মিরাজুল ইসলাম: আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্প্রতি এক ‘অমানবিক অভিজ্ঞতার’মুখামুখি হলো। দেশের প্রথম কুমির চাষের উদ্যোক্তা, মুক্ত চিন্তক ও লেখক মুশতাক আহমেদ বিচারাধীন অবস্থায় কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যুবরণ করলেন। এই বিষয়টি নিয়ে সাধারণ জনগণ ও সুশীল নাগরিকদের মধ্যে প্রবল অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মুশতাক আহমেদে ব্যক্তিগতভাবে অরাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ হলেও মৃত্যু পরবর্তী ঘটনার আবহে স্পষ্ট তাকে নিয়ে পুরনো কায়দায় রাজনৈতিক ফায়দা লোটার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে, যা অনভিপ্রেত।
মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের কাজের সমালোচনার কারণেই মুশতাককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। ইতোপূর্বে তিনি নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকালীন সময়েও স্বল্প সময়ের জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সেই সূত্রে তার প্রতি রাষ্ট্রযন্ত্রের আলাদা নজর ছিল। করোনাকালীন সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মতপ্রকাশের জন্য মুশতাক আহমেদ গত বছরের মে মাসে পুনরায় গ্রেপ্তার হন কার্টুনিস্ট কিশোরের সাথে স্যাটায়ারমূলক কার্টুন প্রকাশের দায়ে। সেই সাথে রাষ্ট্রবিরোধী সম্পৃক্ততায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনীত হয় তাদের বিরুদ্ধে।
সবাই তখন আশা করেছিল আইন নিজস্ব গতিতে মুশতাক আহমেদের কার্যকলাপের সুবিচার করবে। কিন্তু মুশতাক আহমেদের একের পর এক জামিনের আবেদন বাতিল হওয়ার পর থেকেই বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি সন্দিহান হতে শুরু করে তার পরিচিতরা। কেবলমাত্র মতপ্রকাশের কারণে কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাতে হবে তা ছিল ধারণাতীত। তার চেয়ে বড় কথা, বিচারিক প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে দীর্ঘতর হবার প্রেক্ষিতে এমন আশঙ্কাও দানা বাঁধছিলো মুশতাক আহমেদ সরকারের কিছু অশুভ ব্যক্তির ছত্রছায়ায় ষড়যন্ত্রের শিকার কিনা!
অবশেষে ছয়বার জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান হবার পর কারাগারে মুশতাকের মৃত্যুতে বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের নিন্মগামী সূচকের কাঁটা আরও এক ধাপ নিন্মগামী হলো। মুশতাকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো ছাপিয়ে এখন বেশি আলোচিত হচ্ছে তার প্রতি অমানবিক ও অসাংবিধানিক আচরণের দৃষ্টান্তটি।
মুশতাকের মৃত্যুর পর মূলত দুইটি বিষয় এখন দেশে ও বহির্বিশ্বে আলোচিত হচ্ছে। প্রথমত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট আইনটি আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা। দ্বিতীয়ত, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই আইনের আওতায় কারো নামে মিথ্যা মামলা হলে রাষ্ট্রপক্ষ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সুবিচার দিতে সক্ষম কিনা। মুশতাক আহমেদ তার মৃত্যুর মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্রের বরাতে সরকারের সামনে এই দুটো প্রশ্নের মীমাংসা দাবি করে গেলেন। এখন সরকারের দায় এই প্রশ্নের যথাযথ বিশ্বাসযোগ্য জবাব দেওয়া। লেখক ও চিকিৎসক
আপনার মতামত লিখুন :