ডেস্ক রিপোর্ট: চট্টগ্রাম বন্দর ও বিভিন্ন প্রাইভেট আইসিডি থেকে দীর্ঘদিন ধরে খালাস না নেওয়া ২৯৮ কনটেইনার পচনশীল পণ্য ধ্বংস করা হচ্ছে। গত সোমবার থেকে এসব পণ্য ধ্বংসের কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষ। ধ্বংসের তালিকায় ফলমূল, মাছ, ফিশ ফিড, মিট অ্যান্ড বোন মিলসহ বিভিন্ন ধরনের ছয় হাজার টন পণ্য রয়েছে। প্রথম দিন ২৭ কনটেইনার পণ্য মাটি চাপা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সরকারি ছুটি থাকায় এ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে আজ থেকে আবার শুরু হবে। সব কনটেইনারের পণ্য ধ্বংস করতে আরও ৮-১০ দিন সময় লাগতে পারে। যুগান্তর
কাস্টম সংশ্লিষ্টরা জানান, একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পণ্য ধ্বংস করায় বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনারের চাপ কিছুটা হলেও কমে আসবে।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে ডেলিভারি না নেওয়া আমদানি কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে যেতে থাকলে নড়েচড়ে বসে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এক পর্যায়ে জটের আশঙ্কা দেখা দেয়। ওই অবস্থায় আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার দ্রুত সরিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানানো হয়। এতে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ৮ মার্চ থেকে এফসিএল (ফুল লোডেড) কনটেইনারের স্টোর রেন্টের ওপর কার্যকর করা হয় দ্বিগুণ দণ্ডভাড়া। এরপর থেকে কনটেইনার ডেলিভারির গতি কিছুটা বাড়লেও এখনো বিপুল পরিমাণ কনটেইনার জমা হয়ে আছে বন্দরে। ৪৯ হাজার টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের) কনটেইনার রাখার জায়গা রয়েছে বন্দরের অভ্যন্তরে। এই ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে প্রায়ই ৩৪-৩৬ হাজার টিইইউএস কনটেইনার থাকছে।
আমদানি করা পণ্য দ্রুত ডেলিভারির পাশাপাশি নিলামযোগ্য পণ্য দ্রুত নিলামে তোলা এবং এর মধ্যে যেসব পণ্য নিলাম অযোগ্য অর্থাৎ নষ্ট হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, সেগুলো ধ্বংসের উদ্যোগ নিতে কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগাদা দিয়ে আসছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমদানিকারক পণ্য ডেলিভারি না নিলে প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করে তা নিলামে তোলে কাস্টম। তবে আইনি জটিলতাসহ নানা কারণে নিলামের গতি ধীর হওয়ায় এ ধরনের কনটেইনারের স্তূপ জমছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে শুধু নিলামযোগ্য কনটেইনারই রয়েছে প্রায় সাত হাজার টিইইউএস। প্রতি বছর এর পরিমাণ বাড়ছে। সময়মতো কনটেইনারের নিলাম না হওয়ায় একদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের জায়গা আটকে আছে। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ সূত্র জানায়, তারা এরই মধ্যে ২৯৮টি কনটেইনার চিহ্নিত করেছে। যেগুলোর পণ্য পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো নিলামে বিক্রি সম্ভব নয়। আমদানিকারকও ডেলিভারি নিতে আগ্রহী নন। তাই এসব পণ্য ধ্বংস করা হচ্ছে। কাস্টম হাউজের উপ-কমিশনার (নিলাম শাখা) ফয়সাল বিন রহমান যুগান্তরকে জানান, ২৯৮ কনটেইনারে ধ্বংসযোগ্য পণ্য রয়েছে প্রায় ছয় হাজার টন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে ফিশ ফিড। এছাড়া আপেল, কমলাসহ বিভিন্ন ফলমূল এবং ফিশ অ্যান্ড মিট বোন মিলসহ কয়েক ধরনের পণ্য রয়েছে। এগুলো এক বছর আগে থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সময়ে আমদানি করা হয়েছিল। এসব কনটেইনারের মধ্যে ১৫০টির মতো রয়েছে বিভিন্ন প্রাইভেট আসিডিতে। বাকিগুলো বন্দরে। তিনি বলেন, নগরীর হালিশহর বাংলাবাজার এলাকায় সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং গ্রাউন্ডের পাশের একটি জায়গায় পণ্যগুলো প্রথমে বুলডোজার দিয়ে মিশিয়ে ফেলা হচ্ছে। এরপর মাটি চাপা দেয়া হচ্ছে। খালি কনটেইনারটি সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্টকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বন্দর-কাস্টম সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বাজারে দাম কমে গেলে লোকসানের আশঙ্কায় অনেক সময় পণ্য খালাস নেন না আমদানিকারকরা। আবার যখন দাম বাড়ে, ততদিনে কনটেইনারে থাকা ফলমূলসহ নানা রকম ভোগ্যপণ্য নষ্ট হয়ে যায়। আরও বড় লোকসানের আশঙ্কায় পচা পণ্য তারা শেষ পর্যন্ত না নিয়ে বন্দরেই ফেলে রাখেন। আইনি জটিলতায় আটকে গেলে বড় লোকসানের আশঙ্কায়ও অনেক সময় বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করেন না আমদানিকারকরা। এসব পণ্য শেষ পর্যন্ত নিলামে বিক্রি করা হয়। আর বিক্রি অযোগ্য পণ্য ধ্বংস করা হয়।