শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০১ মে, ২০২১, ০৩:৫৭ রাত
আপডেট : ০১ মে, ২০২১, ০৩:৫৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফকির আলমগীর: ধনকুবেরদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সমাজতন্ত্র গড়ে তোলার শপথের দিন

ফকির আলমগীর: মে দিবস আসলে শোষণমুক্তির অঙ্গীকার, ধনকুবেদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সমাজতন্ত্র গড়ে তোলার শপথ নেওয়ার দিন। কীভাবে এই দিনটি পরিণত হলো। মেহনতি মানুষদের এই আন্দোলনের পথ কখনও মসৃণ ছিল না। ছিল নানা ঘটনার ঘাতপ্রতিঘাতে মোড়া। জুলুম, অত্যাচার, প্রতিরোধ, ধর্মঘট, মিছিল, সংগ্রামের কাহিনি রয়েছে এই দিনটার পেছনে। ১৮৮১ সালে নভেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আমেরিকান ফেডারেশ অব লেবার’। ১৮৮৪ সালের ৭ অক্টোবর সেখানে চতুর্থ সম্মেলনে গৃহীত হয় এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, বলা হয় ১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে সব শ্রমজীবী মানুষ আট ঘণ্টার বেশি কোনওভাবেই কাজ করবে না। ওই দিনটিতে তাই পাঁচ লক্ষ শ্রমিক প্রত্যক্ষভাবে ধর্মঘটে যোগ দেন। শাসকদল এই ঐক্যবদ্ধ বিশাল শ্রমিক সমাবেশ ও ধর্মঘট দেখে ভয়ে পিছিয়ে যায়। ৩ মে ম্যাককর্মিক হার্ভাস্টার কারখানায় নির্মম পুলিশি আক্রমণ চলে, তাতে প্রাণ হারান ৬ জন নিরীহ শ্রমিক। সেই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এর পরের দিন অর্থাৎ ৪ মে হে মার্কেট স্কোয়্যারে আয়োজিত হয় এক বিশাল প্রতিবাদ সভা। পুলিশ এই সভায় গুলি চালালে শহিদের রক্তে রাঙা হয় হাতের পতাকা। গ্রেপ্তার করা হয় চারজন শ্রমিক নেতাকে। বিচারের নামে শুরু হয় প্রহসন, জারি করা হয় ফাঁসির আদেশ। দেশকালের গণ্ডি পেরিয়ে এই নৃশংস বর্বরতার খবর পৌঁছয় দুনিয়ার সব মেহনতি শ্রমজীবি মানুষের কানে। ১৮৮৯ সালে জুলাই মাসে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথমদিনের অধিবেশনেই সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয় যে ১৮৯০ সালে ১ মে থেকে প্রতি বছর শ্রমিকশ্রেণির আন্তর্জাতিক সংহতি, সৌভ্রাতৃত্ব ও সংগ্রামের দিন হিসেবে এই দিনটি পালিত হবে। এভাবেই ১৮৮৬ সালের ঐতিহাসিক মে দিবস ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক মে দিবসে পরিণত হলো।

তাবৎ দুনিয়ায় করোনা ভাইরাস মহামারিতে সংকটে পড়েছে, এর ধারাবাহিকতায় গত বছরেও ১ মে’র সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হয় এ বছরেও সেই করোনা ক্রান্তিকাল চলছে। এরপরও একটি মানবিক পৃথীবি গড়ার লক্ষ্যে সকলের প্রতি আহ্বান থাকবে এই ‘মে দিবসে’। এই দিবসটি সৃষ্টি হয়েছে আন্দোলন সংগ্রাম ও রক্তদানের মধ্য দিয়ে। এতো বছর পরেও শ্রমিকদের জীবনে শোষণ, বঞ্চনা, অসাম্য, দুর্নীতি আজও রয়েছে। রানা প্লাজা ট্রাজিডির ৮ বছর চললেও আজ শ্রমিকরা স্বজনদের ছবি বুকে নিয়ে কেঁদে ঘরে ফেরে, অনেক শ্রমিক কেমিকেল গোডাউনের আগুনের পুড়ে মারা গেছেন, শিশু শ্রম বন্ধ হয়নি, শ্রম বৈষম্য রয়েছে, ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার হরণ করা হয়েছে, এমনি একটি পরিস্থিতি বা পরিবেশে এসেছে মে দিবস। অর্থাৎ মে দিবস অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠার দিন, মে মানে প্রতিবাদের ভাষা, মে মানে দুনিয়া কাপানো স্লোগানের দিন, মে মানে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। চলমান করোনা মহামারিতে সবকিছু বন্ধ এরপরও কারখানা বন্ধ থাকেনি শ্রমিকদের পরিশ্রম করতে হচ্ছে। দিন দিন সারা বিশ্বে ধনী-গরিবের ব্যবধান বেড়েই চলছে, শোষণ বঞ্চনা বাড়ছে। এর মধ্যে বড় বিপর্যয় হিসেবে করোনা ক্রান্তিকাল এসেছে। চলমান সংকটেও শ্রমিকদের প্রতি অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার বন্ধ হয়নি। করোনা মহামারিতে  শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষাণা করা হলেও এই অর্থ মালিকরা পেয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ শ্রমিক সেই অর্থ পায়নি। অথচ গার্মেন্টস মালিকরাই নেতা, মেয়র, এমপি, মন্ত্রী হয় তারা দামি গাড়ি-বাড়ি ব্যবহার শ্রমিকের রক্তগামা পরিশ্রমের অর্থ দিয়ে, এরপরও এই শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি পায় না, কথা বললে শ্রমিকদের গ্রেপ্তার করা হয় বা কর্মী ছাঁটাই করা হয়।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৮ বছর পার হলেও এর সুষ্ঠু বিচার বা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। এই ট্র্যাজেডির স্থানে স্মৃতিচারণের লক্ষ্যে কোনো স্মৃতি সৌধও স্থাপন করা হয়নি। এতো বাম সংগঠন, শ্রমিক নেতা, এতো সংগঠন থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ক্ষতিগ্রস্ত বা ভুক্তভোগী শ্রমিকরাই ছবি বুকে রাজপথে নামে ও একটি অস্থায়ী স্মৃতিস্থাপনায় ফুল দেয়। এই দুর্ঘটনা বা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায় কী কেবলই তাদের দায়িত্ব কারখানার মালিকদের কী কোনো দায়িত্ব নেই? শুধু কারখানা খুলে দিলেই হবে না, ৮ ঘণ্টা কর্ম, ৮ ঘণটা বিনোদন, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম কী নিশ্চিত হয়েছে তাদের। এছাড়া শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার পায়নি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা পায়নি, কর্মপরিবেশ নেই, শিশুও নারী  শ্রম নিয়োগ বন্ধ হয়নি, নারী শ্যমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রতিষ্ঠা হয়নি। পরিচিতি : গণসংগীতশিল্পী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবদুল্লাহ মামুন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়