আহসান হাবিব : দুপুরে কয়েক মিনিটের জন্য বেরিয়েছিলাম কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য। দেখলাম লকডাউনের আগে যেমন দেখেছি- রাস্তায় মানুষ, যানবাহন, দোকানপাট- সব তেমনি আছে, লকডাউনের কোনো চিহ্ন চোখে পড়লো না। একটা ভিডিও দেখলাম সেখানে দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ কথা বলছে। তাদের সবার বক্তব্য লকডাউন মানি না। কেন? তারা বলছেন, করোনা তাদের হবে না, হবে যারা বড়লোক ঘুষ খায়, এসি রুমে থাকে, তাদের। তারা বাইরে প্রখর রোদের নিচে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করে উপার্জন করে দিন চালায়। তারা বলেন, লকডাউনে সরকার কি তাদের খাওয়াবে, এক ছটাক চাল দেবে, দেবে না। সুতরাং লকডাউন তারা মানবে না।
কাদের হয় করোনা? সবার হয়, ধনী নির্ধন সবার, তবে সাধারণ পর্যবেক্ষণ বলছে খেটে খাওয়া মানুষের করোনা সংক্রমণের হার নগন্য। এটার বৈজ্ঞানিক কি কারণ তা গবেষণার বিষয়। যারা প্রধানত কায়িক পরিশ্রম করে না, সেই মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের বেশি হচ্ছে করোনা, এটার কারণ কি তাও বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয়। এই শ্রেণিটার রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি ডিজিজ, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত থাকে বেশি, তাদের ইমিউনিটি থাকে ভঙ্গুর। অন্যদিকে যারা কায়িক পরিশ্রম করে জীবিকা চালায়, তাদের এসব রোগ প্রায় নেই। তাদের শরীরে ভিটামিন ডি থই থই করে যা করোনার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে, এটা বৈজ্ঞানিকভাবেও দেখা গেছে। তাহলে সাধারণ পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে করোনা একটা শ্রেণিগত রোগ। এই পরিস্থিতিতে লকডাউনের ফলে কারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? কায়িক খাটা মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ সহজ- তারা দিনে এনে দিন খাওয়ার জন্য যে কাজ সেটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অপরপক্ষে ওই মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের কোন ক্ষতি হচ্ছে না, তাদের জমানো টাকায় দিন গৃহে উপভোগ করছে। কিছুর প্রয়োজন হলে এই লকডাউনে বেরিয়ে সংগ্রহ করতে পারছে। আক্রান্ত হলে চিকিৎসা সেবা নিতে যেতে পারছে।
এই সুযোগ খেটে খাওয়া মানুষের নেই। আবার তারা সরকারি অনুদানও পাচ্ছে। অর্থাৎ এই শ্রেণির অর্থনৈতিক কোনো ক্ষতি নেই, সব ওই দরিদ্র খেটে মানুষদের। আর লাভবান হচ্ছে কারা? এই করোনার মধ্যেও দুর্নীতি থেমে নেই। চলছে হরিলুট। কারা করছে? ভিডিওতে দেখা ওই মানুষগুলোর মতোই বলছি- যারা এসিতে ঘুমায়, তারাই এই হরিলুটের হোতা। সব লাভ তাদের। তাহলে ওই মানুষগুলো লকডাউন মানবে কেন? মানবে তখনই যখন তারা তাদের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় খাদ্যের নিশ্চয়তা পাবে। সরকার কি নিশ্চয়তা বিধান করেছে? করেনি। রোগপ্রতিরোধ, নিম্ন আয়ের মানুষদের প্রতি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে সরকার আদৌ আন্তরিক নয়, প্রতিরোধের নামে একটা লোক দেখানো জগাখিচুড়ি মার্কা ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে, লকডাউনের নামে যথেচ্ছ হয়রানি চলছে।
আমার প্রস্তাব : [১] হয় লকডাউন তুলে দিন, দিয়ে মানুষকে বলে দেওয়া হোক কী করলে করোনা হয়, কী কী ব্যবস্থা নিলে রোগ থেকে বাঁচা যাবে। কে মানবে কে মানবে না তা মানুষ নিজে নির্ধারণ করুক
[২] না হয় লকডাউন এমনভাবে দিন যাতে নিম্ন আয়ের মানুষের খাওয়া নিয়ে চিন্তা না করতে হয়। আর আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার দিকে নজর দিন। শুধু শুধু ‘ভাত দেয়ার মুরোদ নাই, কিল মারার গোঁসাই’ হয়ে ছড়ি ঘুরাবেন না। লেখক : উপন্যাসিক