কামরুল ইসলাম বাবু: [২] দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষিত হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মাছের ডিম সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত জেলেরা। এপ্রিল থেকে জুন- এই তিন মাস ধরা হয় প্রজনন মৌসুম। এ সময়ের মধ্যে বজ্রপাতসহ মুষলধারে বৃষ্টি হলে প্রাকৃতিকভাবে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ) মা মাছ।
[৩] ইতোমধ্যে নদীতে মা মাছের আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বেড়েছে গাঙ্গেয় ডলফিনের আনাগোনাও। চলতি প্রজনন মৌসুমের যে কোনো সময় ডিম ছাড়তে পারে মা মাছ। এটিকে মাথায় রেখে মাটির কুয়া তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।
[৪] রাউজানের বাড়ি ঘোনা ডিম সংগ্রহকারী মোঃ ইলিয়াছ জানিয়েছেন, চলতি বছর ডিম সংগ্রহের জন্য যা যা উপকরণ প্রয়োজন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি এখন অপেক্ষার পালা।
[৫] সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, হাটহজারীতে ডিম সংগ্রহকারীদের ২৫টি গ্রুপ ৭০টি মাটির কুয়া, রাউজানে ২৭টি গ্রুপ ৭৫টি মাটির কুয়া প্রস্তুত করেছেন।
[৬] সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মৎস্য মন্ত্রণালয় হালদা নদীর তীরের রাউজান অংশে পশ্চিম গহিরা, গহিরা মোবারকখীল, কাগতিয়ায় ৩টি এবং হাটহাজারীর মদুনাঘাট বড়ুয়া পাড়া হ্যাচারী, উত্তর মাদার্শায় শাহ মাদারি ও মাদার্শায় মাছোয়া ঘোনা হ্যাচারীসহ মোট ৬টি হ্যাচারী নির্মাণ করা হয়েছিল। এরমধ্যে রাউজানের কাগতিয়া, পশ্চিম গহিরার হ্যাচারী ২টি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
[৭] রাউজান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, দুই উপজেলার ৬টি হ্যাচারী রয়েছে। রাউজান অংশের ৩টি সরকারি হ্যাচারীর মধ্যে দুইটি অনুপযোগী। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুধু মাত্র মোবারকখীলের হ্যাচারীটি। এই হ্যাচারীতে ডিম থেকে রেনু ফোটানোর সুবিধা পাবেন মাত্র ১৫ থেকে ২০ জন ডিম সংগ্রহকারী। ৬’শ থেকে ৮’শ কেজি ডিম থেকে রেণু ফোটানো যাবে বলেও জানান তিনি।
[৮] তিনি আরও বলেন, রাউজান অংশে অনুপযোগী থাকা হ্যাচারি দুটি নতুনভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। করোনার কারণে প্রকল্পটি পিছিয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
[৯] চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর ড. মনজুরুল কিবরিয়া আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, মা মাছ সাধারণত আমবস্যা-পূর্ণিমায় অথবা অষ্টমী তিথিতে নদীতে ডিম ছাড়ে। হালদা নদী থেকে সংগ্রহ নিষিক্ত ডিম হ্যাচারী ও মাটির কুয়ায় দুই পদ্ধতিতে ফোটানো হয়। তবে হ্যাচারীর চেয়ে মাটির কুয়ায় উৎপাদিত রেণু উৎকৃষ্ট মানের হয়। গতবার আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি, সেটা হচ্ছে মাটির কুয়ার পানি লবণাক্ত হওয়ায় মাটির কুয়ায় ডিম নষ্ট হয়েছে। মাটির কুয়ায় অভিজ্ঞতা আর পরিশ্রম অনুযায়ী ডিম থেকে রেণু উৎপাদনের পরিমাণ কম-বেশি হয়। হ্যাচারীতে নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে ডিম ফোটানো যায় না, মাটির কুয়ায় ক্ষেত্রে আনলিমিটেড ডিম ফোটানো সম্ভব।
[১০] উল্লেখ্য গত বছর সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করেন ডিম আহরণকারীরা। গত ৩ এপ্রিল একটি ৭ কেজি ওজনের আঁইড় মাছের মৃত্যু ছাড়া ২০২১ সালে হালদা নদীতে গাঙ্গেয় ডলফিনের মৃত্যু না হলেও ২০২০সাল পর্যন্ত ২৮টি ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। সম্পাদনা: হ্যাপি