অর্থনৈতিক ডেস্ক: পবিত্র শব-ই-বরাত সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজারে বেড়েছে সব ধরনের মুরগি, মাছ-মাংস ও সবজির দাম। তবে চালের দাম সামান্য কমেছে। আরেক দফা দাম বেড়েছে গুঁড়ো দুধ-তরল দুধ, চিনি এবং ভোজ্যতেলের। রসুনের দাম কমলেও বেড়েছে আদা ও জিরাসহ অন্যান্য মসলাপাতির দাম। স্থিতিশীল রয়েছে আটা, ময়দা ও পেঁয়াজের বাজার।
শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, ফকিরাপুল বাজার, মুগদা বড় বাজার, যাত্রাবাড়ী বাজার, গোড়ান কাঁচা বাজার এবং খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি) ঢাকার অধিকাংশ নিত্যপণ্যের বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার তথ্য দিয়েছে। শব-ই-বরাত ও রোজা সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্রুত দাম কমানোর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে শব-ই-বরাতের আগে বাজার পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী, ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, রোজার একমাস আগে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। রোজার সময় সেই বাড়তি দামেই পণ্য বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। এবার ইতোমধ্যে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে সাধারণ ভোক্তাদের কষ্ট বাড়লেও অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেট ভারি হয়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ মুহূর্তে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি। নিত্যপণ্যের বাজারে মূলত চার প্রকারের মুরগি বিক্রি হয়। এর মধ্যে রয়েছে দেশী, পাকিস্তানী কক, লেয়ার ও ব্রয়লার। মাসখানেক আগে দেশী মুরগির কেজি ছিল ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা। কয়েক দফায় দাম বেড়ে এখন দেশী মুরগির কেজি হয়েছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা। অর্থাৎ দেশী মুরগির দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ১০০ টাকার ওপরে। রাজধানীর বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পাকিস্তানী কক মুরগি। মাসখানেক আগে এ মুরগির দাম ছিল প্রতিকেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।
অথচ রাজধানীর বাজারে কক মুরগি ৩০০-৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। কোন কোন বাজারে ৩৫০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে এই কক মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত। গরিব মানুষের পুষ্টির প্রধান উৎস বলা হয় ব্রয়লার মুরগিকে। কারণ সবচেয়ে কম দাম হওয়ায় গরিব মানুষ পরিবারের মাংসের চাহিদা মেটান এই ব্রয়লার মুরগির মাংস খেয়ে। গত এক মাস ধরে ব্রয়লার মুরগিও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগিতে ৫০ টাকা দাম বেড়ে বাজারে এখন ১৬০-১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এক মাস আগেও লেয়ার মুরগির প্রতিকেজি দাম ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা। এখন এর দাম হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন উৎসবের মৌসুম আর এ কারণে মুরগির দাম চড়া। পিকনিক, বিয়ে-শাদিসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় মাংসের চাহিদা বেড়ে গেছে। এর সবচেয়ে বড় চাপ মুরগির ওপর। আর এ কারণে দাম বাড়তি।
মুগদা বড় বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী হালিম বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন, শব-ই-বরাত সামনে রেখে চাহিদা বাড়ার কারণে সব ধরনের মুরগির দাম বেড়ে গেছে। উৎসবে ব্রয়লার মুরগির চেয়ে পাকিস্তানী কক, লেয়ার ও দেশী মুরগির চাহিদা বেশি থাকার কারণে এসব মুরগির দাম বেশি। তবে উৎসব পার্বণ কমে এলে আবার দাম কমে যাবে বলেও তিনি জানান। তবে খামার মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, মুরগির বাচ্চার দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া মুরগির খাবার ও অন্যান্য ওষুধ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় মুরগির উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে সরবরাহও কিছুটা কমে গেছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, এক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি সব ধরনের মুরগি। দাম কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
আর একমাস পরে রোজা শুরু হচ্ছে। ওই সময় দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। দ্রুত দাম কমানোর উদ্যোগ না নিলে বাজার পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে।
শব-ই-বরাত সামনে রেখে বাজারে বেড়ে গেছে গরু ও খাসির মাংস এবং মসলাসহ অন্যান্য পণ্যের দাম। বাজারে প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বকরির মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়। এছাড়া মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। এসব বাজারে প্রতিকেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, চিংড়ি জাত ও মানভেদে ৫৫০-১২০০ এবং প্রতিকেজি ইলিশ মাছ ৯০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভারত থেকে আমদানি হওয়ায় পেঁয়াজের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দাম কমে প্রতিকেজি পেঁঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। গত সেপ্টেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেলে মিসর, তুরস্কসহ বিশ্বেও আরও কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। আমদানি করা সেই পেঁয়াজ টিসিবি ভর্তুকি মূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে ১৫ টাকা কেজিদরে বিক্রি করছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। সয়াবিন তেল বোতল পাঁচ লিটার ৬৪০-৬৭০, সয়াবিন খোলা প্রতিলিটার ১২৬-১৩২, সয়াবিন তেল বোতল এক লিটার ১৪০-১৪৫ ও পামওয়েল খোলা ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শব-ই-বরাত ও রোজা সামনে রেখে ছোলার দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিকেজি ছোলা এখন ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে রোজা সামনে রেখে দাম বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া চালের দাম কিছুটা কমেছে। প্রতিকেজি নাজিরশাইল ও মিনিকেট সরু চাল ৬২-৬৫, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৫২-৬০ এবং মোটা স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৪৭-৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। শীতের সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। - জনকণ্ঠ