শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি: কী পাচ্ছে বাংলাদেশ, কী হারাতে পারে? ◈ রাতেই সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো হচ্ছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা (ভিডিও) ◈ চাপাতি হাতে ব্যাগ ছিনিয়ে পুলিশের সামনেই হেঁটে গেলো ছিনতাইকারী, ভিডিও ভাইরাল ◈ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ভারতের বৃহত্তম তেল শোধনাগার নায়ারা রিফাইনারির ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা ◈ রাতের আকাশে ভেসে উঠলো ‘নাটক কম করো পিও’ (ভিডিও) ◈ জটিল ভয়ানক যে রোগে আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! ◈ কুড়িগ্রামে চাঁদা দাবি করা জামায়াতের সেই নেতা সাময়িক বহিষ্কার ◈ বড়াইগ্রামে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে দুই বিষয়ে দুই পরীক্ষার্থী ফেল! ◈ টাঙ্গাইলে পুলিশ হেফাজতে বিএনপি নেতার রহস্যজনক মৃত্যু ◈ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ তলিয়ে দেখা দরকার: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:৩৬ দুপুর
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:৩৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মারুফ রসূল: গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের রাজনীতি

মারুফ রসূল: কোনো গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় নীতি যদি হয় তথ্য বা ইতিহাস বিকৃতি করা, তবে আর সেটা গণমাধ্যম থাকে না, সংবাদ-মুখোশের আড়ালে সেটা হয়ে ওঠে দুর্বৃত্ত। যেমন আছে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক বা সামরিক দুর্বৃত্ত, তেমনি গণমাধ্যমও দুর্বৃত্ত হয়ে উঠতে পারে। এমন অনেক নজির আছে পৃথিবীর ইতিহাসে, বাংলাদেশেও কম নেই।

সম্প্রতি কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রচারিত একটি ডকুড্রামা নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান ও তার পরিবারকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই ডকুড্রামাতে প্রধানমন্ত্রীকেও যুক্ত করা হয়েছে নানাভাবে। কিন্তু ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ মূলধারার গণমাধ্যমেও আল-জাজিরার নির্মিত এই ডকুড্রামার নানা মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তির সমালোচনা হচ্ছে তথ্য-প্রমাণসহ। যদিও জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো গণমাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠানের কপিরাইট ওই গণমাধ্যমের হয়ে থাকে এবং সেগুলো চাইলেই নিজ নিজ ইউটিউব বা ফেসবুক পেজে আপলোড দেয়া যায় না; তবু আল-জাজিরার বানানো

এই ডকুড্রামাটি বিভিন্ন নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে আপলোড হচ্ছে। এসব বিষয়ে না তারা কপিরাইট ক্লেইম করছে, না ইউটিউব সেটাকে সরিয়ে দিচ্ছে। ফেসবুকে সংবাদমাধ্যমটির অফিশিয়াল পেজ থেকে এটি স্পন্সর পোস্ট হিসেবে চালানো হচ্ছে। প্রচারণার এমন বেপরোয়া নীতি দেখেই বোঝা যাচ্ছে গোটা ঘটনার পেছনের রাজনীতিটি খুব শক্তিশালী। তা ছাড়া, বাংলাদেশের রাজনীতিতেও এই ডকুড্রামাটি বেশ কদর পেয়েছে। যেসব রাজনৈতিক দল ও তাদের সমর্থকরা মিয়ানমারের ঘটনা দেখে বেশ নড়েচড়ে বসেছিলেন, তাদের জন্য এ যেন এক বিরাট ‘খোরাক’। অবশ্য আল-জাজিরার উদ্দেশ্যও অনেকটা তা-ই ছিল। মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থান যেদিন ঘটল, সেদিনই সম্প্রচার করা হলো এই ডকুড্রামাটি।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। তবে এইটুকু বললে কেবল রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্রের শর্তটুকু বলা হয়। গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ কথা বললে অনেক গণমাধ্যমকর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। কিন্তু স্বাধীনতা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, দায়িত্বশীলতাও তেমনি জরুরি। এখন প্রশ্ন হতে পারে, গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা কে নির্ধারণ করবে? একজন সংবাদ ভোক্তা হিসেবে আমি যেটুকু বুঝি, এটি নির্ধারণের দায়িত্ব গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষেরই। রাষ্ট্র দিকনির্দেশনা দিতে পারে কিন্তু চাপিয়ে দিতে পারে না।

তবে এই মর্মে রাষ্ট্রের দিকে যদি আঙুল তুলতে চাই, তাহলে এটিও বিবেচনায় আনতে হবে যে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত যেকোনো সংবাদের বিষয়ে যেকোনো নাগরিক আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। রাষ্ট্রীয় বিষয় হলে সেটি তদন্তও হতে পারে। সুতরাং কোনো গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় নীতি যদি হয় তথ্য বা ইতিহাস বিকৃতি করা, তবে আর সেটা গণমাধ্যম থাকে না, সংবাদ-মুখোশের আড়ালে সেটা হয়ে ওঠে দুর্বৃত্ত। যেমন আছে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক বা সামরিক দুর্বৃত্ত, তেমনি গণমাধ্যমও দুর্বৃত্ত হয়ে উঠতে পারে। এমন অনেক নজির আছে পৃথিবীর ইতিহাসে, বাংলাদেশেও কম নেই।

দুই. সংবাদমাধ্যম হিসেবে আল-জাজিরাকে নিয়ে আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ তৈরি হয় ২০০৯ সালের শেষের দিকে। যখন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু হচ্ছে আর আল-জাজিরা বিষয়টিকে ‘বিরোধী মত’  দমন হিসেবে প্রচার করছে। বর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যাণে যেকোনো গণমাধ্যমের ঠিকুজি-কুষ্ঠি বের করে ফেলা সম্ভব। ফলে কাজের প্রয়োজনেই যখন আল-জাজিরাসংক্রান্ত খোঁজখবর নিতে শুরু করলাম, তখন তার রাজনৈতিক পরিমণ্ডলটি পরিষ্কার বোঝা গেল। কাতারের রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিচালিত এই গণমাধ্যমটির সংবাদ পরিবেশন, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের নামে বিশেষ বিশেষ ডকুড্রামা বা তাদের আয়োজিত নানা টক শোর বক্তব্য শুনলে বোঝা যায়— অন্তত চারটি ইস্যুকে সামনে রেখে তারা সংবাদ পরিবেশন করে।

এক, উপসাগরীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিরাজমান অন্তর্দ্বন্দ্বকে সামনে রেখে কাতারের আধিপত্য তৈরি; দুই, জঙ্গি-মনস্তত্ত্বের প্রসার ঘটানো এবং জঙ্গিবাদকে কেবলই একটি মার্কিন-ইসরায়েল ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা; তিন, মুসলিম ব্রাদারহুডের নামে বিশ্বব্যাপী ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠার যে অপরাজনীতি, তাকে মদদ দেয়া এবং চার, সুন্নিপন্থী ভাবাদর্শকে ধারণ করে শিয়াবিরোধী প্রচারণা চালানো।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা : তাদের সংবাদ পরিবেশন ও বিশ্লেষণের যাবতীয় প্রমাণ দেখলে এই বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়। জঙ্গিনেতা ও সন্ত্রাসী ওসামা বিন লাদেনের ভিডিওবার্তা প্রকাশ থেকে শুরু করে আরব বসন্তের সমর্থনে লিবিয়া, সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি রাষ্ট্রে আইএসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা বা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস— এসবই আল-জাজিরার রাজনৈতিক সাংবাদিকতা। এখন প্রশ্ন হতেই পারে, গণমাধ্যম কি রাজনীতির বাইরে? নিশ্চয়ই না, কিন্তু সেই রাজনীতির স্বরূপটি আমাদের জানা প্রয়োজন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকাও রাজনৈতিক ও আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনোসাইডকে সমর্থন করেছে। কিন্তু সেই রাজনীতি বাংলাদেশবিরোধী রাজনীতি, মানবতাবিরোধী রাজনীতি। কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষেই এই রাজনীতিকে সমর্থন করা সম্ভব নয়।

আল-জাজিরার রাজনৈতিক ধারাটিও তাই। না হলে ২০০৪ সালে কীভাবে তারা একজন লেবানিজ সন্ত্রাসী আমির কুন্তারের জন্মদিনের অনুষ্ঠান সরাসরি স¤প্রচার করেছিল? কীভাবে ইসলাম ধর্মের নামে ছড়িয়ে পড়া উগ্রবাদকে সমর্থন করে গোটা পৃথিবীকে জঙ্গিবাদের বার্তা দিয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তরগুলো খুঁজতে শুরু করলেই আল-জাজিরার চরিত্রটি আমরা বুঝতে পারি।

তিন. প্রশ্ন হতে পারে, বাংলাদেশের বিষয়ে আল-জাজিরার আগ্রহটি কখন প্রকট হয়ে উঠল? আগে-পরে বাংলাদেশকে নিয়ে তারা সংবাদ প্রচার করেনি, এমন নয়; কিন্তু সম্প্রচারের ধরন দেখলে তো সংবাদের গুরুত্ব বোঝা যায়। বাংলাদেশ আল-জাজিরার টার্গেটে পরিণত হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু হলে। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করতে নানা ধরনের সংবাদ প্রকাশ করেছিল। অবশ্য তখন বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমও এই ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ত ছিল। এ কারণে ট্রাইব্যুনালের বিচারক একাধিকবার কয়েকটি গণমাধ্যম ও একজন সাংবাদিককে তিরস্কারও করেছেন। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার লঘুদণ্ড হলে যখন সারা দেশ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে, তখন আল-জাজিরা নতুনভাবে ষড়যন্ত্রের ছক কষে।

২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময়ও আল-জাজিরার সংবাদভাষ্য ছিল বিতর্কিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যখন আইন পরিবর্তন হলো, বিচারের রায় হলো এবং সেই রায় কার্যকর হওয়া শুরু হলো, তখন আমরা দেখলাম আদালত-স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধীদের আল-জাজিরা ‘বিরোধী দলের নেতা’, ‘ইসলামি চিন্তাবিদ’ ইত্যাদি নামে চিহ্নিত করা শুরু করল। তাদের ইতর-মনস্তত্তে¡র স্পষ্ট উদাহরণ পাওয়া যায় ২০১৩ সালের ৫ মে, যখন শাপলা চত্বরে উগ্রবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করল। আল-জাজিরা সাম্প্রতিক ডকুড্রামাটির মতোই সেদিন জানিয়েছিল হাজার হাজার লাশ গুম করা হয়েছে! বাংলাদেশের গণমাধ্যম তাদের এই মিথ্যাচারের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছিল।

একাত্তর টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সেদিন বেরিয়ে এসেছিল আল-জাজিরার মিথ্যাচার। কিন্তু এই বিকৃত তথ্য উপস্থাপন ও মিথ্যাচারের জন্য আল-জাজিরার বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। স্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও অপরাধীকে বিচারের আওতায় না আনলে অপরাধী সেটাকে দুর্বলতাই ভাবে। পুরো লেখাটি পড়ুন সারাক্ষণ ডটকমে। লেখক: লেখক ও ব্লগার

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়