তৈয়বুর রহমান, কুমিল্লা থেকে : [২] করোনায় কুমিল্লায় বেড়েছে পেশা পরিবর্তন। বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকে অফিস ছেড়ে পথে নেমে এসেছেন।
[৩] কুমিল্লা নগরীর বাদুরতলায় রেস্তোরাঁ ছিল জামালের। রেস্তোরাঁটিতে সাধারণ শ্রেণি ও শ্রমিক শ্রেণির মানুষের জন্য তিন বেলা ভাত রান্না করতেন তিনি। ছোট রেস্তোরাঁয় জমজমাট ব্যবসা চলছিল তার। গত বছর লকডাউনের শুরুতে তার রেস্তোরাঁটি বন্ধ হয়ে যায়। আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বিপাকে পড়েন তিনি। বাবা-মা-স্ত্রী-সন্তানসহ পাঁচজনের সংসার চালানো, শহরে দোকান ভাড়া দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি।
[৪] দোকান খোলার সুযোগ নেই, তার ওপর করোনার অনিশ্চয়তা-এসব চিন্তা করে সময়োপযোগী কিছু করার চিন্তা করেন জামাল। তারপর ভাড়া নেন ভ্যান। শুরু করেন ভ্রাম্যমাণ তরকারির দোকান। প্রায় এক বছর ধরে তরকারির ব্যবসা করছেন তিনি।
[৫] নগরীর অলিতে গলিতে ভ্যান নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে তরকারি পৌঁছে দেন। বর্তমানে দিনে ৮০০টাকা আয় হয় তার। জামাল বলেন, এতে করে কোনো রকমে কেটে যায় তার।
[৬] জেলার নাঙ্গলকোটের আল আমিন মিঠু। ঘরে এক শিশু সন্তান, স্ত্রী আর মা রয়েছেন। পুরান ঢাকায় জুতার কারিগরের কাজ করতেন। গেল বছর লকডাউনে জুতা তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় গ্রামে এসে কিছুদিন কর্মহীন ছিলেন।
[৭] পরে জীবিকার তাগিদে শুরু করেন রাজমিস্ত্রীর কাজ, যে কাজ আগে কখনো করেননি তিনি। লকডাউন তুলে নেওয়ার কিছুদিন পর আবার ঢাকায় পাড়ি জমান। ডিসেম্বর থেকে কাজে দারুণ গতি আসে। প্রতিদিন গড়ে এক হাজার টাকার কাজ হচ্ছিল।
[৮] রমজানে দিনে ১৫০০টাকার কাজ হওয়ার আশা ছিল। কিন্তু পুনরায় লকডাউনের ফলে আবার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন গ্রামে এসে ধানকাটা শ্রমিকের কাজ করছেন তিনি।
[৯] মিঠু জানান,‘ স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য রমজানের আয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অন্যান্য মাসের ঘাটতি কেটে যায় রমজান মাসে। কিছুদিন পর হয়তো লকডাউন তুলে নিবে। কিন্তু এসময়ে ঢাকায় গিয়ে কাজ করার সুযোগ আর নেই। লকডাউন তুলে নিলেও রমজানে আর কাজ করার সুযোগ থাকছে না।’
[১০] মেধাবী ছাত্র পলাশ। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে পারায় বাবা বকা দেন। রাগ করে পড়ালেখা ছেড়ে বাহরাইন চলে যান তিনি। সেখানে একটি ফোর স্টার হোটেলে বয়ের কাজ নেন। ২০২০ সালের ১৪ মার্চ ছুটিতে দেশে ফিরে আসেন। কিছুদিন পরে দেশে শুরু হয় লকডাউন। অনেকবার বাহরাইন ফেরত যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
[১১] এদিকে জুন মাসে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তার। তারপর গ্রাম ছেড়ে কুমিল্লায় শহরের অশোকতলার একটি মেসে ওঠেন। সেখান থেকে কাজ নেন রেডেক্সের অনলাইনে পণ্য ডেলিভারির কাজে। মাসে ১৫দিন কাজ করেন। আয় হয় গড়ে ১৫০০টাকা।
[১২] পলাশ জানান,‘ আয় মোটামুটি ভালো হলেও এখানে পরিশ্রম অনেক বেশি। বাবা স্ট্রোক করে ঘরে পড়ে আছেন। উপার্জনের আর কেউ নেই। তাই বাধ্য হয়ে এ কাজ করছি। তবে এ পেশায় বেশিদিন টিকে থাকা কঠিন হবে।’ সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ