ডেস্ক রিপোর্ট : অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় সোমবার বিকেলে কাতরাচ্ছিলেন জুম্মন মিয়া। বয়স ২২–২৩ বছর হবে। পরনে ধুলোমলিন কালো টি-শার্ট। পেটে ব্যান্ডেজ। কী হয়েছিল, জানতে চাইলে জুম্মন খুব আস্তে দুটি লাইন বলতে পারলেন, ‘নিজের পেটে নিজেই চাক্কু ঢুকাইছি। নিজের ওপর জিদ আমার।’ তাঁর চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।
মা, তিনভাই ও স্ত্রীকে নিয়ে জুম্মন নারায়ণগঞ্জে থাকেন। পরিবারের সদস্যরা বলেন, করোনায় পোশাক কারখানার কাজ হারিয়ে কয়েক মাস ধরে অটোরিকশা চালাচ্ছেন জুম্মন। কোনোরকমে সংসারটা চলছিল। এদিকে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর প্রসবের দিন ঘনিয়ে আসছে। হাসপাতালে নিতে টাকা জমাতে হবে।
জুম্মন সোমবারও সকাল আটটার দিকে বেরিয়েছিলেন। এর মধ্যেই দুপুর ১২টার দিকে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন জুম্মন রক্তে ভাসছেন। পুলিশ তাঁকে নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে যাচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের বাইরে দাঁড়িয়ে জুম্মনের ভাই মো. মানিক বলছিলেন এসব কথা। বিরতিহীনভাবে কাঁদতে থাকা মা জরিনা বেগম ছেলের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। ঘুরেফিরে তিনি একই প্রশ্ন করছিলেন, ‘আমার ছেলেটা বাঁচব তো?’
অবশ্য এটিএসআই রাশেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, জুম্মনের অটোরিকশাটি আটক করা হয়নি এবং তাঁর কাছে রেকারিংয়ের বিলও চাওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, জুম্মনের মায়ের ভাষ্য অনুযায়ী তিনি (জুম্মন) মাদকাসক্ত। সংসারে অভাব–অনটনের কারণে তিনি নিজেই ছুরিকাঘাত করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, ডাচ্–বাংলা ব্যাংক ইউটার্ন এলাকায় অবৈধভাবে মহাসড়কে উঠলে এবং নানা কারণে আশপাশ থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আটক করা হয়।
জুম্মনকে প্রথমে শিমরাইলের সুগন্ধা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ট্রাফিক পুলিশের দুই সদস্যই জুম্মনকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, জুম্মনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে তখন পর্যন্ত কিছু বলার উপায় ছিল না।
সূত্র- প্রথম আলো