সুজন কৈরী : [২] লকডাউনের ঘোষণায় শনিবার থেকে রাজধানীর বাস ও লঞ্চ ও রেল স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করে। লকডাউনে আটকা পড়ার আশঙ্কায় সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার আগেভাগে ঢাকা ছাড়ছেন রাজধানীবাসী। রাজধানীর মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গাবতলীসহ বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেল স্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেতে যাত্রীরা ভিড় করছেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ছে। ঘরমুখো এসব মানুষের মধ্যে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শ্রমিকসহ নিম্নআয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশি। যাত্রীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ভিড়ের কারণে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছে না।
[৩] বাস যাত্রীরা জানান, সোমবার থেকে লকডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। তাই শনি বা রোববার বাড়ি না গেলে রাজধানীতে আটকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আগেভাগে বাড়ি চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের মাঝে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেসব যাত্রীরা অগ্রিম টিকিট কেটেছিলেন তাদের অনেককেই টিকিট ফেরত দিয়ে নতুন করে রোববারের টিকিট কাটার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
[৪] সায়েদাবাদের হানিফ ও শ্যামলী কাউন্টারে কর্মচারিরা বলেন, লকডাউনের খবর শুনেই শনিবার দুপুর থেকে যাত্রীরা ফোন দিয়ে টিকিট বুকিং নেওয়া শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই রোববার রাত পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। একই অবস্থা মহাখালী বাস টার্মিনালেও। পরিবহনগুলোর কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতারা বলেন, লকডাউন ঘোষণায় যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। শনিবারের তুলনায় রোববার যাত্রীর চাপ অনেক বেশি বাড়তে পারে।
[৫] বাস টার্মিনালটিতে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুরসহ উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। এই টার্মিনালে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বেশি যাত্রী যাতায়াত করে এনা পরিবহনে। এই পরিবহন কাউন্টারের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা সাহেদ আলী বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে কয়েক দিন ধরে বাসের অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন করছেন তারা। এতে যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। তবে শনিবার লকডাউন ঘোষণার পর তুলনামূলক যাত্রীও বেশি আসা শুরু করেছে। রোববার ঘরমুখো মানুষের চাপ আরও বাড়তে পারে।
[৬] শ্যামলিতে অবস্থিত সাতক্ষীরা এক্সপ্রেসের ম্যানেজার জিন্নাহ বলেন, আমরা সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাত্রী বহন করছি। সিট কমে যাওয়ার যাত্রীদের চাপ দিগুণের চেয়ে বেশি হয়েছে। তবে হঠাৎ লকডাউনের ঘোষণায় এমনটি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা বাস মালিক সমিতির বেঁধে দেওয়া টিকেটের দামেই যাত্রী নিচ্ছি। গাবতলি বাস টার্নিমালে পুর্বাশা পরিবহন কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা নাইমুল ইসলাম বলেন, লকডাউনের ঘোষণা শুনে গাবতলির প্রতিটি কাউন্টারে প্রচÐ ভিড় রয়েছে। অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কারণে আসন দিতে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছি। সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
[৭] সায়দাবাদ টার্মিনালের হানিফ পরিবহনের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা ইকবাল উদ্দিন বলেন, আমাদের কাউন্টারে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা না হলেও অন্যদিনের চেয়ে রোববার যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি। এদিকে কমলাপুর রেল স্টেশনেও বেড়েছে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড়। আন্তঃনগর ট্রেনে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ না থাকলেও স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে রওয়ানা করছে।
[৮] তবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত কমিউটার ট্রেনে সবচেয়ে বেশি অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। ট্রেনে অর্ধেক টিকিট বিক্রির কথা বলা হলেও কমিউটার ট্রেনগুলোতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নেয়া হচ্ছে। টিকিট কেটেও সিট না পাওয়ার অভিযোগ যাত্রীদের। এতে উপেক্ষা করা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। অপরদিকে লকডাউনের খবরে রোববার সকাল থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ভিড় করেছেন ঘরমুখো মানুষরা। ইতোমধ্যে সকালে চাঁদপুর, ভোলা, সুরেশ্বর, নড়িয়া, মুলফৎগঞ্জ, চন্ডিপুর, গঙ্গাপুর, দুলারচর, মুন্সিগঞ্জ, মোহনপুরসহ বিভিন্ন জায়গার লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে গেছে।
[৯] লঞ্চে প্রবেশের শুরুতে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার ও মাস্ক পরার জন্য বারবার সচেতন করা হলেও ভেতরে অনেককেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। ৬০ শতাংশ ভাড়া নিলেও অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার বিধিনিষেধ মানছে না বেশিরভাগ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। তবে ঘাটে ও লঞ্চে মাইকিং করে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন করা হচ্ছে। সম্পাদনা : রাশিদ