শেষমেষ পেশেন্ট টা কে বাঁচানো গেল না, ইশশ আরেকটু যদি সময় পেতাম হাতে!!!
ডেস্ক রিপোর্ট : আপনার মলদ্বারে পাইলস কিংবা মলাশয়ে ক্যান্সার, মলদ্বারের পাশেই ফোঁড়া ইত্যাদি সমস্যা...
যে হাত দিয়ে আপনার পায়খানার রাস্তায় আংগুল ঢুকিয়ে (গ্লাভস পড়ে DRE/Digital Rectal Examination) পরীক্ষা করে আবার সেই হাত ধুয়ে ভাত খায়...জানেন সে কে?
আপনার বাচ্চা হবে নরমাল ডেলিভারিতে। ডাক্তার হাত বাড়িয়ে বাচ্চার মাথা ধরার জন্য পজিশন নিল। পেশেন্ট এর Bowel clear না থাকায় মলত্যাগ করে দিল ডাইরেক্ট হাতের উপর। কার হাতে পড়ল?
আপনার অপারেশনের পূর্বে নাক দিয়ে পেটে নল ঢুকাতে হবে কিংবা এন্ডোসকপি করতে হবে। আগের রাতে কিছু খেতে নিষেধ করার পরও আপনি তা তোয়াক্কা না করে হালকা পাতলা খেয়ে নিলেন। আর মনে মনে ভাবলেন, আরে অল্প স্বল্প খাবার খেলে কিচ্ছু হয়না। ওসব ডাক্তার দের বড্ড বাড়াবাড়ি...
এরপর একটু নল ঢুকানো শুরুর সাথে সাথেই দিলেন বমি করে আপনার সামনের মানুষটার গায়ের উপর। মানুষটা কে?
আপনার অপারেশন হবে, তার আগে আপনার প্রস্রাবের রাস্তায় নল ঢুকাতে হবে, গোসল বাদে দিনে যতবার প্রস্রাব করেন ঠিকমত পানি দিয়ে ওয়াশ করেন কিনা আল্লাহ জানে আর আপনি জানেন। সেই আপনার মূত্রনালী তে নল ঢুকানোর দায়িত্ব কার?
প্রাইভেট চিকিৎসার আলাপ বাদ দেন। সরকারি হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক, ইন্টার্নি চিকিৎসক সহ, নানা কোর্সের চিকিৎসক আছেন, যারা কেউ বা বিনা পয়সায় কিংবা নাম মাত্র টাকায় (১৫ বা ২০হাজার টাকা বেতনে) সারা মাসের শত শত অসুস্থ মানুষগুলোর এই সমস্যাগুলোর দায়িত্ব নেয়৷
আপনার গালি খেলেও, দিন শেষে আপনার আম্মা আব্বা, ভাই কিংবা বোনের মাঝরাতে যখন দম একবার যায় একবার আসে, তখন শীতের রাতে কম্বলের নিচের আরামের ঘুম বাদ দিয়ে দৌঁড়ে আসে যে মানুষগুলো তারা চিকিৎসক। চিকিৎসকের ফোন 24x7 খোলা রেখে কান খাড়া রাখতে হয়। না জানি কখন ইমার্জেন্সি কল আসে!!!
একটা বাচ্চা হাসপাতালে জন্ম নেয় ডাক্তারের হাতের উপর দিয়ে, একই সাথে বৃদ্ধ মানুষটাও হাসপাতালে মারা যায় ডাক্তারের হাতের উপর দিয়েই। ডাক্তার এখানে জন্ম এবং মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে...
কোন কোন কেসের ক্ষেত্রে আমরাও ঘুমের মাঝে স্বপ্নে দেখি কিংবা আফসোস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলি "শেষমেষ পেশেন্ট টা কে বাঁচানো গেল না। ইশশ আরেকটু যদি সময় পেতাম হাতে!!!"
মানুষের খুব কাছ থেকে সেবা করার মত এত বড় গিফট/দায়িত্ব/সৌভাগ্য সবাই পায়না।যাকে পছন্দ করেন তাকেই তিনি এই
গুরুদায়িত্ব দেন...
গভীরভাবে ভাবুন। আবার ভাবুন। যদি অনুভূতি আর বিবেকবোধ হারিয়ে না গিয়ে থাকে তাহলে সম্মান করুন এই পেশার মানুষ গুলোকে। আর যদি বিবেক বোধ এখনো জাগ্রত না হয়ে থাকে, কিংবা অনুভূতি ভোঁতা হয়ে থাকে তাহলে বাদ দেন।
হয় এটা আপনার দূর্ভাগ্য যে, আপনি এখনো সাক্ষাত স্বর্গদূতের দেখা পাননাই, নাহয় আমাদের দূর্ভাগ্য যে এখনো আপনার বিবেকবোধ জাগ্রতই হয়নাই....
আপনার মতামত লিখুন :