শিরোনাম
◈ চট্টগ্রাম বন্দরে সাইফ পাওয়ার টেকের যুগের অবসান, এনসিটির দায়িত্বে নৌবাহিনী ◈ ১ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজের খেলায় তালেবান, পেছনে চীন-রাশিয়া-ইরান-ভারত! ◈ পাকিস্তানকে ঠেকাতে গিয়ে ভারতে বন্যা, তোপের মুখে কঙ্গনা (ভিডিও) ◈ ৫ আগস্ট লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার জাতীয় সংসদ: নাহিদ ইসলাম (ভিডিও) ◈ গাজীপুরে মহানগর বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার ◈ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় জনগণ ঐক্যবদ্ধ : মির্জা ফখরুল ◈ রেস্ট হাউজে ‘নারীসহ’ ওসি, আটক করে ‘চাঁদা দাবি’ ছাত্রদল নেতার, সিসিটিভির ফুটেজ ফাঁস ◈ আর একটি হত্যাকাণ্ড ঘটলে সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ: হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের ◈ ধামরাইয়ে ঋণ দেওয়ার কথা বলে গৃহবধুকে ধর্ষণ, আসামী গ্রেফতার ◈ গাজীপুরে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার বিএনপি নেতা স্বপন

প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল, ২০২১, ০৬:৪০ সকাল
আপডেট : ২০ এপ্রিল, ২০২১, ০৬:৪০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডা. জাকারিয়া চৌধুরী: নৌ কিংবা স্থল সর্বক্ষেত্রে আমাদের যুদ্ধের জীবন

ডা. জাকারিয়া চৌধুরী: ১ম বিশ্বযুদ্ধ চলছে। জার্মান যুদ্ধ জাহাজ বহর রাশিয়ান জাহাজ 'এডমিরাল'কে তিন দিক দিয়ে ঘিরে ফেলেছে। ৪র্থ দিক বলতে অথৈ সাগর। এডমিরাল সেই পথ ধরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু জার্মান ফ্রিগেটগুলোর গতি রাশান শিপের প্রায় দেড় গুন বেশি। এডমিরালের ক্যাপ্টেন সাদা ফ্ল্যাগ হাতে তার জাহাজের স্টার বোর্ডে দাঁড়িয়ে গেছেন। কারন তার জাহাজ আর আধা কিলো দুরেও চালিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। জার্মানরা রাশানদের পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য পথে হাজার হাজার মাইন ভাসিয়ে এবং এক থেকে দেড় মিটার পানির নিচে ডুবিয়ে রেখেছেন। পুরো শিপটি ধ্বংস হয়ে যাবার জন্যে একটি মাত্র মাইনের বিস্ফোরন-ই যথেষ্ট। জার্মান'রা যেভাবে চেয়েছে রাশানদের ফাঁদে ফেলতে তারা ঠিক সেভাবেই ফাঁদে পা দিয়েছে। এ সময় জাহাজ ক্রু'রা দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ল। একদল পরাজয় স্বীকার না করে যুদ্ধ করে দেশের জন্যে প্রান দেবে তো ক্যাপ্টেন সহ অন্যরা ভাবছে এটা হবে স্রেফ বোকামি।

ঠিক এ সময় একটা মিরাকল ঘটে গেলো। একজ ন জুনিয়র ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে অল্প কয়েকজন নাবিক জাহাজের ক্যাপ্টেনকে ধরে তাঁর হাতে থাকা সাদা ফ্ল্যাগটা দিয়ে তাকে বেঁধে ফেলল। জাহাজকে স্ট্যান্ডবাই করে, কয়লার কালো ধোয়ায় চারপাশ অন্ধকার করে ফেলল। জার্মান ফ্রিগেট গুলো ভাবতেও পারেনি যে, রাশান'রা তাদের জাহাজ থামিয়ে স্থির দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা পুর্ন গতিতে এগিয়ে এসে নিজেরা-ই নিজেদের মাইনের উপর এক প্রকার আত্মহুতি দিলো। রাশিয়ান যুদ্ধ জাহাজ এডমিরাল সেদিন বেঁচে গেলো, ভুবলো জার্মানী সেও নিজেদের ফাদে-ই।

অপারেশন স্ট্যালিনগ্রাড

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়। হিটলারের নামে বিশ্ব কাঁপে। পৃথিবীর সকলে-ই জানে অক্ষ শক্তির জয় হবে। আমেরিকান জিওনিস্ট, আমেরিকা, ব্রিটেন সহ অল্প কিছু দেশের অল্প কিছু মানুষ জানে যুদ্ধে কে জয়ী হবে। ১৭৫'০০০ দক্ষ লোকবল নিয়ে অত্যন্ত সংগোপনে ১৯৪২ সালে ম্যানহাটন প্রজেক্টে হাত দেয় আমেরিকা । যে খবর ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া সহ মিত্র শক্তির কাছে ছিল সম্পুর্ন গোপন। মি রবার্ট ওপেনহাইমার ছিল বিশ্ব ধংসের এই কারখানা নির্মানের প্রধান হোতা। আমেরিকা ইউরেনিয়াম ২৩৫ আইসোটোপের কাজে হাত দিয়েছে- শুধু এটুকু জানাজানি হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা হতে পারতো প্রকৃত সংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ। তারা কাউকে জানায়নি। এমনকি জার্মানী যখন স্ট্যালিনের সাথে করা অনাক্রমন চুক্তি লংঘন করে রাশিয়া অভিযান চালায় তখন এক স্ট্যালিনগ্রাড ছাড়া রাশিয়ার প্রায় সকল গুরুত্বপুর্ন স্থান দখল করে ফেলেছিল জার্মানী। মিত্র শক্তি হিসেবে স্ট্যালিনগ্রাড রক্ষার দায় থেকে সরে আসতে পারে না আমেরিকা, ব্রিটেন সহ পুরো বিশ্বশক্তি। অথচ শীতল এক নীরবতার মধ্য দিয়ে রাশিয়া দখল করে নিল জার্মানী যাদেরকে প্রতিরোধের মত রাশিয়ার যে পরিমান সেনা ছিল সে পরিমান রাইফেল ছিল না। অন্যদিকে সে সময় আমেরিকা প্রায় ২৭০০০ হাজার গোপন পরীক্ষা চালায় ( সরকারী হিসেবে ১০৫৪টি ) ইউরেনিয়ামকে কিভাবে ফাটানো যায় সেই পথ আবিস্কার করতে। রাশানরা যখন মার খাচ্ছিলো তখন মিত্র শক্তি হয়েও তাদের এ নিরবতার কারন কি জানেন ? আমেরিকা জানে, বিশ্বের সাথে অক্ষ শক্তি জিতবে না। এক সময় না এক সময় তাদেরকে হারতে-ই হবে। কিন্তু কমিউনিজমের উত্থান তারা ঠেকাবে কি করে ? এক রুবলে সে সময় মিলে যাচ্ছে দুই মার্কিন ডলার এবং ডলারের দর পতন ক্রমাগত হারে নিচের দিকে-ই যাচ্ছে। এ থেকে বাচার পথ কি ? বাচার পথ হচ্ছে জার্মানী যখন রাশিয়া দখল করবে তখন আমেরিকা ও তাদের বন্ধুদের কাজ হবে রাশিয়ায় জার্মানীর ঢোকার পথ সহজ করে দেয়া। আমেরিকা সে কাজ করেছিল কিনা জানিনা, কিন্তু তারা যে নিরোর মত চুপচাপ বাশি বাজিয়ে গেছে তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। তা না হলে রাশিয়ার মত বিশাল শক্তিধর দেশের সব শহর প্রায় বিনা বাঁধায় দখল হয়ে যায়, রাশিয়ান জেনারেলরা লজ্জায় নিজের মাথায় নিজে-ই পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করতে থাকেন তা কি করে হয় ?

জোসেফ স্ট্যালিন শেষমেশ এক রকম নিরুপায় হয়ে তাঁর পলিটিক্যাল এডভাইজার মি নিকিতা ক্রুশ্চেভকে পাঠালেন স্ট্যালিনগ্রাড পতন ঠেকাতে। ক্রুশ্চেভ সেখানে গিয়ে-ই স্বাক্ষাত করলেন তাঁর সেনা প্রধানের সাথে। সেনা প্রধান কাঁদো কাঁদো গলায় সব কিছুর ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন। কিন্তু এতোকিছু শুনতে আগ্রহী ছিলেন না মি ক্রুশ্চেভ। তিনি তাঁর পিস্তলটা বের করে সেনা প্রধানের হাতে দিয়ে এই বলে বের হয়ে আসেন যে- এই পিস্তল দিয়ে এখন আপনাকে কি করতে হবে তা আপনি ভাল ভাবেই জানেন। যুদ্ধের ময়দানে সেনা প্রধানের এমন আত্মহত্যার ঘটনা খুবই বিরল। সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ( বিশেষত স্ট্যালিগ্রাড রক্ষার যুদ্ধে ) রাশিয়ায় প্রান হারান ২৭ মিলিওন মানুষ। সাধারন জনতা ও সেনা মিলে। পুরো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সারা পৃথিবীতে এতো মানুষ প্রান হারায়নি যত মানুষ প্রান হারিয়েছে শুধুমাত্র রাশিয়ায়। এর অন্য একটা কারন শুধুমাত্র আঁচ করা যায়। রাশিয়ান সেনাদেরকে যুদ্ধে পাঠিয়ে ক্রুশ্চেভ জানতেন তাঁর টি-৮৪ ট্যাংক গড়ে ১৭ টি ধ্বংস হয় জার্মানীর একটি টাইগার ট্যাংককে বিধ্বস্ত করতে। ফলে যুদ্ধের মাঝপথে হাল ছেড়ে দিয়ে রাশিয়ানরা দলে দলে পালাতে পারে। এ জাতীয় ঘটনার কথা-ই বর্ননা করেছিলেন তাদের সেনা প্রধান। ক্রুশ্চেভ দ্বিতীয় আরেকটা যোদ্ধাদল মজুদ রাখলেন বেজ ক্যাম্পে এবং সাফ জানিয়ে দিলেন- যারাই পিছু হটবে তারা মরবে বেজ ক্যাম্পের যোদ্ধাদের গুলিতে। যাকে আপনারা সেইম সাইড বলেন কিংবা ফ্রেন্ডলি ফায়ারিং যা-ই বলেন, সে রাতে এবং পরদিন প্রাতে সবচে বেশি রাশান যোদ্ধা প্রান হারিয়েছিল রাশানদের গুলিতে।

 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যা ঘটেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও তা-ই ঘটল। পার্থক্য শুধু রুপ আর ধরনের ভিন্নতায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি নিজেদের ফ্রিগেট নিয়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল নিজেদের পাতা মাইনে আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশান যোদ্ধারা বেশিরভাগই মরল রাশানদের মেশিনগানের গুলিতে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধেও হয়তো এমন-ই কিছু ঘটবে রুপের ভিন্নতা নিয়ে। আমি প্রায়ই অটল বিহারী বাজপায়ী'র একটা লাইন উচ্চারন করি বিভিন্ন লেখায়। তা হচ্ছে- রাজনীতি কো-ই বাচ্চে কো খেইল নেহি হ্যায়। যা ঘটেছে তা-ই ঘুরে ফিরে ঘটে। হয়তো রুপ বদলায়। হয়তো দুই দিনের জায়গায় চারদিন লাগায়। হয়তো রকমের ফের হয়।

 

গল্পের শুরুতে-ই একটা কথা বলেছিলাম- রাশিয়ার জাহাজটি কালো ধোঁয়ায় নিজেকে আবৃত করে সবার অলক্ষ্যে চলে গিয়েছিল। আমাদের দেশের রাজনীতিতেও কিংবা টেলিভিশন টকশো'তে, সংসদে কিংবা স্থায়ী কমিটির বৈঠক গুলোতে কখনো কোরাম সংকট দেখা দেয় তো কখনো কোরামের কারনে অন্যায়ের প্রতিষ্ঠা হয়ে যায়। সত্য কাঁদে নিভৃতে।  যারা মিডনাইট ইলেকশন করে দম্ভ করে বলতে পারে- আমরা পারি, তারা পারে না কেনো ? তারা জানে না- ইলেকশনের কোন মিডনাইট বিধান বা ভার্সন নেই। তারা ভুলে গেছে তাদেরকে ইতিহাস মোকাবেলা করতে হবে। আমরা যেমন প্রতিদিন ফেসবুকের পাতা খুলে-ই দেখি অন্যান্য বছরের এই দিনে আমি কি কি করেছিলাম তেমনি তারা হয়তো দেখে না, অথবা দেখলেও বলেনা অথবা না দেখার ভান করে থাকে। যার যেমন খুশি সে তেমন-ই থাকুক।

 

বলি কি ,মানুষ ইতিহাসকেও মাথায় রাখুক। আর রাজনীতিতে যারা ধোঁয়াশা তৈরী করে রাখে এবং নিজেকে সবার কাছেই প্রিয় পাত্র রাখতে সচেষ্ট থাকে তারা-ই জানিয়ে দেয় টাকাটা কার একাউন্ট থেকে গেছে অথবা কে অসতী হয়েছে অথবা কাকে মাইনাস করতে হবে। মুর্খ গরু ছাগলের কথা যখন আঞ্চলিক রাজনীতিতে মুখ্য হয়ে উঠে, শিক্ষিত চৌকশ লোকদের অবমুল্যায়ন করা দলীয় রীতিতে পরিনত হয়, আপনারা কি করে ভাবেন অসম্মান নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে অসম্ভব যোগ্য কেউ আপনাদের ফরমায়েশি পদে রাজনীতি করবে ?

ডা. জাকারিয়া চৌধুরী: ডেন্টাল সার্জন, কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়