আমিরুল ইসলাম : বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অক্সফামের এক জরিপে ওঠে এসেছে করোনায় দেশের ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে, ৮৬ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে ও ৭৮ শতাংশ মানুষ তাদের খরচ কমিয়েছে। এ বিষয়ে জানাতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, সিপিডি ও অক্সফামের জরিপের পুরো পদ্ধতি ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। পরিস্থিতি এতোটা খারাপ সেটা অন্যান্য যে সমস্ত সূচক আছে, সেগুলো দিয়ে বোঝা যায় না। কারণ এটি একটি সাময়িক বিষয় হতে পারে, কিন্তু এটা এভাবে প্রকাশ করা এবং এ নিয়ে একটি ভীতি তৈরি বিবেচনাপ্রসূত হচ্ছে না। নিঃসন্দেহে আয়-রোজগারের ওপর প্রভাব পড়েছে, কিন্তু এর জন্য যে ধরনের গবেষণা দরকার সেরকম ইনডেফ্থ বা নিগূঢ় গবেষণা এখনো হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ ম্যাক্রো অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে যে, অর্থনীতি অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে তিনি আরও বলেন, অর্থনীতিতে ঘুড়ে দাঁড়াবার যে সংস্কৃতি সেটা কিন্তু আমাদের বেশ শক্তিশালী। বিশেষ করে এখনো প্রায় ৬০ শতাংশ গ্রামের আয় কৃষির বাইরে। যে সমস্ত গরিব মানুষ গ্রামে ফিরে গেছেন, তারা কিন্তু সে সমস্ত কাজে অংশগ্রহণ করতে পারছেন। গ্রামে করোনা পরিস্থিতি এতোটা খারাপ নয় বলে মানুষ আয়-রোজগার করে খাচ্ছে। গ্রামের বোরো চাষের সময় মজুরি কমেছে বলে আমরা দেখিনি। যদি এতো মানুষ কর্মহীন থাকতো, তাহলে তারা সকলে গিয়ে ধানকাটা শুরু করতো। তখন মজুরি কমে যেতো। গ্রামে মজুরি কমে গেছেÑ এরকম কোনো খবর আমরা পাইনি। এছাড়া সরকার তার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী, ত্রাণ মন্ত্রণালয় সবাই মিলে চেষ্টা করছে। সরকার হাঙ্গার হটলাইনও করেছে। মানুষ যেকোনো সময় বিপদে পড়লে সরকার তার পাশে দাঁড়াচ্ছে। এরকম একটি সময়ে এ ধরনের ভীতিকর তথ্য দিয়ে আমরা খুব দায়িত্বশীল গবেষক হিসেবে কাজ করছি বলে মনে হয় না।
করোনকালীন সংকটকে আমি খাটো করে দেখছি না। করোনার কারণে স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো উঠে এসেছে এবং স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গে দারিদ্র্যের একটি সম্পর্ক আছে। যদি কোনো পরিবারের প্রধান হঠাৎ করে মারা যান, তাহলে সে পরিবার সঙ্গে সঙ্গে দারিদ্ররেখার নিচে পড়ে যায়। আমাদের স্বাস্থ্যখাতের ওপর গুরুত্ব আরও অনেক বাড়াতে হবে।
আমরা লক্ষ্য করছি যে, স্বাস্থ্যখাতে গড়পড়তা বাজেটের প্রায় ৫ শতাংশ দেওয়া হয়। এটা মোটেও কাক্সিক্ষত নয়। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত মিনিমাম বাজেটে ১০ শতাংশ। সেটা এ বছর না পারলেও বাজের অত্যন্ত ৭ শতাংশ দেওয়া উচিত। এবারের বাজেটটি হতে হবে মূলত স্বাস্থ্যবাজেট। তবে বাজেট দিলেও যথেষ্ট না। স্বাস্থ্যবিভাগকে অনেক বাজেট দেওয়া হয় যেটা সবসময় তারা খরচ করতে পারে না। ঠিক জায়গায় ও ঠিকমতো খরচ করতে পারে না। বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ যেন ঠিকমতো খরচ করা হয়, তার জন্য একটি ভালো মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত। অর্থাৎ খরচ হচ্ছে কী হচ্ছে না তার একটি ডিজিটাল মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত। অর্থমন্ত্রণালয়কে এই মনিটরিং করতে হবে। কারণ অর্থমন্ত্রণালয় যে অর্থ দিচ্ছে সেটা আদৌ খরচ হচ্ছে কিনা, ঠিকমতো খরচ হচ্ছে কিনা সেটা দেখার একটা ব্যবস্থাও কিন্তু নিতে হবে। তা না হলে মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ এরকম করে নষ্ট হয়ে যায় সেটা স্বাস্থ্য বিভাগের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে না।
তিনি বলেন, দুর্যোগকালে সরকারের সঙ্গে আমাদের সকলেরই একসঙ্গে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হবে। একথা ঠিক সামনে খুব চ্যালেঞ্জিং সময় আসছে। বিশেষ করে আমাদের প্রতিবেশী দেশের আশে পাশের রাজ্যগুলোতে করোনা প্রকোপ বাড়ছে। আমাদের সীমান্ত দিয়ে বেশ কিছু করোনা রোগী সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেজন্য যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। করোনার নতুন হুমকি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি থাকা উচিত। সরকার এবং সরকারের বাইরে যারা আছে সবাই মিলে দুর্যোগকালে আমরা একজন আরেকজনের দোষ না ধরে কীভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারি, সেটি হওয়া উচিত সবচেয়ে বড় কথা। সম্পাদনা : রেজা