেননি বিদেশে চিকিৎসা নিতে চান। তিনি হয়তো পছন্দ করেন অনুগত শর্মিলার কাছেই থাকতে। শর্মিলাও কখনো সংবাদ মাধ্যমে বলেনি খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দিতে হবে। তার চেয়ে তিনি নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন খালেদার। শাশুড়ির অনুগত বউ শর্মিলা প্রতাপশালী ভাসুরের বলয়ের বাইরে কতটা কি করতে পারবেন তা হয়তো ভবিষ্যৎ বলবে। কিন্তু কে জানে সেই হয়তো আগামী দিনের বিএনপির কান্ডারি। যেমন কেউ জানতো না ইতালির মেয়ে সোনিয়া একদিন কংগ্রেসের সভাপতি হবেন।