শিমুল মাহমুদ: [২] দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রেফারেল সিস্টেম যথাযথভাবে গড়ে উঠেনি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সমন্বয়হীনতার কারণে ভুগছে চিকিৎসকরা বিশেষত নবীনরা। নবীন চিকিৎসকদের সুপারভাইজড ট্রেনিং দিতে হবে। করোনাকালে সমন্বয়হীনতার বড় বড় উদাহরণ দেখা গেছে। দেশে প্রতি বছর কতোজন চিকিৎসক, তার বিপরীতে কতোজন নার্স প্রয়োজন সে হিসেব করে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। মেডিকেল পড়াশোনায় মুখস্থবিদ্যা থেকে বেরুতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে কনসালটেন্ট চিকিৎসকের প্রয়োজন নেই।
[২] গত রাতে (১৭ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম আয়োজিত 'বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার রূপান্তর: তরুণ চিকিৎসকদের দৃষ্টিতে সমস্যা ও প্রত্যাশিত পরিবর্তন' শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব মতামত ব্যক্ত করেন।
[৩] ওয়েবিনারে আলোচনায় অংশ নেন ডা. ইমরান কায়েস, ক্লিনিক্যাল ফেলো, জেনারেল এন্ড ব্রেস্ট সার্জারি, চেলসি এন্ড ওয়েস্টমিনস্টার এনএইচএস ট্রাস্ট, যুক্তরাজ্য; ডা. লিসানুল হাসান, অনারারি মেডিকেল অফিসার, সাইকিয়াট্রি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল; ডা. আলী আজগর শিবলী, মেডিকেল অফিসার, সংযুক্তি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামের সদস্য ডা. মোহিব নীরব।
[৪] তারা বলেন, জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালের সব ইমারজেন্সিতেই একজন কনসালটেন্ট রাখতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসককে নার্স সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে সমম্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। করোনাকালে সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসকদের জন্য সরকার আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিলেও তা চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে।
[৫] ডা. লিসানুল হাসান বলেন, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রেফারেল সিস্টেম এখনো যথাযথভাবে গড়ে উঠেনি। মানুষ রোগাক্রান্ত হয়ে কোন চিকিৎসকের কাছে যাবেন, কাকে দেখাবেন এসব বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এটা নবীন চিকিৎসকদের জন্য একটা বড় বাধা। বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মরতদের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামোও নেই। তরুণ চিকিৎসকদের জন্য যা খুব পীড়াদায়ক।
[৬] ডা. আলী আজগর শিবলী বলেন, নবীন চিকিৎসকদের জন্য অগুণিত সমস্যার ভীড়ে প্রধান সমস্যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সমন্বয়হীনতা। নবীন চিকিৎসকরা কোন সমস্যায় পড়লে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে যাবেন না স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরে যাবেন তা নিয়ে সংশয়ে থাকতে হয়।
অনেক সময় তাদের চাকরি স্থায়ীকরণেও দীর্ঘসূত্রিতার কবলে পড়তে হয়। করোনাকালে সমন্বয়হীনতার বড় বড় উদাহরণ দেখা গেছে। পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। শুরুতে করোনা চিকিৎসার সাথে জড়িত চিকিৎসকদের আবাসন নিয়ে অনেক ভোগান্তি হয়েছে।
স্বাস্থ্য ক্যাডার হচ্ছে একমাত্র চাকরি যেখানে প্রমোশন লেটার নির্দিষ্ট নয়। ১৫ হাজার চিকিৎসক এখনো এন্ট্রি লেভেলে রয়ে গেছেন। গত বছরের শেষের দিকে দুজন চিকিৎসক যে পদে যোগ দিয়েছিলেন সে পদ নিয়েই অবসরে গেছেন।
[৭] সংকটের মধ্যেও দেশের চিকিৎসকরা কাজ করে যাওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে ডা. ইমরান বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শুধুই চিকিৎসক' মনে করা হয়। কিছুদিন আগে একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে 'একজন' চিকিৎসক মারধরের শিকার হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি প্রশ্ন রাখেন, জরুরি বিভাগে একজন মাত্র চিকিৎসক কেন থাকবেন? সেখানে তো পুরো 'টিম' থাকার কথা? একজন মানুষ কিভাবে রোগী, তাদের স্বজন, স্থানীয়দের সামলাবেন? ইমার্জেন্সি মেডিসিন সাবজেক্ট নাম্বার ওয়ান চয়েজ থাকতে হবে, সরকারকে প্রণোদনা দিতে হবে।
[৮] তার মতে উপজেলাগুলোকে 'ইমারজেন্সি হাব' বানানো উচিত। সেখানে কনসালটেন্ট থাকার প্রয়োজন নেই। কারণ সেখানে সিটি স্ক্যান মেশিন নেই, আরও অনেক সুযোগ সুবিধাও নেই। উপজেলা থেকে জেলায় রোগীদের রেফার করা হবে। স্বাস্থ্য খাতে বিসিএস থেকে বেরিয়ে এসে জুডিশিয়ারির মতো আলাদা কমিশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কারণ বিসিএস এ সবকিছু আমলাদের জন্য বানানো, চিকিৎসকদের জন্য নয়। দেশে প্রতি বছর কতোজন চিকিৎসক, তার বিপরীতে কতোজন নার্স প্রয়োজন তার হিসেব করে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। সারা দুনিয়ায় মেধাবী শিক্ষার্থীরাই এ পেশায় আসেন। বাংলাদেশেও এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে। মেডিকেল পড়াশোনায় মুখস্থবিদ্যা থেকে বেরুতে হবে। চিকিৎসকের কমিউনিকেশন স্কিল ভালো হতে হবে, তাকে স্মার্ট আর রোগীর প্রতি দরদী হতে হবে। নবীন চিকিৎসকদের সুপারভাইজড ট্রেনিং দিতে হবে।
[৯] তিনি বলেন, কোন রোগী যদি কোন হাসপাতালে এসে অসহায় বোধ করেন তাহলে তা ওই রাষ্ট্রের জন্য অনেক বড় দুঃখজনক ঘটনা। প্রত্যেক রোগীর জন্য ডাটাবেজ করা প্রয়োজন যেনো তার চিকিৎসার অতীত ইতিহাস নতুন চিকিৎসক সহজেই জানতে পারেন, যেটা বিদেশে রয়েছে।