ড: মোহাম্মদ আখেরুজ্জামান: আমাদের দেশের অনেক ভাই ও বোনেরা কর্মের উদ্দেশ্যে দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে প্রবাসে বসবাস করে। কিন্তু তারা যেখানেই থাক না কেন, মন পরে থাকে ছোট বেলায় বেড়ে উঠা সেই চিরচেনা গ্রাম বাংলার পথে প্রান্তে। প্রতিটি সময় তারা মিস করতে থাকে চিরদেনা অনুষ্ঠান গুলো। এরমধ্যে আমাদের মুসলমানদের জন্য রোজা এবং ঈদ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসষ্ঠান যেখানে আছে নানা আয়োজন, নানা রকমের দেশী খাবারের পসরা।
বিশেষ করে যারা ননমুসলিম দেশে থাকেন তাদের জন্য রোজা হচ্ছে শুধুই নিজের ইবাদতের বিষয়। না আছে মসজিদে আযানের শব্দ, না আছে সেহেরির ডাকাডাকি, না আছে ইফতারির আগে মসজিদের কোরআন তেলাওয়াতের সুর। কোন রকম একটা রোজার সময়সূচী ঘরের মধ্যে অথবা মোবাইল ফোনে রেখে নিজ দায়িত্বে সেহেরী এবং ইফতার করা। বর্তমানে ইন্টারনেট সহজ হওয়াতে আর যাই হোক ঈদের দিনে রোজা রাখা হয় না। কয়েক বছর আগেও যোগাযোগ ব্যবস্থা কারণে অনেক প্রবাসী ঈদের দিন রোজা রেখে বিকেল বেলায় জানতে পারত আজ ঈদ।
এছাড়াও ননমুসলিম দেশে বসবাসরত প্রবাসী মুসলমানদের জন্য কর্মস্থলে ইফতারের সময় হলেও কোন রকম আযানের শব্দ কানে আশে না। নিজের ঘড়ি অথবা মোবাইল দেখে বিসমিল্লাহ বলে কোন রকমের খেজুর আর পানি মুখে দিয়ে ইফতার করা। কিন্তু সকল বাঙ্গালির চোখে সামনে তখন ভাসতে থাকে ছোলা, পিয়াজু, আলুর চপ, বেগুনী, জিলাপি,আর কানের মধ্যে বাজতে থাকে মামা হালিমের ডাকাডাকি। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ মিটিং থাকলে সময়মত পানি মুখে দেওয়ার সুযোগটাও পাওয়া কঠিন হয়ে পরে। তবে সপ্তাহের যেদিন ছুটি থাকে সেদিন প্রতিটা মসজিদে থাকে নানা আয়োজন। বিভিন্ন দেশের ইফতারি দিয়ে নানা স্বাদে চলে ইফতারি ভোজন। তবে বাংলাদেশীদের ইফতারি আয়োজনে দেখা মেলে আমাদের চিরচেনা ছোলা, মুড়ি, বেগুনী, চপ, হালিম, এবং সাথে থাকে বিরিয়ানি কিংবা পোলাও। আবার অনেক সময় কয়েকটি বাঙ্গালী পররিবার মিলে ঘরোয়া ইফতারির আয়োজনও চোখে পরে বন্ধের দিনে। সাথে থাকে কচি কাচাদের সূরা কেরাতের প্রতিযোগীতাও।
জাপান একটি ননমুসলিম দেশ এখানেও অনেক মুসলমান বসবাস করে যাদের বেশীর ভাগই বিদেশী। এখানে বিদেশী মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় ইবাদত করার জন্য প্রায় ২৫০টির মত মসজিদ তৈরি করেছে। জাপানের এই সকল মসজিদ গুলো বাংলাদেশের মসজিদের মত সকল কার্যক্রম ছাড়াও ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে জাপানীদের দাওয়াত করা হয় এবং জাপানীদের কাছে ইসলাম ধর্মের পরিচয় তুলে ধরা হয়। এতে করে অনেক জাপানীজ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। অনেক জাপানীজ আছে নতুন মুসলমান হয়ে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ইবাদত করে থাকে। তবে জাপানের প্রায় সকল মসজিদেই পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা আছে। তবে গত বছর করোনার কারণে জাপানের সকল মাসজিদে ইফতার এবং তারাবীহ না হলেও এবছর সীমিত আকারে নামাজের পরিচালনা হচ্ছে। কিন্তু প্রতি বছরের মত শনিবার এবং রবিবারের ইফতার পার্টি সহ সকল বড় আয়োজন বন্ধ আছে।
রোজা হচ্ছে মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং অনুষ্ঠানও বটে। বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশীদের ইফতারিতে থাকে নানা ধরণের খাবারের পসরা। যেমন বিকেল বেলায় চকবাজারের ইফতারির মহরা, মামা হালিমের ডাকাডাকি, ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, চপ, পিয়াজু, এবং নানা ধরণের জিলাপি। মাসজিদের শহর ঢাকার প্রতিটি মাসজিদেও চলে ধর্মপ্রান মুসলমানদের ইফতারির মহা আয়োজন। কিন্তু গত বছের থেকে করোনা নামে মহামারি মুসলমানদের রোজাকে করে দিয়েছে নিরামিষ। না আছে ঢাকা শহরের সেই ইফতারির সাজসজ্জা, না আছে মসজিদের সেই ইফতারি, তারাবী, মিলাদের মহরা। আজ আমরা পৃথিবীতে সবাই করোনার কারণে চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে গেছি। পবিত্র রোজার মাস উপলক্ষ্যে আল্লাহ কাছে আমাদের প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন আমাদের এই মহা বিপদ থেকে হেফাজত করুণ।
ডঃ মোহাম্মদ আখেরুজ্জামান
টোকিও, জাপান
আপনার মতামত লিখুন :