নিউজ ডেস্ক: বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিদেশি শাখায় জালিয়াতির কমতি নেই। চুরি, দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের ঘটনা এসব শাখায় হরহামেশাই ঘটছে। অনৈতিক সম্পর্কের বেড়াজালে আটকে অনেকেই আবার জরিমানাও গুনেছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুবিধার্থে বিদেশে শাখা খোলা হলেও লোকসানের দায় এড়াতে পারছে না। লোকসানের কারণে বেশির ভাগ ব্যাংকই তার শাখা বা এক্সচেঞ্জ হাউজ বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু অনিয়ম-জালিয়াতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অব্যাহত লোকসানের কারণে ২০১৭ সালে কানাডায় এক্সচেঞ্জ হাউজ গুটিয়ে নেয় অগ্রণী ব্যাংক। এর আগের বছর ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার এক্সচেঞ্জ হাউজের কার্যক্রমও বন্ধ করে অগ্রণী ব্যাংক। যুক্তরাজ্যে সোনালী ব্যাংকের চারটি শাখা এরই মধ্যে বন্ধ করা হয়েছে।
সোনালী ব্যাংক যুক্তরাজ্যে ছয়টি শাখা খুললেও সফল হতে পারেনি বরং কোনো কোনো শাখার দায়িত্বপ্রাপ্তরাই অর্থ আত্মসাত্ করেছে। ঢাকা থেকে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতনদের সফরের যাবতীয় ব্যয়, উপঢৌকন বাবদ খরচও করতে হয়েছে। বিদেশি শাখায় পোস্টিং পেতেও লবিং, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দেওয়ায় পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে।
সূত্রমতে, জালিয়াতির কারণে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে জনতা ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান জনতা এক্সচেঞ্জ হাউজের। এক জন রিসিপসনিস্টকে দায়িত্ব দেওয়া এবং লাখ লাখ ডলারের অনিয়মের বিষয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষ নজরে আনলে হাউজটির কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ থেকে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শো’কজ নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু বছর গড়িয়ে গেলেও নোটিশের জবাব আসেনি বরং বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জনতা এক্সচেঞ্জ হাউজ খোলা হয়। কিন্তু চালুর পর প্রতি বছর পরিদর্শন করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এই সুযোগে অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি ঢাকায় জানাজানি হলেও অজ্ঞাত কারণে সবাই চেপে যায়। প্রায় এক বছর আগে ৬ লাখ ডলারের এক অনিয়ম নিয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানালে আলোচনায় চলে আসে। মার্কিন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে তড়িঘড়ি করে জনতা ব্যাংক তখন এক্সচেঞ্জ হাউজটির কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় তখন অনিয়মের জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল তা জানাতে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কারণদর্শাও নোটিশ জারি করে। যদিও এ নোটিশ জারি নিয়ে ব্যাংকিং বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে মতভেদ ছিল। অনেকেই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। পরে শো’কজ করা হলেও তার জবাব আসেনি।
শুধু নিউ ইয়র্কেই নয়, অন্যান্য এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো পরিদর্শন করা হয়নি বিগত বছরগুলোতে। তবে জনতা ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, নিউ ইয়র্কের ঘটনার পর ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের বাইরের শাখা বা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো পরিদর্শন করবে। এরই মধ্যে একটি টিম যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বলেও জানা গেছে। ২০০২ সালের জুন মাসে ইতালিতে জনতা এক্সচেঞ্জ কোম্পানি চালুর পর থেকেই লোকসান গুনতে হয়েছে। লোকসান কাটাতে প্রধান কার্যালয় থেকে টাকা পাঠানোর আবেদনও করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। অভিযোগ রয়েছে, এখানকার দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রবাসী নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ আছে। যা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও।
সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এক্সচেঞ্জ হাউজের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজমান। বেসরকারি খাতের মার্কেন্টাইল, পূবালী, সাউথইস্ট, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের এক্সচেঞ্জ হাউজ বন্ধ করেছে। - ইত্তেফাক
আপনার মতামত লিখুন :