বিপ্লব বিশ্বাস : বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের অবিশ্বাস্য, দুঃসাহসিক ও তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে বেচেঁ গেলো একটি প্রাণ। গত রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১) রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর ১৬ তলা বিশিষ্ট হাফিজ টাওয়ারের ১০ তলার কার্নিশে আটকে পড়া ১৩ বছরের মোতালেবকে ঝুঁকিপূর্ণ সংকীর্ণ কার্নিশ থেকে নিরাপদে উদ্ধার করে আনেন ফায়ারফাইটার সোহাগ চন্দ্র কর্মকার। এই দুঃসাহসিক উদ্ধারের গল্পটি বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজটিতে সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি ) সন্ধ্যা ৬.৫৯ মিনিটে পোস্ট করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে সঙ্গে সঙ্গেই পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই ফায়ার সার্ভিসের প্রশংসা করে মন্তব্য করতে থাকেন। যেমন মোহাম্মদ উবায়দুল্লাহ মন্তব্য করেন, “বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধুই।দোয়া ও শুভকামনা রইলো। দি লাইফ সেভিং ফোর্স।”
আমাদেরসময়.কমের পাঠকদের জন্য পোস্টটি হুবহু নিচে দেওয়া হলো :
“আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সবাই ব্যস্ত ভাষা শহিদদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে। ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১২টা পেরিয়েছে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সংবাদ, সিদ্ধেশ্বরীর ১৬ তলা বিশিষ্ট হাফিজ টাওয়ারের ১০ তলার কার্নিশে আটকে পড়েছে বালক। উদ্ধার করতে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরের একটি ইউনিট। নেতৃত্বে এসও মিজানুর রহমান। দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনা অ্যাসেস করতে সামান্য সময় নেন মিজান।
১৩ বছরের মোতালেব অজ্ঞাত কারণে জীবনের মায়া ভুলতে চেষ্টা করে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পৌঁছে যায় ১০ তলার কার্নিশে। সেখানে গিয়ে লাফিয়ে পড়তে চেয়েছিল সে। নিচের দিকে তাকিয়ে আর সাহস হয়নি। জীবনের মায়ায় ফিরে আসতে চায় সেখান থেকে। কিন্তু তা আর পারছিল না সে। তার আর্তচিৎকারে লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে সংবাদ দেয়। এমন ঝুঁকিপূর্ণ সংকীর্ণ কার্নিশে তার অবস্থান যে, যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে সে।
ত্বরিত উদ্ধার কৌশল ঠিক করে ফেলে মিজান। লিডার গিয়াস-এর সাথে রশি ধরে সহযোগিতা করার জন্য নির্ধারণ করে দেন ফায়ারফাইটার লিটন, সুজন আর হৃদয়কে। মূল অপারেশনে পাঠান দুঃসাসিক ফায়ারফাইটার সোহাগ চন্দ্র কর্মকারকে।
বডি হার্নেসসহ প্রয়োজনীয় পিপিই (ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম) পরিধান করে বারান্দা থেকে কার্নিশে নেমে যান সোহাগ। নেতৃত্বে থাকা এসও মিজানের নির্দেশনা অনুসরণ করে পৌঁছে যান অনতিদূরের ভিকটিম মোতালেবের কাছে। একটু এদিক-সেদিক হলেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হবে তার! না, তা হয়নি। হয়েছে আল্লাহর অপার কৃপা আর পেশাদারির বিজয়। ভিকটিমকে সুরক্ষিত রেখেই সোহাগ মোতালেবকে উদ্ধার করে আনেন নিরাপদে, নিরাপদ স্থানে। জীবনের ঝুঁকি বহন করে মাত্র ১০ মিনিটে সম্পন্ন করা এই দুঃসাহসিক অভিযানকে উৎসুক জনতা বিপুল করতালির মাধ্যমে অভিনন্দন জানায়, সরব হয়ে উঠে ফায়ার সার্ভিসের প্রশংসায়।
অভিনন্দন ফায়ারফাইটার সোহাগহ চন্দ্র কর্মকারসহ এসও মিজান ও তার পুরো দলকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবসেবার এই যাত্রা বহমান থাক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। ফায়ার সার্ভিস হোক তার উত্তম সেতুবন্ধ।”