, ফেসবুক থেকে: বর্তমানে প্রায় ২০ কোটি মুসলমান ভারতীয় নাগরিক, তার মানে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি মুসলমান ভারতে। মুসলিম জনসংখ্যার হিসেবে পৃথিবীর তৃতীয় অবস্থানে ভারত, যেখানে দেশটির মুসলমান জনসংখ্যা পৃথিবীর ১০.৯ শতাংশ। ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ মুসলমান এবং এক হিসাব বলছে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশটিতে মুসলমান জনসংখ্যা হবে ৪০ কোটি।
ভারতে হিন্দুদের উগ্রবাদী রাজনীতির বিপক্ষে বহু হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন, প্রতিনিয়ত প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানের বিপক্ষে কোনো নীতি সরকার গঠন করলে হিন্দুদের মধ্য থেকেই ব্যাপক প্রতিবাদ উঠে। উগ্রবাদী আচরণ সর্বত্রই একরকম, হোক তা উগ্র ভাবধারার মুসলমানদের আচরণ, হোক তা মিয়ানমারের কোনো উগ্রবাদী বৌদ্ধের আচরণ বা আমেরিকার কোনো খ্রিষ্টান উগ্রবাদী বা হোয়াইট সুপ্রিমেসিতে বিশ্বাসীর আচরণ। মধ্যপ্রাচ্যেতো মুসলমান মুসলমানের প্রধান শত্রু। সৌদি আরব তেল বিক্রির পয়সায় আমেরিকা, ইসরায়েলের কাছ থেকে বোমা কিনে সেই বোমা মেরে কয়েক লক্ষ ইয়েমেনি শিশুকে হত্যা করেছে বিগত কয়েক বছরে।
আমার কাছে এসব কোনো গোলকধাঁধার খেলা নয়। এসব ঠান্ডা মাথার রাজনীতি। লাভের হিসাব করে আদতে লোকসানের রাজনীতি।
মুসলমান হয়ে যদি মুসলমান উগ্রবাদিতার বিরুদ্ধে, হিন্দু হয়ে যদি হিন্দু উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে, হোয়াইট হয়ে যদি হোয়াইট সুপ্রিমেসির বিরুদ্ধে, আমেরিকান হয়ে যদি ‘হেইট এশিয়ানস’ ক্যাম্পেইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন একজন মানুষ, তবে তিনি একজন উঁচু শ্রেণীর মানুষ। তাকে সম্মান করি। কারণ তিনি পৃথিবী ধ্বংসের বিরুদ্ধে একজন সৈনিক।
উগ্রবাদিতা একটা ডক্ট্রিন বা মতবাদ। এই মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে হয়, বিনিয়োগ লাগে, সময় লাগে, সাংগঠনিক কাঠামো লাগে, পেছনে তাত্ত্বিক লাগে, সোশ্যাল মিডিয়া লাগে, মেইনস্ট্রিম মিডিয়া লাগে, কৌশল প্রণয়ন করতে হয়, তা বাস্তবায়ন করতে হয়।
ভারতেও তেমন নানা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে, বাংলাদেশে, পাকিস্তানে, মিয়ানমারে সর্বত্র তৈরি করা হয়েছে। হাজার হাজার কোটি বিনিয়োগ হয়েছে, হচ্ছে।
২০০৪ সালে আমাকে এক সাক্ষাৎকারে জনাব ফজলুল হক আমিনী সাহেব বলেছিলেন যে, দেশে তাদের ‘এক কোটি সৈন্য’ বড় হচ্ছে। তিনি আমাকে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন ভবিষ্যত দেখার জন্য।
কি? খুশি লাগছে?
২০০৪ সাল থেকে ভারতে হিন্দু উগ্রবাদীদের কত সৈন্য বড় হয়েছে তার হিসাব আমার কাছে নাই।
মিয়ানমারে বৌদ্ধ উগ্রবাদিতার কত সৈন্য বড় হয়েছে ২০০৪ সাল থেকে তারও কোনো হিসাব জানা নাই। তবে হয়েছে যে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহতো থাকার কথা না আমাদের।
সৈন্য বড় হবার ধারণা না থাকলেও এটুকু ধারণা করাই যেতে পারে যে, পৃথিবীর ভবিষ্যত হানাহানির ভবিষ্যত, যেখানে নিজ জাতি নিজ জাতির সাথেই প্রথমে ধ্বংস খেলায় নামবে, তারপর পার্শ্ববর্তী, এই করে করে পৃথিবীসুদ্ধ হবে ধ্বংসের খেলা, হানাহানির হিংস্রতা।
এমন পরিশ্রম করে, আয়োজন করে এতো সম্পদ, এতো ক্ষমতা অর্জন করে মানবজাতি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটা হানাহানির পৃথিবী রেখে যাবে কি না, সে বিষয়ে সম্মিলিত বোধ তৈরি হওয়া বা করা জরুরী। শিক্ষা, রাজনীতি যদি সহনশীলতার মুল্যবোধ না তৈরি করে দেয় তবে সামনে অন্ধকার।