মাসুদ রানা: [২] মেহেরপুরসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় প্রচুর পরিমাণে আলুর চাষ হয়। আর কৃষি বিভাগের হিসেবে প্রতিবছর আলু চাষ করেন প্রায় ৮০ লাখ কৃষক। এবছর বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে আলু চাষীদের ।
[৩] যারা আলু আবাদ করছে, সবার এখন মাথায় হাত। আলু বাজার পর্যন্ত নেয়ার খরচ করে চাষীদের ৫ থেকে ১০ হাজার বিঘা প্রতি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে । আলুর দামের এ বেহাল অবস্থার কারণে ক্ষুদ্ধ কৃষকেরা প্রতিবাদও করার আশঙ্খা রয়েছে। তবে সরকার যেহেতু আলু মজুদ করে না, সেহেতু আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের সরাসরি ভূমিকাও নেই বীজ সংরক্ষন ছাড়া। এসব কারণে প্রায় সব আলু চাষীরা এবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
[৪] দেশে আলুর দাম মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। পাইকারি বাজারে কৃষকেরা গড়ে প্রতিকেজি আলু বিক্রি করছেন মাত্র ৮ থেকে ১২ টাকা দরে, যেখানে তাদের বীজ কিনতে খরচই হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন,করোনাকালিন সময়ে আলুর দাম বেশী হওয়ায় লাভের আশায় বেশী দামে বীজ কিনেছি।
[৫] অতিরিক্ত সরবরাহ ও চাষের কারণেই আলুর বাজারদর এতটা কমে গেছে, যার ফলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
[৬] এদিকে আলুর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার পাশাপাশি কোল্ড স্টোরেজ বা হিমাগারের সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগও নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।
[৭] আশরাফপুর গ্রামের আলুচাষী আহসান আলী এ মৌসুমে প্রতি বিঘায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকারও বেশি খরচ করে সাড়ে ৭ বিঘা আলুচাষ করেছেন। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে তিনি পরিবহণ খরচ বাদ দিয়ে মনপ্রতি দাম পেয়েছেন মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। অর্থাৎ, কেজিপ্রতি পাইকারি ১০-১২ টাকার চেয়ে সামান্য কম-বেশী। তিনি আরও বলেন সরকার যদি আলুর দাম একটু বেশী করে বাজারযাত করে দিত তাহলে আমরা চাষীরা ক্ষতি থেকে বেচে যেতাম।
[৮] সদরের গোপালপুর গ্রামের আলুচাষী হাফিজুর রহমান ও আশাদুল ইসলাম বলছিলেন, গতবছর আলুর চাষ করেছিলাম গড়ে প্রায় ১ হাজার টাকা মণে আলু কিনেছিলেন তিনি এবং লাভও হয়েছিল। কিন্তু এবছর বেশী দামে বীজ সরবরাহ হওয়ায় আলুর চাষে তারা লোকসানে পড়ছেন।এখন সরবরাহ হয়ে গেছে বেশী আর দাম হয়ে গেছে কম।
[৯] পাইকারি আলু ব্যবসায়ী রিপন আলী জানানন, কৃষকদের মতো পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বলছেন, এত কম দামে আলু কিনে তারাও লোকসানে পড়ছেন। প্রতি কেজি ২০ টাকা করে কিনলে ১৫ টাকায় বিক্রয় করতে হচ্ছে আবার ১৫ টাকাই কিনলে ১০-১২ টাকাই ঢাকার পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। এতে পরিবহণ খরচসহ তাদের মোট যে খরচ হচ্ছে, তাতে বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদেরও। প্রতিবছর আমরা ২শত বিঘা চাষের আলু কিনে থাকি।
[১০] জেলার কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ স্বপন কুমার খাঁ জানান, এবছরে মেহেরপুরের মাটি অনেক উর্বর। চলতি বছরে আলুর আবাদ অনেক বেশী হয়েছে। জেলায় ১২৭৫ একর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের ১২৪০ একর আলুচাষ হয়েছিল। এবার বেশি আলু চাষ করা হচ্ছে। তবে বাস্তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারে দাম ভালো থাকায় আলু চাষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে বাজার মনিটিরিং করা হচ্ছে।