আশরাফ আহমেদ:[২] কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের বহু দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষেরা ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে কলকারখানা , দোকানপাট,গার্মেন্টসহ নানান পেশায় কর্মরত ছিল। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবে ওইসব শ্রমজীবি মানুষেরা কর্মহারা হয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন।
[৩] ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভাড়া বাসায় নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তাই অগত্যা অনেকেই বাসা ভাড়া পরিশোধ ও পরিবারের ভরণ-পোষণ না করতে পারায় শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসছেন। গ্রামে এদের কারও ভিটেমাটি ছাড়া কোন ফসলি জমি নেই। আবার কিছু সংখ্যক লোকের ভিটেমাটি ও কিছু ফসলি জমি রয়েছে।
[৪] তাই গ্রামের বিত্তশালী ভূস্বামীদের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে অথবা বাৎসরিক রেন্ট বাবদ জমি নিয়ে চাষাবাদে আত্মনিয়োগ করছেন অনেকেই । আবার কিছু সংখ্যক লোকের নিজস্ব সামান্য জমিতে হরেকরকম শাকসবজি কিংবা অর্থকরী ফসল চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন।
[৫] মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় ,বাড়ির আঙ্গিনা , উঠোন সহ সকল অনাবাদি জমিতে শাকসবজি ও বিভিন্ন ফসল ফলানোর জন্য জোর তাগিদ দিয়েছেন। কোন অনাবাদী জমি রাখা যাবে না।সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, উপজেলায় বিভিন্ন শহর থেকে কর্মহারা হয়ে বহু নিম্নবিত্ত লোকেরা গ্রামে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে এসেছে।
[৬] তেমনি একজন উপজেলার জিনারী ইউনিয়নের চর কাটিহারী গ্রামের রফিক মিয়া। সপরিবারে নারায়ণগঞ্জে দিনমজুরের কাজ করতে। তিন মাসের বাড়ি ভাড়া আটকে যায়। ফলে ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করে বাসা ভাড়া পরিশোধ করে গ্রামে চলে আসেন। বাড়িতে ভিটেছাড়া সহায়-সম্পত্তি কিছুই নেই।তাই গ্রামে এসেই পাঁচ কাঠা জমি বর্গা নিয়ে শাকসবজি চাষ শুরু করেন।
[৭] শাক সবজি বিক্রি করে ভালই উপার্জন হচ্ছে। এতে পরিবার-পরিজনের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে পারছেন। রফিক মিয়া বলেন, কর্ম না থাকায় তিন মাসের বাসা ভাড়া আটকে যাওয়ায় শহর ছেড়ে বাড়িতে চলে এসেছি। এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে কৃষিকাজ করে ভালোই কাটছে দিন।
[৮] রফিকের মতো এ গ্রামের কলিমুদ্দিন, সুরুজ মিয়া সহ অনেকেই শহর ছেড়ে ফিরে এসেছে গ্রামে। তারাও ভূস্বামীদের নিকট থেকে জমি বর্গা নিয়ে হরেক রকমের ফসলাদি চাষ করছেন।গ্রামের বিত্তশালী ভূস্বামী লিয়াকত আলী জানান, পূর্বে বহু জমি পতিত থাকতো। বর্গা নেওয়ার মত কেউ ছিলনা। কিন্তু এখন বহু লোক জমি বর্গা নিতে আসে।
[৯] এখন কোন জমি অনাবাদি নেই।গ্রামে বেড়ে গেছে কৃষিজমির কদর।অনাবাদি জমিতে ও এখন নানান ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে। দেশে উন্নত জাতের বীজ ,কীটনাশক ও সার প্রয়োগে ফসলের উৎপাদন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। তাই দরিদ্র পরিবারগুলোতে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা।
[১০] গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ, মৎস্য চাষ,হাঁস-মুরগী পালন সহ বিভিন্ন উৎপাদন কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর শ্রমজীবীরা। ফলে পারিবারিকভাবেই আর্থিক সংকট কাটিয়ে হচ্ছে স্বাবলম্বী। জীবন যাত্রার ক্ষেত্রে ব্যাপক মানোন্নয়নঘটছে।
[১১] গ্রামের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। নগরের হাতছানি বিলুপ্তির পথে। আধুনিক গ্রামীণ পরিবেশে সকল সুযোগ সুবিধার সমন্বয় ঘটাতে চলছে। তাই গ্রামেই হবে নগরসভ্যতার সোপান। গ্রামে কৃষি বিপ্লব ঘটে পুনরায় অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। দূরীভূত হবে সকল আর্থিক দৈন্যতা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি হবে প্রধান চালিকাশক্তি।সম্পাদনা:অনন্যা আফরিন