অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ: বাংলাদেশের উন্নয়নের ধরন কেমন তা বোঝার জন্য ঢাকার দুটো চিহ্ন আমাদের চোখের সামনে ঘুরাঘুরি করে। এর একটি হলো বিশ্বের নামীদামী মডেলের ঝকঝকে গাড়ী, যেগুলো ব্যবহার করে হাতে গোণা কিছু লোক- মন্ত্রী আমলাসহ এই উন্নয়ন ধারায় ফুলতে ফুলতে ঢোল হওয়া কিছু ভিআইপি-সিআইপি; আর অন্যটি হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য সর্বজন বা পাবলিক বাস যেগুলো ২০-২৫ বছরের পুরনো, বারবার রং দেওয়া ভাঙাচোরা বাহন যার মধ্যে গাদাগাদি করে শহরের বেশিরভাগ নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধকে উঠতে হয়, প্রতিদিন জীবন অতীষ্ট করে কাজে যেতে হয়, নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল করতে করতে গায়ের ঝাল মেটাতে হয়। এসব বাসের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। নিত্যনতুন ব্যক্তিগত গাড়ীর ঠেলায় সারাক্ষণ ঢাকায় যে জ্যাম লেগে থাকে তার মধ্যে বেশিরভাগ মানুষকে এসব বাসে একজনের ওপর আরেকজন উঠে প্রতিদিন কঠিন জীবনের পরীক্ষা দিতে হয়। তাদের জন্য ‘স্বাস্থ্যবিধি মানুন’, ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন’ এগুলো হাসি মশকরা ছাড়া আর কী? ৫০ বছরে হাতে গোণা কিছু লোকের জন্য বিশ্বের সবচাইতে দামী গাড়ী ঢাকার হাজির হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সামান্য চাওয়া বড় যথেষ্টসংখ্যক বাস তারই ব্যবস্থা করা যায় না।
বিআরটিসির মতো প্রতিষ্ঠান রাখা আছে কিছু লোকের কেনাকাটার ব্যবস্থা করতে, যা দিয়ে তাদের কর্তাদেরও বড় দামী গাড়ী কেনা সম্ভব হয়। তাই সর্বজনের টাকায় কেনা বিআরটিসির বেশিরভাগ বাস অচল বা গৃহবন্দী। এরপরও লক্করঝক্কর সব বাসের মালিকদের খুশি রাখতে এর ভাড়া বাড়ানোতে সরকারের কার্পণ্য নেই। করোনা বেড়ে যাচ্ছে, সবকিছু খোলা থাকবে, কিন্তু এমনিতেই কম বাস, তার মধ্যে সিট নাই, তার ওপর ভাড়া বাড়লো। মানুষের ভোগান্তি বাড়ানোর জন্য কতো আয়োজন। উন্নয়নের দুই বিপরীত মুখ। তবে সবার জন্যই আতশবাজি আর আলোকসজ্জার ব্যবস্থা আছে। ফেসবুক থেকে