লিহান লিমা: [২] করোনা ভাইরাস মহামারী শুরুর পর থেকেই ভোক্তারা নিজেদের অর্থনৈতিক খরচের খাত সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। গত এক বছরে বিশ্বজুড়ে এই গ্রাহকরা বাড়তি ৫.৪ ট্রিলিয়ন ডলার সঞ্চয় করেছেন। যা মহামারী পরবর্তীতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম খোলার সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ের শক্তিশালী প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত করবে। ফিনেন্সিয়াল টাইমস
[৩]ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি মুডি জানায়, সবচেয়ে বেশি সঞ্চয় হয়েছে গৃহস্থালী খাতে। ২০১৯ সালে ব্যয়ের ধরণের তুলনায় গত বছর এই খাতে বাড়তি সঞ্চয়ের পরিমাণ এই বছরের প্রথম প্রান্তিকের শেষের দিকে হওয়া বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদনের ৬ শতাংশেরও বেশি।
[৪]সংস্থাটি জানায়, এই সঞ্চয় বিশ্বব্যাপী ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে যে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসলে তারা দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট ও বারে আবারো প্রয়োজনমতো ব্যয় করতে পারবেন।
[৫]মুডি অ্যানালিটিকসের প্রধান মার্ক জান্দি বলেছেন, ‘দমিয়ে রাখা চাহিদা ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সঞ্চয়ের কারণে যখন দেশগুলো হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করবে তখন বিশ্বজুড়ে ভোক্তাব্যয় রেকর্ড করবে।’ এই বছরের প্রথম প্রান্তিকে বৈশ্বিক ভোক্তা আস্থা সূচক বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলেই ২০০৫ সালের তুলনায় সর্বোচ্চ দেখা গিয়েছে।
[৫]যদি ভোক্তারা তাদের অতিরিক্ত সঞ্চয়ের এক তৃতীয়াংশ ব্যয় করেন তবে বৈশ্বিক আউটপুট এই বছর ও পরবর্তী বছর ২ শতাংশ বাড়বে। গত বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি পড়লেও উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে সরকারী প্রণোদনা পরিবারগুলোকে সুরক্ষিত রেখেছে। সেই সঙ্গে চাকরি ও আয়ের অনিশ্চয়তায় এবং বিধি-নিষেধের কারণে অনেক ব্যবসা বন্ধ থাকায় ভোক্তারা ব্যয় কমিয়েছেন। ওইসিডি জানায়, এই কারণে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে গৃহস্থালী সঞ্চয় গত এক শতাব্দীতে রেকর্ড করেছে, অনেক দেশে ব্যাংক আমানতও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
[৬]সবচেয়ে বেশি সঞ্চয় হয়েছে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের মতো উন্নত দেশগুলোতে। সেখানে লকডাউনে সরকারী ব্যয় ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছিলো। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি গৃহস্থালী সঞ্চয় হয়েছে। এবং এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গৃহীত ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজের পূর্বেই। মধ্যপ্রাচের দেশগুলোতেও সরকারী প্রণোদনা সঞ্চয় বাড়াতে কাজে দিয়েছে। তবে মহামারীর আঘাত ও অপর্যাপ্ত সরকারী সহায়তার কারণে অন্য অঞ্চলগুলোর তুলনায় এশিয়ায় সবচেয়ে কম সঞ্চয় হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা ও পূর্ব ইউরোপের সঞ্চয়ের হারও কমতির দিকে ছিলো। অর্থাৎ আর্থিক সঞ্চয়ের প্রায় পুরোটাই হয়েছে ধনী দেশের ধনী পরিবারগুলোতে।
[৭]মর্নিং কনসাল্টের সমীক্ষায় দেখা যায়, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর এক তৃতীয়াংশেরও বেশি ধনী পরিবারের যে পরিমাণ সঞ্চয় হয়েছে তা মহামারী পরবর্তী বৃহত্তর ব্যয়ের সুযোগ করে দেবে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানায়, ব্রিটেনের তিন-চতুর্থাংশ পরিবার নিজেদের সঞ্চয় পরিকল্পনা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাকিরা তাদের সঞ্চয় ঋণ পরিশোধ বা বিনিয়োগের জন্য রাখার পরিকল্পনা করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :