সুজন কৈরী: [২] করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ বুধবার সকাল থেকে রাজধানীতে কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে বিধিনিষেধ। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাড়ির বাইরে বের হলেই পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে বের হওয়া ব্যক্তিদের। কোথাও কোথাও মাইকিং করে মানুষজনকে সচেতন করছে পুলিশ।
জরুরি প্রয়োজন ও মুভমেন্ট পাস ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
[৩] বিধিনিষেধের প্রথম দিন বুধকার সকাল থেকে রাজধানীর কোনও সড়কেই গণপরিবহণ দেখা যায়নি। জরুরি সেবার কাজে নিয়োজিত গাড়ি ছাড়া তেমন কোনও গাড়িও দেখা যায়নি। তবে অলিগলিতে রিকশা, মোটরসাইকেল ও সাইকেল চলাচল করতে গেছে। এছাড়া লোকজনেরও চলাচল রয়েছে। কোথাও কোথাও তিন চারজন মিলে আড্ডা ও খোশগল্পে মেতে থাকতে দেখা গেছে।
[৪] আর প্রধান সড়কে রিকশা বা মোটরচালিত অটোরিকশা নিয়ে বের হলেই ডাম্পিংয়ে পাঠাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ বা করা হচ্ছে রিকশার চাকা পাংচার।
[৫] বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর তেজগাঁও, হাতিরঝিল, নতুন বাজার, শাহজাদপুর, বাড্ডা, লিংকরোড ও গুলশান-১ নম্বর ঘুরে দেখে গেছে, প্রধান সড়কের মোড়ে মোড়ে রয়েছে পুলিশি চেকপোস্ট। সড়কে যান চলাচল বন্ধ। তবে দুয়েকজনকে হেটে চলাচল করতে দেখা গেছে। জরুরি সেবায় নিয়োজিত বাহন ছাড়া রাস্তা ফাঁকা। তবে জরুরি প্রয়োজনে কয়েকজনকে বাইরে বের হতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে মুভমেন্ট পাস আছে কি না চেক করছে পুলিশ।
[৬] ভাটারা থানার এসআই সাইদুল ইসলাম বলেন, বিধিনিষেধ যেন সবাই মেনে চলে সেলক্ষ্যে কাজ করছি। নির্দেশনা মানতে সবাইকে অনুরোধ করছি। মুভমেন্ট পাস ছাড়া কেউ বের হলে তাদের বুঝিয়ে বাসায় ফেরত পাঠাচ্ছি। তবে এখন পর্যন্ত মানুষ ভালোভাবে বিধিনিষেধ মানছেন।
[৭] এদিকে গুলশান-১ নম্বর মোড়ের প্রবেশপথে গুদারাঘাটে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। চেকপোস্ট অতিক্রমের সময় সব গাড়ি ও মানুষকে আটকাচ্ছে পুলিশ। এ সময় পুলিশ তাদের কাছে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইছে। জরুরি প্রয়োজন মনে না হলে তাদের পুলিশ অনুরোধ করে ফিরিয়ে দিচ্ছে। আর যাদের কাছে মুভমেন্ট পাস আছে তাদের ছেড়ে দিচ্ছে।
[৮] গুলশান থানার এসআই মো. স্বপন বলেন, বিধিনিষেধের সময় সরকার যেসব নিয়ম বেঁধে দিয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছি। মুভমেন্ট পাস ছাড়া কেউই এই চেকপোস্ট দিয়ে যেতে পারবে না।
[৯] যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠার আগের সড়কে পুলিশের অবস্থান চোখে পড়ে। দেখা যায়, ফ্লাইওভার ও এর নিচে দিয়ে সায়দাবাদ, গুলিস্তান ও চানখারপুল যাওয়া প্রতিটি গাড়িকে আটকে চলাচলের কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে।
[১০] দায়িত্বরত যাত্রাবাড়ী থানার এএসআই সাত্তার বলেন, সবাইকে থামিয়ে প্রথমেই আমরা তাদের কাছে মুভমেন্ট পাস দেখতে চাচ্ছি। অল্প সংখ্যক লোক পাস দেখাতে পারছেন। অনেকে আবার পুলিশকে ‘কিসের পাস’, ‘কোথায় দেয় এই পাস’ ইত্যাদি প্রশ্ন করছেন।
[১১] এএসআই সাত্তার বলেন, একজন ব্যক্তির বাড়ি দনিয়া। তার মুভমেন্ট পাসে প্রয়োজনের জায়গায় ‘মুদি পণ্য কেনাকাটা’ উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ তিনি ঢাকা মেডিকেলে রোগী দেখতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। এমন ঘটনার ক্ষেত্রে আমরা তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠাচ্ছি। তবে পুলিশ যথেষ্ট নমনীয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
[১২] র্যাবের আইন ও গনমাধ্যম শাখার সিনিয়র এএসপি ইমরান খান বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারী বিধি নিষেধ কঠোরভাবে প্রতিপালনের জন্য র্যাবের চেকপোস্ট কার্যক্রম ও রোবাস্ট প্যাট্রোলিং কার্যক্রম সমগ্র দেশব্যাপী চলছে। চেকপোস্টে বিনা প্রয়োজনে সকলকে ঘরের বাইরে যাওয়ার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়। সরকারী বিধিনিষেধ চলাকালে জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে মুভমেন্ট পাস নিয়ে যাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা হয়। জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান করা ও স্বাস্থ্যবিধি ম্বনে চলার নির্দেশ প্রদান করা হয়। সচেতনতা তৈরিতে মানুষের মাঝে করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক লীফলেট বিতরণ করা হয়।