ডেস্ক রিপোর্ট: টাঙ্গাইলের কাগমারী গ্রাম। পাশে বিস্তীর্ণ চর এলাকা। গ্রামের পরিবারগুলোতে কন্যাসন্তান জন্ম নিলে বোঝা মনে করা হয়। কিন্তু কন্যাসন্তান বোঝা নয়; বরং আশীর্বাদ—এই বিষয়টি প্রচার করে কাগমারী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মোশারফ হোসেন ঘোষণা দিয়েছেন, ‘কন্যাসন্তান জন্ম হলে ফোন করুন, উপহার পৌঁছে যাবে সঙ্গে সঙ্গে।’
পুলিশ কর্মকর্তার এই ঘোষণার বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল বুধবার চার কন্যাসন্তানের মা-বাবা তাঁর কাছে গিয়ে উপহার নিয়েছেন।
মোশারফ হোসেন একটি ফেস্টুন টাঙিয়েছেন, যেখানে লিখেছেন, ‘কন্যাসন্তান বোঝা নয়, আশীর্বাদ। কন্যাসন্তান আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। কন্যাসন্তান মা-বাবার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করে। কন্যাসন্তান জন্ম হলে ফোন করুন, উপহার পৌঁছে যাবে সঙ্গে সঙ্গে। মো. মোশারফ হোসেন, ইনচার্জ, কাগমারী পুলিশ ফাঁড়ি, টাঙ্গাইল।’ তাঁর এই ফেস্টুন ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ফেসবুকে বিষয়টি জানতে পেরে উপহার নিতে আসেন মাসুদা খাতুন নামের এক নারী। তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম কন্যাসন্তান হয়েছে। উপহার পেয়ে আমি ও আমার স্বামী দুজনেই খুশি হয়েছি।’
ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমি লক্ষ করেছি মেয়েসন্তান হলে মা-বাবা মন খারাপ করেন। তাই এই এলাকার মানুষকে অনুপ্রেরণা ও উৎসাহিত করতে এই পরিকল্পনা করি। আমার উদ্দেশ্য এটা বোঝানো যে মেয়ে ও ছেলে উভয়ই সমান। মা-বাবা যেন কন্যাসন্তানকেও উচ্চশিক্ষা দেয় এবং ছেলেসন্তানের মতোই মনে করে, এটাই বোঝাতে চাচ্ছি।’
তিনি বলেন, “আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে কন্যাশিশুর জন্য ‘লাভ টোকেন’স্বরূপ ছোট উপহার নিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করি। একটা ক্রেস্টের সঙ্গে শিশুর জন্য ডায়াপার, লোশনজাতীয় সামান্য কিছু উপহার দিয়েছি। সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই। এ জন্য নিজের সাধ্যের মধ্যেই শুধু কাগমারী পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার জন্য এই ছোট চেষ্টা করা। বড় কোনো গিফট দিতে না পারলেও আমরা পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে গিয়ে দেখা করি, এতে তারা অনেক খুশি হয়। আমি এখন পর্যন্ত চারটি পরিবারকে উপহার দিয়েছি। সবাইকে জানানোর জন্য আমি একটি ফেস্টুন তৈরি করেছি দুই দিন আগে। আমি চাই আমার দেখাদেখি সবাই যেন এগিয়ে আসে। কন্যাসন্তান বোঝা নয়, আশীর্বাদ—এটাই জানাতে চাই।” এলাকাবাসী গোলাম রাব্বানি বলেন, ‘১ জানুয়ারি আমার কন্যাসন্তান হয়েছে। টাঙ্গাইলের কাগমারী পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার হওয়ায় আমিও উপহার পেয়েছি। ইনচার্জ মো. মোশারফ হোসেনের সঙ্গে দেখা করে উপহার নিয়ে এসেছি। এটা আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। এমন উদ্যোগ কখনো দেখিনি। এমন উদ্যোগ নিলে সবাই সচেতন হবে।’ -কালের কণ্ঠ
আপনার মতামত লিখুন :