শিরোনাম
◈ এলডিসি থেকে উত্তরণ: আরও তিন বছরের সময় চাইছে বাংলাদেশ ◈ জাপানে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার ◈ ১৭ বিয়ের ঘটনায় মামলা, সেই বন কর্মকর্তা বরখাস্ত ◈ বিএনপি নেতাকে না পেয়ে স্ত্রীকে কু.পিয়ে হ.ত্যা ◈ বাংলা‌দেশ হারা‌লো আফগানিস্তানকে, তা‌কি‌য়ে রই‌লো শ্রীলঙ্কার দিকে  ◈ রোজার আগে নির্বাচন দিয়ে পুরোনো কাজে ফিরবেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ ঋণের চাপে আত্মহত্যা, ঋণ করেই চল্লিশা : যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ◈ একযোগে এনবিআরের ৫৫৫ কর্মকর্তাকে বদলি ◈ আবারও রেকর্ড গড়ল স্বর্ণের দাম, ভরিতে বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭৫ টাকা ◈ ভারতের নেপাল নীতিতে 'রিসেট বাটন' চাপলেন মোদি, শিক্ষা বাংলাদেশের কাছ থেকে

প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:৩৫ দুপুর
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:৩৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: টেকসই উন্নয়নে শিক্ষার মানোন্নয়ন অপরিহার্য

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: বাংলাশে এখন মধ্যেম আয়ের দেশে  প্রবেশ করেছে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার পকিল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তবে বাংলদেশের সামনে লক্ষ্য অর্জনে বেশ কয়েকটি বাধা রয়েছে, যা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

[১] করোনাভাইরাসের একবছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, সেগুলোকে দ্রুত চিহ্নিত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, জনগণের ব্যাপক সম্পৃক্ততা, রাজস্ব আহরণ ও বন্টনসহ বিপুল সম্পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।

[২] আমাদের জনশক্তিতে দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্যোগ নিতে হবে।

[৩] রেমিটেন্স উৎপাদনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে হবে। এসব পরিপকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে চলতি দশকে ঢেলে সাজানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

কেননা আমাদেরে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে যে জনগোষ্ঠী প্রতি বছের বের হয়ে আসে তাদের বড় অংশই কর্মদক্ষতা, উৎপাদনশীলতা ইত্যাদিতে অনেকটাই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। এ কারণে প্রতি বছর আমাদের শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলছে। তাদের যন্ত্র-প্রযুক্তি নির্ভর কর্মকাণ্ডে খুব একটা যুক্ত করা যাচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশকে প্রতিবছর বিদেশ থেকে প্রচুর সংখ্যক দক্ষ বিদেশিকে আনতে হচ্ছে, আমাদের শিল্পকারখানাকে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য।

এর ফলে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে, যা আমাদের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কারণে আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থায় যে ধরনের পঠন-পাঠন ও কারিকুলাম যুগ যুগ ধরে চলে আসছে তা দিয়ে মানসম্মত শিক্ষালাভ তথা দক্ষজনশক্তি গড়ে তোলা অসম্ভব ব্যাপার। তাছাড়া দেশে  উচ্চ শিক্ষায় প্রয়োজনীয় গবেষণার বাধ্যবাধকাতা না থাকায় অনেক প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষার্থী বর্তমান যুগের চাহিদার দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। দেশ থেকে অনেক মেধাবী তরুণ বিদেশে গবেষণায় যেমন নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ করতে পারছে, একই সঙ্গে তারা বিভিন্ন দেশে অনেক উচ্চতর পদে সাফল্য দেখাতে পারছে। কিন্তু সে তুলনায় দেশে তাদের সেই সুযোগ শিক্ষা ব্যবস্থায়, গবেষণা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে না থাকায় তারা  যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়  নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে পারছে না।

বস্তুত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় জ্ঞানদক্ষতা, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান গবেষণার প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রস্তুতি কার্যকর না থাকায় উচ্চশিক্ষা শেষেও অনেকেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করার ক্ষেত্র খুঁজে নিতে পারছে না। অথচ আমাদের শিক্ষার্থীরা মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তিতে মোটেও উন্নত দেশের চেয়ে ফিছিয়ে পড়া নয়।

মূল সমস্যাটি হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থার অভ্যন্তরে আধুনিক  জ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর  শিক্ষার অভাব। ফলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী  বর্তমান বিশ্বে শিল্প নির্ভর কৃষি, হাইটেক শিল্পের উৎপাদান, নতুন নতুন পরিসেবার চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জন শক্তি হিসেবে বেড়ে উঠতে পারছে না। সে কারণে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনুৎপাদনশীল পঠন-পাঠন থেকে দ্রুতই একুশ শতকের এই দশকের তথ্য প্রযুক্তি, জ্ঞানবিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসা, কৃষি, মৎস্য, সমুদ্র, খনিজ, ইত্যাদি জ্ঞানদক্ষতায় শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতেই হবে।

তা করা হলেই আমরা শুধু দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রেই শুধু নয়, বিদেশে দক্ষজনশক্তি হিসেবেও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় অংকের রেমিটেন্স প্রবাহকে ধরে রাখতে সক্ষম হবো। বর্তমানে বিপুলসংখ্যক মানুষ বড়জোর শারীরিক শ্রমের কাজে ভ‚মিকা রাখতে পারছে। কিন্তু প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা এই মানুষদের উৎপাদনশীলতা অনেকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। সেজন্য প্রয়োজন তাদেরও মানসম্মত মৌলিক শিক্ষা। দেশে অন্তত এগারোটি ধারা-উপধারায় শিক্ষাব্যবস্থা বিভিক্ত হয়ে আছে। ফলে শিক্ষার্থী এবং অভিভাকেরা যুগের চাহিদা অনুযায়ী জনশক্তি রূপে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে বিভ্রান্ত হচ্ছে।

প্রয়োজন বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ উত্তর নিউ নরমাল লাইফকে বুঝতে শেখা এবং সেভাবেই শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি, জ্ঞানদক্ষতা এবং প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের শাখা-প্রশাখায় বিচরণ উপযোগী করে তোলার শিক্ষায় আমাদের নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার পথ দেখাতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নে নিজেদের জনশক্তিকে দেশে- বিদেশে সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতি নিতে পারবে। অন্যথায় বিপুল এই জনসংখ্যার ভারে আমাদের অর্থনীতি শুধু নয়, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাও বড় ধরনের সংকটে পড়তে পারে। লেখক : শিক্ষাবিদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়