জান্নাতুন নাঈম প্রীতি: রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হক করোনায় মারা গেছেন। তার মৃত্যু সংবাদের নিচে অসংখ্য হাহা রিয়াকশন এবং প্রশ্ন মিতা হক কী বেহেশতে যাবেন? ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সানাইয়ের সুরে আজানের সুর বেঁধেছিলেন। হেফাজতে ইসলামের লোকজন সেই আজানের সুরের জাদুকরের সংগীত বিদ্যাপীঠে দ্বিতীয়বারের মতো আগুন লাগিয়েছে কয়দিন আগেই। কেমন দ্বিচারিতা দেখেন, একজন আপনার প্রার্থনা সঙ্গীত সুন্দর করে দিলো, অথচ আপনি তার ঘর পুড়িয়ে দিলেন। এটা কি প্রকারের ধর্ম? এ আর রহমান অসংখ্য সুর করেছেন যাতে তিনি কোরানের আয়াত থেকে শুরু করে আল্লাহর নাম নিয়েছেন। এমনকি এ আর রহমান নিজেই জন্মেছিলেন এক হিন্দু পরিবারে।
মায়ের আরোগ্যের জন্য আজমীর শরিফে তিনি মানত করেছিলেন মা সেরে উঠলে তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন। এ আর রহমানের মা সেরে ওঠার পর তিনি নিজের নাম রাখলেন আল্লা রাখা রহমান, সংক্ষেপে এ আর রহমান। এ আর রহমান যখন বলেন ‘কুন ফায়া কুন’ তখন কি অপমান হয় আয়াতের, নাকি আরও উজ্জ্বল হয় সেই শব্দগুলোর অস্তিত্ব টিকে থাকার? সুরসম্রাট মিয়া তানসেন ছিলেন মুঘলদের সভাসদ। এই ব্যক্তি মুঘল সম্রাট আকবরের সভায় সুফি ঘরানার সুরে আচ্ছন্ন করতেন সবাইকে। এমনকি তিনি মৃত্যুর পরেও শুয়ে আছেন সুফী সাধক শেখ মুহাম্মদ গাউসের সঙ্গে একই সমাধি কমপ্লেক্সে। আমাদের জাতীয় কবি নজরুল কয়েক হাজার গজল, হামদ নাত লিখেছেন, সুর করেছেন। সুরে সুরেও মসজিদের পাশে কবর চেয়েছিলেন। তাকেও কাফের, মুরতাদ ঘোষণা করেছিলো কারা এবং কেন?
আমার আফসোস এই যে, হেফাজতে ইসলাম টাইপ দলগুলির লোকের এবং তাদের সমমনারা না শুনলো আজান, না বুঝলো সুর। তাদের কেবল একটাই প্রশ্ন অমুক কি বেহেশতে যাবেন? অথচ তারা নিজেরাও জানেনা যে সৃষ্টিকর্তার কথা বলে তারা সুরের আগুন নেভাতে চায়, সেই সুর তাদের বিশ্বাসমতে, সেই ঈশ্বরই দিয়ে রেখেছে পাখির গানে, ঝর্ণার শব্দ, পাতার মর্মর ধ্বণিতে, এমনকি যে আজানের সুর তারা পাঁচ ওয়াক্তে শোনে সেখানেও। ইসলাম ভালো, তারা স্বয়ং প্রকৃতির শত্রু। নইলে প্রকৃতি যে সুরকে বেধে রাখেনি, ইসলাম রক্ষার নামে সেই সুরকে বেধে রাখার চেষ্টার অস্বাভাবিক আচরণ তাদের কে শিখিয়েছে? সারাদিন বেহেশত বেহেশত করে দুনিয়াকে নরক বানিয়ে ফেলার দায়িত্ব তাদের কে দিয়েছে? ফেসবুক থেকে