শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারী, ২০২১, ১০:৪৪ দুপুর
আপডেট : ১৯ জানুয়ারী, ২০২১, ১০:৪৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

উদিসা ইসলাম : ফিরে দেখা, ১৮ জানুয়ারি ১৯৭৩ রেশন নিয়ে জটিলতায় সরকার

উদিসা ইসলাম : বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় জাহাজের অভাব এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চালের ঘাটতির পরও বাংলাদেশ সরকার অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের জন্য সরবরাহ অব্যাহত রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। ১৯৭৩ সালের শুরুতেই খাদ্য ঘাটতির খবর প্রকাশ হতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধু এর কিছু দিন আগে জেলা শহরগুলোতে সফরে গিয়ে কিছু দুর্বৃত্তের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘মাল আনি দিই কিন্তু পিছন দরজা দিয়ে মাল কোথায় চলে যায়। বেশি টাকা দিলে সেই মাল আবার ফেরতও আসে।’ বঞ্চিত হয়েছে কার্ডধারীরা : বিঘ্নিত সরবরাহের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির লোক রেশন ডিলারের সহায়তায় শহরে জটিল খাদ্য সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। তাদের অপচেষ্টায় ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ চাল রেশন দোকানের পরিবর্তে খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। এই দিনে শহরের প্রধান বাজারগুলোতে ৮০ টাকা মণ করে রেশনের চাল বিক্রি হয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে গত দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকা শহরে বেশ কয়েকটি রেশন দোকানে চাল পাওয়া যাচ্ছে না।

সরকার বদ্ধপরিকর : ১৯৭৩ সালের এই দিনে সরকারি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার খবরে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম-খুলনা বিধিবদ্ধ এলাকাগুলোতে চালের নিয়মিত সরবরাহ অব্যাহত রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। সংশোধিত রেশনিং এলাকাগুলোর সম্পর্কে সরকারি মহল জানায়, এসব এলাকায় সরকার চাল অথবা সরবরাহ অব্যাহত রাখবে বলে বাংলাদেশের সর্বত্র খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে ঢাকায় চালের ঘাটতির কারণ সম্পর্কে বলা হয়, শিপমেন্ট প্রক্রিয়ার অসুবিধাজনিত কারণে সাময়িক ঘাটতি দেখা যায়। এ ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন সরকারকে প্রায় হতে হয় কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে বিধিবদ্ধ রেশনিং এলাকাগুলোতে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেবে না। সরকারি সূত্রে বলা হয়, সরকারের কাছে সে সময় থাইল্যান্ডের ৩০ হাজার টন চাল মজুত আছে এবং কিছু পরিমাণ ইতোমধ্যেই বণ্টন হয়েছে। বাকি চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া সে বছর মে মাসের মধ্যে এক লক্ষ টন চাল আমদানির জন্য সরকার আমেরিকার একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন চূড়ান্ত করে। বাংলাদেশ সরকার খাদ্যশস্য সরবরাহের জন্য জাপান সরকারের প্রতিও অনুরোধ জানায়।

বাংলাদেশের জাতিসংঘভুক্তির ওপর এশিয়ার স্থিতিশীলতা নির্ভরশীল : বিশ্ব শান্তি পরিষদের সম্পাদক ওম প্রকাশ পালিওয়েল ঢাকায় বলেন, ভিয়েতনাম যুদ্ধ অবসানের পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় ভিয়েতনামে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি নেই। তবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি ব্যতীত এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সফররত দুই সদস্যবিশিষ্ট বিশ্ব শান্তি পরিষদ প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য ওম প্রকাশ পালিওয়েল এক প্রশ্নের জবাবে এই অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রতিনিধি দলের অপর সদস্য হচ্ছেন সুইডিশ পার্লামেন্টের সদস্য। সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলী আকসাদ, বাংলাদেশ-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নবী উপস্থিত ছিলেন। পালিওয়েল বলেন, এশিয়ার সকল দেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রার্থীর ওপর এশিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উত্তেজনা প্রশমন নির্ভরশীল।

লাহোরে বাঙালি বন্দিশিবিরে মরণদশা : পাকিস্তানের লাহোরে বন্দিশিবিরগুলোতে ছয় হাজারের বেশি বাঙালি অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। সম্প্রতি কাবুল থেকে পালিয়ে আসা ৭ জন যুবক এসব কথা মিডিয়াকে জানায়। এদিকে পাকিস্তানে আটকে পড়া নিরীহ বাঙালিদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর সমালোচনা করেন বাংলাদেশের জাতীয় নেতারা। আটকে পড়াদের বিচারের হুমকি দেওয়ার সমালোচনা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক শেখ ফজলুল হক মনি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকসহ অন্যান্য নেতারা। সারাদেশে ১৭ হাজার ভোটকেন্দ্র : প্রথম সাধারণ নির্বাচনে সমগ্র দেশে ১৭ হাজার ভোটকেন্দ্র খোলা হবে বলে নির্বাচন কমিশনকে মুখপাত্র জানান। নির্বাচন কাজ পরিচালনার জন্য এ পর্যন্ত ৭৭ জন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। শিগগির ৬৩৭ জন সহকারি রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা নির্বাচন ব্যবস্থাপনা তদারক করবেন বলে মুখপাত্র জানান।

দেশের সর্বত্র চলছে ডাকাতের সন্ত্রাস : দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি-ডাকাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এসব দুষ্কৃতিকারী ডাকাতি করতে গিয়ে গৃহস্বামীকে অনেক সময় নৃশংস অত্যাচার করছে। হাত-পা কেটে নেওয়ার ঘটনা পর্যন্ত শোনা যাচ্ছিল। ঘোড়াশাল, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ধামরাইসহ বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের ঘটনার তথ্য বেরিয়ে আসছিল। পত্রিকাগুলোতে বিভিন্ন জায়গার খবরে বলা হয়, গভীর রাতে ডাকাতরা বাড়িতে চড়াও হয়ে সবাইকে প্রচণ্ড মারধর করে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, তারা চিঠি দিয়ে আসে ঘেরাও করে সর্বস্ব নিয়ে যায়। কোনও কোনও মহকুমার অবস্থা এতোই উদ্বেগজনক যে এক মাসের মধ্যে পর পর ছয় সাতবার ডাকাতির ঘটনাও দেখা গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়