আখিরুজ্জামান সোহান: পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি বৃদ্ধির সাথে সাথে হ্রাস পাচ্ছে সময়, বিপাকে বিজ্ঞানী এবং গবেষকগণ।
৬০ সেকেন্ডে এক মিনিট-সময়ের এই গণনা পদ্ধতির সঙ্গেই আমরা পরিচিত। তবে আসছে ভবিষ্যতে এ ধারণার পরিবর্তন হতে পারে। এক মিনিটে কমে যেতে পারে সেকেন্ডের সংখ্যা। বিজ্ঞানীদের গবেষণার বরাত দিয়ে এমন তথ্যই জানিয়েছে দ্য টেলিগ্রাফ।
আমরা সবাই জানি, পৃথিবী ২৪ ঘণ্টায় তার নিজ অক্ষে একবার ঘোরে। আর এই ঘূর্ণনের ওপর নির্ভর করেই আমাদের সময়ের হিসাব করা হয়।
সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিগত কয়েক বছরে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি তুলনামূলক বৃদ্ধি পেয়েছে। পৃথিবী তার নিজ অক্ষে একবার ঘুরতে সময় নিচ্ছে ২৩ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট ৫৯.৯৯৯৮৯২৭ সেকেন্ড। এর ফলে ২০২১ সাল সাধারণ বছরের থেকে ১৯ মিলি সেকেন্ড ছোট হবে, যা গড়ে প্রতিদিন প্রায় ০.৫ মিলি সেকেন্ড কম।
সময়ের এই অসামঞ্জস্য নতুন নয়। হ্রাস পাওয়া সময়ের হেরফেরের সমাধান করতেই কোনো কোনো বছরে এক “লিপ সেকেন্ড” যোগ করা হয়। ৬০’এর দশকে আণবিক ঘড়ি আবিষ্কারের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ বার এমন “লিপ সেকেন্ড” যোগ করা হয়েছে। শেষবার “লিপ সেকেন্ড” যোগ করা হয় ২০১৬ সালে।
গবেষণা বলছে, তারপর থেকেই পৃথিবী তার স্বাভাবিক ঘূর্ণন গতির থেকে জোরে ঘুরছে। তাই বিজ্ঞানীরা সমতা ফিরিয়ে আনতে “ঋণাত্মকলিপ সেকেন্ড” প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন।
ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরির জ্যেষ্ঠ এক গবেষক জানান, “এটা ঠিক যে পৃথিবী গত ৫০ বছরের তুলনায় এখন দ্রুত গতিতে ঘুরছে। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি আরও বাড়লে হয়তো নেগেটিভ লিপ সেকেন্ডের প্রয়োজন হবে। যদিও এটা সম্ভব কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমেই এই লিপ সেকেন্ড বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
আপাতদৃষ্টিতে এত কম সময়ের হেরফের খুব গুরুত্বপূর্ণ না মনে হলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, স্যাটেলাইট সিস্টেম পরিচালনা এবং নেভিগেশন সিস্টেমের ওপর এর প্রভাব রয়েছে।
তবে এই লিপ সেকেন্ড সংযোজন অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। ২০১২ সালে কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের মধ্যে সময় নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক নেতারা ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতি বাতিলের দাবী জানিয়েছেন এবং ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক বেতার যোগাযোগ সম্মেলনে তারা এই নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানান। সূত্র: টেলিগ্রাফ, বিজিআর
আপনার মতামত লিখুন :